কলকাতার প্রাচীন বাবু সংস্কৃতি ও ব্রিটিশ আমলে জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে একটি বিশেষ রান্না, ডাকবাংলো চিকেন (Dak Bungalow Chicken)। এই ঐতিহ্যবাহী পদ এক সময় ব্রিটিশ সাহেব ও জেলা প্রশাসকদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হতো ডাকবাংলোতে, যেগুলি ছিল দূরবর্তী অঞ্চলে সরকারি সফরের সময় রাত্রিবাসের নির্দিষ্ট জায়গা।

সেই সময় সাধারণ উপকরণ দিয়েই অল্প সময়ে তৈরি করা হতো এই সুস্বাদু পদ, যা পরে জায়গা করে নেয় বাংলার রান্নাঘরেও। পুজোর মরশুম হোক বা সাপ্তাহিক ছুটির স্পেশাল লাঞ্চ, অনেকেই বাড়িতে তৈরি করছেন এই ক্লাসিক পদটি।
উপকরণ কী লাগে
রান্নাটি বিশেষ হলেও উপকরণ কিন্তু একেবারে ঘরোয়া। এই পদটি তৈরি করতে লাগে, চিকেন, আলু, ডিম, পেয়াজ, রসুন, আদা, টমেটো, কাঁচালঙ্কা। খুব বেশি ঝামেলা নেই এই পদটি রান্না করতে। তবে সময় মতো উপকরণগুলি দিতে হয়। তাহলেই সুস্বাদু এই পদটি তৈরি করা সম্ভব হয়। এই পদটি বানাতে খুব একটা সময়ও নষ্ট করতে হয় না। খুব কম সময়ের মধ্যেই বানিয়ে ফেলা সম্ভব। তাহলে আর দেরি না করে সুস্বাদু পদটি বানাতে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলুন।
রান্নার পদ্ধতি
রান্নার শুরুতেই সরষের তেলে ভেজে নিতে হয় সেদ্ধ করা ডিম ও আলু। এরপর একে একে দিয়ে দিতে হয় পেঁয়াজ-কাঁচালঙ্কা বাটা, আদা-রসুন বাটা, টমেটো ও সাধারণ গরম মশলা। মশলাটি ভালোমতো কষিয়ে নিয়ে তাতে দেওয়া হয় ধোয়া মুরগির টুকরো। সামান্য জল দিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না হতে হয় কিছুক্ষণ। শেষে ডিম-আলু দিয়ে আরেকটু কষিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যায় পুরোনো দিনের সেই স্বাদ ডাকবাংলো চিকেন।
নস্টালজিয়ার ছোঁয়া
এই পদটির স্বাদে থাকে নস্টালজিয়ার ছোঁয়া। ঝোলটা হয় হালকা ঘন, মশলায় থাকে হালকা ঝাল আর ঘ্রাণে খাঁটি বাঙালিয়ানার ছাপ। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবেশনের সময় একপাশে লেবুর টুকরো ও পেঁয়াজ কুচি দেওয়া হয়, যাতে প্রতিটি গ্রাসে স্বাদে থাকে পরিপূর্ণতা। খাদ্যরসিক বাঙালির প্লেটে বারবার ফিরে আসে ডাকবাংলো চিকেন।
একদিকে ঐতিহ্য, অন্যদিকে সহজলভ্য উপকরণ, এই দুইয়ের মেলবন্ধনে এই রেসিপি আজও সমান জনপ্রিয়। শহরের একাধিক রেস্তোরাঁ এখন এই পদকে ফিরিয়ে আনছে মেনুতে। তবে সবচেয়ে ভাল স্বাদ মেলে ঘরোয়া রান্নায়, প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগ করে খাওয়ার আনন্দেই।