
উইলিয়াম শেক্সপিয়র। ইংরেজি সাহিত্যে বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার ও কবি হিসেবে পরিচিত। তেমনই ভারতীয় সাহিত্যে এক অনন্য নাম কালিদাস। প্রকৃতি, প্রেম ও মানবিক আবেগকে সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতার জন্য তাঁকে ‘ভারতের শেক্সপিয়র’ বলা হয়।
ভারতের সাহিত্যের ইতিহাসে কত যে মণিমাণিক্য ছড়িয়ে রয়েছে, তার সূচনার হদিশ পেতে গেলে ফিরে যেতে হবে সেই প্রাচীনকালে।
ভারতের প্রাচীন সাহিত্যে ঋষি-বাল্মিকী ও মহর্ষি-বেদব্যাসের পরই কালিদাসের নাম উচ্চারিত হয়। কালিদাসকে চতুর্থ থেকে পঞ্চম শতকের গুপ্ত যুগের মানুষ বলে মনে করা হয়।
যদিও তাঁর জীবনের সুনির্দিষ্ট তথ্য অজানা, তবুও তিনটি নাটক, দু’টি মহাকাব্য ও দু’টি ক্ষুদ্র কাব্য আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তাঁর রচনায় হিন্দু দর্শন, পুরাণ ও ভারতীয় সংস্কৃতির গভীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
লোককথায় বলা হয়, প্রথম জীবনে অযোগ্যতা ও অজ্ঞতার কারণে স্ত্রী তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেন। কিন্তু অদম্য মনোবল আর অধ্যবসায়ের জোরে সেই কালিদাসই একদিন হয়ে ওঠেন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক।
যদিও বাল্মিকী বা ব্যাসদেবের মতো ধর্মগ্রন্থ রচয়িতা নন, তবু কালিদাসের সাহিত্যকীর্তি ভারতীয় কবিতার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তাঁর কাব্য ও নাটকের প্রভাব অগণিত কবিকে প্রেরণা দিয়েছে। প্রেম, প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের নিখুঁত চিত্র বুনতে তাঁর ভূমিকা অনন্য। বিশেষত বৈষ্ণব সাহিত্যে রাধার রূপ বর্ণনায় যে উপমাগুলি ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে কালিদাসের লেখনীর ছায়া স্পষ্ট।
বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব ধারাতেই কালিদাসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তাই তাঁকে বাঙালি সাহিত্যচর্চার উত্তরাধিকারের অঙ্গ বললেও ভুল হবে না। প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক সাহিত্য পর্যন্ত তাঁর ছাপ বিদ্যমান।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গেও কালিদাসের এক বিশেষ যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে ছোটোবেলায় কবিগুরু কালিদাসের কাব্যের সঙ্গে পরিচিত হন। রবীন্দ্রনাথের মানসিকতা ও কবিত্বে কালিদাসের প্রভাব ও সাদৃশ্য বহু সমালোচকই উল্লেখ করেছেন।
দীর্ঘ সময় কালিদাসের আসল রচনাগুলি অন্ধকারেই ছিল। তবে আধুনিক যুগে তিনি নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছেন, এবং তাঁর সাহিত্য আজও পাঠক-সমালোচকদের কাছে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
কালিদাসের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল – কুমারসম্ভব (মহাকাব্য), রঘুবংশ (মহাকাব্য), মেঘদূত (গীতিকাব্য), শ্যামলাদণ্ডকম (স্তোত্র/ভক্তিমূলক কাব্য), অভিজ্ঞান শকুন্তলম (নাটক)। মালবিকাগ্নিমিত্রম (নাটক) এবং বিক্রমোর্বশীয়ম্ (নাটক)।
উইলিয়াম শেক্সপিয়র ছিলেন ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা কবি, নাট্যকার ও অভিনেতা। তিনি ১৫৪টি সনেট, ৩৯টি নাটক ও দীর্ঘ কাব্য রচনা করেছেন, যা আজও বিশ্বের নানা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে, আজও নানাভাবে তা মঞ্চস্থ হয়। তাঁকে “বার্ড অফ এভন” ও ইংল্যান্ডের জাতীয় কবি বলা হয়।
১৭৮৯ সালে ইংরেজ বিচারপতি ও প্রাচ্যবিদ স্যার উইলিয়াম জোনস প্রথমবার কালিদাসের বিখ্যাত নাটক ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। তিনি তুলনামূলকভাবে মন্তব্য করেন যে, কালিদাসের সাহিত্যকীর্তি শেক্সপিয়রের সমকক্ষ। এরপর থেকেই কালিদাসকে ভারতের শেক্সপিয়র বলা শুরু হয়।
শেক্সপিয়র বিশ্বজোড়া যে খ্যাতি পেয়েছেন, তার ঠিক কতটা কালিদাস পেলেন!