মানুষের ফ্যাশন ট্রেন্ডে বড় এক পরিবর্তন এনে দিতে সক্ষম শুধু রঙের পরিবর্তন। আর বাংলাদেশের প্রকৃতিতে বছরজুড়ে চলে রঙের খেলা। সে রঙ চলে আসে পোশাকি অঙ্কনে। সঙ্গে বড় ভূমিকা পালন করে আবহাওয়া। প্রত্যেক ঋতুতে পরিবর্তন হয় আবহাওয়া ও তাপমাত্রা। গরমের এ সময়ে মেয়েদের ক্ষেত্রে নরম রঙের প্রাধান্য তাই থাকছে বেশি। এ সময়ের মেয়েদের ট্রেন্ডি রঙের মধ্যে আরও রয়েছে লাল, কমলা, হালকা সবুজ, হলুদের মতো রঙ। মুলত: প্রত্যেক ঋতুর মতো এই গরমের ডিজাইনও হবে বৈশ্বিক চলতি ট্রেন্ডের অধীনে। কামিজের একটু লং ধাঁচ বজায় রেখে পরিবর্তন আসবে কাটিং ও শেপিংয়ে। গরমের কারণে নজর দেয়া হয়েছে ঢিলেঢালা প্যাটার্নেও। তাই মসৃণ, আরামদায়ক কাপড়ে গরম কাটুক ফ্যাশনেবল পোশাকে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরমের কথা চিন্তা করে বেশির ভাগ পোশাকই তৈরি হয়েছে নিট ও সুতির কাপড় দিয়ে। তবে পার্টি বা অনুষ্ঠানের জন্য একটু গর্জিয়াস শিফন, জর্জেট, হাফ সিল্ক কিংবা অ্যান্ডি কাপড়ের টপস, কাফতান ও কুর্তা আছে। ডিজাইন হিসেবে লেইস, পাইপিন ব্যবহার হয়েছে। টপস ও কাফতানে হালকা এমব্রয়ডারি করা হয়েছে গলা ও হাতায়। এই গরমের মেয়েদের পোশাক নিয়ে ফ্যাশন রঙ বাংলাদেশের সৌমিক দাস জানান, ‘গ্রীষ্ম মানে একটু মসৃণ পোশাক। সবাই পোশাক বাছাইয়ের আগে আরামদায়ক হবে কি-না ভেবে নেয়। তাই এ সময়ের মেয়েদের ডিজাইনে প্রাধান্য পায় সুতি, লিনেনের মতো কাপড়। তবে, ফ্যাশনে এখন রঙিন পোশাকও মানানসই।
গরমের কাপড় যতটা পাতলা রাখা যায় ততই তা আরামদায়ক হবে। ঠিক থাকতে হবে তার আলো ভেদন ক্ষমতাও। পাতলার পাশাপাশি পোশাক হওয়া চাই মসৃণ। যত মসৃণ তত আরামদায়ক। কাপড়ের নমনীয়তা বাড়াতে যেমন ভালো ফিনিশিংয়ের দরকার, তেমনি কাঁচামালেরও আছে ভিন্নতা। কম টাকায় সুতিতে আরাম পাই আমরা। তবে সে বৈশিষ্ট্যে পিছিয়ে নেই ভিসকসের ফেব্রিকও। কিন্তু পার্থক্য আছে লুকে। ভিসকস দেখতে বেশি ভালো। ডিজাইনের ভিন্নতা আনতেও সক্ষম। তাই এই ম্যাটেরিয়ালের কাপড় একটু বেশি দামি হয় কটন থেকে। কটনের পাশাপাশি লিনেনের ব্যবহার বেশ প্রচলিত। লিনেন কটন থেকে আরামদায়কও বটে। বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে। লিনেনের কামিজ মসৃণ ও বেশি আরামদায়ক।
আরামদায়ক কাপড় আর ঢিলেঢালা কাট
গরমের পোশাক হিসেবে এবার ডিজাইনাররা আরামদায়ক কাপড় আর ঢিলেঢালা কাট বেছে নিয়েছেন। কাপড়ের রংও হালকা। জেন্টল পার্কের চিফ ডিজাইনার শাহাদৎ হোসেন বাবু বলেন, ‘সালোয়ার-কামিজে অনেক টিনরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। আবার ফ্রকও এ সময় ঠিক মানায় না। ফ্যাশন করতে পছন্দ করে এমন টিনরা ফিটিং টিউনিক টপস, কাফতান, স্টাইলিশ কুর্তা বেছে নিতে পারে অনায়াসেই। দেখতেও ভালো লাগবে, পরেও আরাম পাবে।’ অন্যদিকে এসব পোশাকই আবার অনায়াসে মানিয়ে যাবে ৩০-এর কোটায় আছেন এমন নারীকে। তবে এ ক্ষেত্রে কাট ও নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আসবে। ছোট কাফতান না পরে একটু লম্বা কাফতান বেছে নিলেই ভালো লাগবে। টপসের রং গাঢ় না হলেই মানিয়ে যাবে বয়স ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে।
এ প্রসঙ্গে বিবিয়ানার কর্ণধার ও ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘গরমের পোশাক হিসেবে টিনদের সঙ্গে তরুণীরাও টপস বেছে নিতে পারেন। জিন্স, পালাজ্জো বা ল্যাগিংসের সঙ্গে কোয়ার্টার কিংবা শর্ট হাতা বা ¯িøভলেস কুর্তি বা কাফতানও পরতে পারেন। ফ্যাব্রিক হিসেবে সুতিকেই অগ্রাধিকার দিন।
টপস এবং কুর্তা
সারা বছর চাহিদা থাকলেও গরমে আরামদায়ক হিসেবে টপস এবং কুর্তার জুড়ি নেই। ক্যাটস আইয়ের পরিচালক সাদিক কুদ্দুস বলেন, ‘পার্টি বা দৈনন্দিন পোশাক হিসেবে অনেকেই পছন্দ করেন ফ্যাশনেবল টপস বা কুর্তা।
ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স-এর শীর্ষ নির্বাহী শাহিন আহমেদ, ‘মেয়েরা ইদানীং টপস, ফতুয়ার পাশাপাশি কুর্তার প্রতিও বেশ আকৃষ্ট হয়েছে।’ জেন্টল পার্কের চিফ ডিজাইনার শাহাদৎ হোসেন বাবু জানান, ‘কুর্তি হচ্ছে ফতুয়ার আধুনিক রূপ। দেখতে অনেকটা পাঞ্জাবির মতো।
কিন্তু লম্বায় কোমরের একটু নিচে এবং এতে কোনো পকেটের ব্যবহার থাকবে না। এসব পোশাক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুতি কাপড় দিয়ে তৈরি হয় বলে গরমে বেশ আরামদায়ক।
টপসের দৈর্ঘ্য আগের তুলনায় বেড়েছে। দেশীয় উপাদানের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন কাট যুক্ত হয়েছে। আগে শর্ট টপসের প্রচলন বেশি থাকলেও এখন হাঁটু সমান বা তার থেকে লম্বা টপসের প্রচলন বেশি দেখা যায়। আবার ঢিলেঢালা টপসের পাশাপাশি একটু চাপা ধরনের টপসের চাহিদাও রয়েছে।
মডেল : শ্রাবণী রাখী
1 Comment
লেখাটি পড়ে খুব ভাল লাগল। এ রকম আরো ফিচার যেন নিয়মিত প্রকাশ করা হয়।