দৃশ্যপট-১: ২০০০ সন
মাত্রই মেট্রিক পরীক্ষা শেষ হলো। ল্যাব পরীক্ষার পরদিনেই ব্যাগ গুছিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলুম।৫০০ টাকার ডিসকাউন্ট আছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কলেজ ভর্তি কোচিং এ যেতে হবে। ঐ সময়ে ৫০০ টাকা ও অনেক কিছু। আমার মা কে কাঁদিয়ে এবং পেছনে না তাকিয়ে আমি ঢাকা চলে এলুম। সে কি উত্তেজনা। জীবনে প্রথম ঢাকায় আসা।
ভর্তি হলাম আরামবাগের এক কোচিং এ। সব কিছুই তদারক করছিলেন আমার বড় ভাই।উনার সাথেই নবাবপুরের এক গিঞ্জি মেসে উঠলুম। সেই মেসের বুয়ার রান্না খেয়ে আমার চোখের জল ও নাকের জল এক হয়ে গেল। সারা বাংলা থেকে ঢাকায় তখন কলেজ ভর্তিচ্ছুদের ঢল। সবাই মামা, ফুফু, খালা, চাচাদের বাসায় অভিবাসী। আমার মামারাও অনেক হেল্প করেছে সেই সময়ে।
যা হোক কোচিং এ কর্তাদের প্রথম কয়েকদিনের বক্তৃতায় মনে হলো একটি পছন্দসই কলেজে ভর্তি হওয়াই জীবনের মূখ্য উদ্দেশ্য, বাকি সব গৌন।সে ৫ মাস আমার জীবনের সবচেয়ে কস্টকর অধ্যায়। টুহুইলার টেক্সী ও অটোতে(ঢাকায় অধুনালুপ্ত) চড়ে শব্দাভারে প্রায় বধির হয়ে প্রতিদিন গুলিস্তান টু আরামবাগ বাঁদুড়ঝোলা। ভাবতেই গা শিউরে উঠে এখনো। দীর্ঘ ৫ মাসের কোচিং যুদ্ধ শেষে অবশেষে ভর্তি যুদ্ধে লিপ্ত হই।৬টায় পরীক্ষা দিয়ে আমি ৫টায় উত্তীর্ন হই ও ১টায় ফেল।প্রতিটি কলেজের জন্য এক্সাম ফি, যাতায়ত আরো কত কি।অবশেষে আমি ঢাকা কলেজে ভর্তি হই।
দৃশ্যপট-২: ২০১৬ সন
আমার টুইন দুইটা ভাগ্নি আছে। তারা একজন জিপিএ ৫ ওঅন্যজন ৪.৭২ পেয়েছে।আপু বললো কলেজে এ্যাপ্লাই করতে। রাত ১২ টায় বসে আমি ১০ মিনিটে কাজ সারি। আজ ২ জনই নোয়াখালীর একটি নামকরা কলেজে ভর্তি হয়ে যায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই।
বাংলাদেশ যে ডিজিটাল হচ্ছে এটি তার একটি উদাহরন। সে সময়ে ৬ মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে যা আজকের ৭০-৮০ হাজার টাকার সমান। এভাবে কোটি কোটি টাকার অনুৎপাদনশীল কোচিং ব্যবসা গজিয়েছিলো। কলজে ভর্তি ককোচিং গুলো দেশের পপ্রায় সসকল শশহরে ব্যাঙের ছাতার মত গঁজিয়ে উঠে।বর্তমান সরকার তার মূলোৎপাটন করেছে। মুক্তি দিয়েছে অর্থনীতির এক দুস্ট চক্রের হাত থেকে। মানুষ অতীত মনে রাখতে চায়না আর ঐতিহাসিকভাবে আমরা সমালোচনামুখর ও প্রশংসাবিমুখ জাতি। ভালো কাজের তারিফ করতে হবে। বিশাল এক টিম এ ডিজিটালাইজেশনের কাজে জড়িত ছিলো। তবু বিশেষভাবে ৪ জনের আমি নামোল্লেখ করতে চাই। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ড. মো:কায়কোবাদ, সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। এর মধ্যে এটি বাস্তবায়নে শেষোক্ত ২ জনের পরিশ্রম ও অবদান অবিস্মরনীয়।উনারা শুধু কলেজ ভর্তি না অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদন ও চালু করেছেন।জাফর ইকবাল স্যার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনৃন অনুষদে একসাথে ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে আপ্রান চেস্টা করেছেন। আমাদের বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অসহযোগিতায় তা এখনও বাস্তস্বায়ন হয়নি। তবে আশা করি অচিরেই তা হবে।
এরপরও কিছু সীমাবদ্ধতা হয়তো রয়ে যায়। বাংলাদেশের সব অঞ্চলে ইন্টারনেট এখনও সহজলভ্য নয়।অন্তত দেশের সকল ইউনিয়নে এ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কলেজ ভর্তির ক্ষেত্রে মেধার পূর্নাঙ্গ নিশ্চায়ন কিন্তু সরকারকেই করতে হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া যখন কলেজগুলোর হাতে ছিলো তখন কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক পান্ডাদের কাছে অনেক কলেজই ছিলো অসহায়। সরকার কেন্দ্রীয় ভাবে এটি পরিচালনা করায় এখন দূর্নীতি কমবে নিঃসন্দেহে।কলেজের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের ও অযথা তদবিরের চাপ নিতে হবেনা।কলেজভর্তিনামক এক বিভীষিকাময় যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচলো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকমহল।
হে নবীন প্রজন্ম লক্ষ প্রানের বিনিময়ে যে দেশটা স্বাধীন হয়েছে তার পরিবর্তনে আরো অনেকেই কাজ করছে। তোমরা তা ভুলে যেওনা।বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে ও এগিয়ে যাবেই তোমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে।
লেখক : আবিদুর রহমান
সহকারি অধ্যাপক, আই সি ই বিভাগ,
নোবিপ্রবি