এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে ও সুপার ফোর রাউন্ডে ভারতের সঙ্গে অনায়াসেই হেরেছিল পাকিস্তান। তাই ফাইনালে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল সালমান আলি আগার দল। এজন্য ব্যাট-বল হাতে শুরুটা রোববার দুর্দান্ত হয়েছিল দলটির। তবে এ দুই বিভাগের শেষটাই তাদের জন্য একরাশ হতাশায় উপহার দেন কুলদীপ যাদব আর তিলক ভার্মা। যে কারনে কোন বড় টুর্নামেন্টে আরও একবার ভারতের কাছে শিরোপার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল পাকিস্তানের।

এদিকে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ভারতেরই দখলে থেকে গেল। দলটি এ নিয়ে নবমবারের মতো মহাদেশের চ্যাম্পিয়ন হলো। সাতবার ওয়ানডে সংস্করণে, দুবার টি–টোয়েন্টি সংস্করণে।
রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সপ্তদশ এশিয়া কাপ ফাইনালে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে সাহিবজাদা ফারহান আর ফখর জামান নৈপুণ্যে ১১.২ ওভারে ১০০ রান তুলেছিল পাকিস্তান। তবে এরপর তারা চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অলআউট হয় মাত্র ১৪৬ রানে। জবাবে তিলক ভার্মার ফিফটিতে ভর করে ২ বল হাতে রেখেই ভারত জয় নিশ্চিত করে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতও শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অভিষেক শর্মাকে (৫) দলীয় ৭ রানে ফেরান ফাহিম আশরাফ। স্লো ডেলিভারিতে মেরে খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন হারিস রউফের হাতে। পরের ওভারে শাহিন আফ্রিদির স্লো বলে তুলে মারার চেষ্টায় ঠিকঠাক লাগেনি সূর্যকুমার যাদবের (১) ব্যাটে। মিড অফে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে দারুণ ক্যাচ নেন সালমান আগা।
শুরুতে বিপদে পড়া ভারতকে আবারও ধাক্কা দেন ফাহিম। এবার শুভমান গিলকে (১২) ফিরিয়ে দেন। মিড অনে তার ক্যাটিও নেন রউফ। ৪ ওভারে ২০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারত বিপদে পড়ে। পাওয়ার প্লের ষষ্ঠ ওভারে ফাহিমকে চার-ছক্কায় ১১ রান নিয়ে সেই পরিস্থিতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠেন তিলক ভার্মা।
আবরার আহমেদের করা নবম ওভারে ডিপ মিডে ক্যাচ তুলেছিলেন সঞ্জু স্যামসন। কিন্তু ব্যক্তিগত ১২ রানে থাকা এই ব্যাটারের একেবারে সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন হুসাইন তালাত। সেটাই বিপদের তিরটা পাকিস্তানের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। এরপর তিলক-স্যামসন মিলে গড়েম বোঝাপড়ার জুটি। রান নিয়ে প্রান্ত বদল করেছেন, সুযোগমতো হাঁকিয়েছেন বাউন্ডারি। ৫৭ রানে সেই জুটি ভঙেন আবরার, ব্যক্তিগত ২৪ রানে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্যামসন।
ভারতের ওপর প্রয়োজনীয় রানরেটের চাপ বাড়ছিল। রউফের করা ১৫তম ওভারে ২ চার ও এক ছক্কায় ১৭ রান নিয়ে তা থেকে কিছুটা মুক্তি দেন তিলক। ৪১ বলে ব্যক্তিগত ফিফটিও পেয়ে যান এই বাঁহাতি ব্যাটার। পরের ওভারে আবরার ১১ রান দিলে ৪ ওভারে ভারতের আর ৩৬ রান প্রয়োজন হয়।
শেষদিকে রোমাঞ্চ ছড়ায় দুবের আউটে। তবে তিলকের সঙ্গে তার ৬০ রানের জুটি ভারতের কাজটা সহজ করে ফেলেছিল। শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ১০ রানের। চার-ছক্কায় তিলক ২ বল হাতে রেখেই ভারতের জয় নিশ্চিত করে আনন্দে মাতেন।
এরআগে ব্যাট করতে নেমে ভারত–পাকিস্তানের আগের দুই ম্যাচের মতো ফাইনালেও বুমরার ওপর চড়াও হন পাকিস্তানি ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান। ওভারের প্রথম বলে চারের পর তৃতীয় বলে ছক্কা মারেন সাহিবজাদা ফারহান। পাকিস্তান ইনিংসের পঞ্চম ওভার স্পিন আক্রমন শুরু করে ভারত বরুণ চক্রবর্তীকে দিয়ে। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভার করেন অক্ষর প্যাটেল।
এই দুই ওভার থেকে ফারহান আর ফখর নেন ১৩ রান। পাওয়ারপ্লেতে খুব বেশি রান তুলতে না পারলেও পাকিস্তান কোনো উইকেট হারায়নি। এ পথ ধরে এবারের এশিয়া কাপে নিজেদের উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রান করে পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচে ৪৫ রানের জুটি পেরিয়ে আজ দলীয় ফিফটিও পার করেন দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামান।
এবারের এশিয়া কাপে দারুণ খেলেন সাহিবজাদা ফারহান। সে পথ ধরে রবিবার কুলদীপ যাদবের ওভারের চতুর্থ বলে ২ রান নিয়ে এশিয়া কাপে নিজের দ্বিতীয় ও আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে পঞ্চম ফিফটি পূরণ করেন তিনি।
ফিফটির পর বেশি দূর এগোতে পারেননি ফারহান। ৫৭ রানে তার আউটে ভাঙে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি। বরুণ চক্রবর্তীর ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা মারার পর চতুর্থ বলেও বড় শট খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন তিলক বর্মার হাতে। ফেরার আগে ৩৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ে করেন ৫৭ রান।
সাহিবজাদা ফেরার পর সিয়াম আইয়ুবকে দারুণ খেলেন ফখর জামান। এদিন ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন সিয়াম। বোলিংয়ে ফেরা শিবম দুবের করা ১১তম ওভারে হাঁকান দুটি চার। তবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। কুলদীপের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে বুমরার হাতে ধরা পড়েন এ বাঁহাতি। ১১ বলে ১৪ রান করে ফেরেন।
সিয়াম ফেরার পরেই হঠাৎ ছন্দপতন হয় পাকিস্তানের। দ্রুত সময়ের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ হারিস। এরপর বোলারদের ওপর অতি মাত্রায় চড়াও হতে গিয়ে ফেরেন ফখর জামান। ৪৬ রানে থাকতে বরুণের বলে চার মেরে ফিফটি পূরণ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যাটের কিনারায় লেগে বল চলে যায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো কুলদীপের হাতে। ফেরার আগে ফখর করেন ৪৬ রান।
ফখর ফেরার পর সাজঘরে ফিরেন হুসাইন তালাত, অধিনায়ক আগা সালমান, শাহিন শাহ আফ্রিদি আর ফাহিম আশরাফ। যে কারণে হঠাৎ করেন ২১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে পাকিস্তান। তাই দলটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তারা দেড়শ রানও করতে পারেনি।
ভারতের মতো দলের সঙ্গে এ পুঁজি নিয়েও বল হাতে শেষ ওভার পর্যন্ত অন্তত রোববার লড়াই করল পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত তিলক ভার্মার ব্যাটের কাছে হেরে আরও একটি শিরোপা হাতছাড়া করল পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ১৯.১ ওভারে ১৪৬ (ফারহান ৫৭, ফখর ৪৬, সিয়াম ১৪, হারিস ০, সালমান ৮, তালাত ১, নাওয়াজ ৬, আফ্রিদি ০, ফাহিম ০, রউফ ৬, আবরার ১*; দুবে ৩-০-২৩-০, বুমরাহ ৩.১-০-২৫-২, বরুন ৪-০-৩০-২, আকসার ৪-০-২৬-২, কুলদিপ ৪-০-৩০-৪, তিলাক ১-০-৯-০)
ভারত: ১৯.৪ ওভারে ১৫০/৫ (আভিশেক ৫, গিল ১২, সূর্যকুমার ১, তিলক ৬৯, স্যামসন ২৪, দুবে ৩৩, রিঙ্কু ৪; আফ্রিদি ৪-০-২০-১, ফাহিম ৪-০-২৯-৩, নাওয়াজ ১-০-৬-০, রউফ ৩.৪-০-৫০-০, আবরার ৪-০-২৯-১, সিয়াম ৩-০-১৬-০)
ফল: ভারত ৫ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন