জাহিদ আল-আমীন :: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রায়শই পত্রিকায় আপনার এমন কিছু ছবি প্রকাশিত হয়, যেখানে আপনি কোন দুস্থ বা রোগগ্রস্থ শিল্পী বা সাংবাদিক বা তাদের নিকটাত্মীয়দের হাতে ৫০ হাজার, এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন! আপনার দয়ালু মনের কথা সবাই জানে! বিপদের সময় এই সহায়তাটুকু অনেকের জন্য পর্বত সমান! এই মহানুভবতার প্রতিদান আপনি নিশ্চয়ই মহান সৃস্টিকর্তা আল্লাহর কাছে পাবেন!
কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন এই ৫০ হাজার বা ১০ লাখ টাকা কখনো কখনো কারো কারো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য! তেমনই একজন আমাদের আলতাফ মাহমুদ ভাই!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে আরো একটি বিষয়ের প্রতি দৃস্টি আকর্ষণ করাতে চাই! আপনার এই সু-শাসনের সময় আপনার ভিন্নমত ও পথের অনুসারী শিল্পী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী রয়েছে, তারাও তো অসুস্থ হয়, রোগে শোকে ভুগে আমাদেরকে ছেড়ে চলে যান! তাদের কবিতা, অক্ষর, ভাষা, শব্দগুলোও তো এই দেশের মাটি ও মানুষের জন্য নিবেদিত! হোক না সেটা ভিন্নমতের! প্রসংগত, এই ভিন্নমতের গুনী মানুষদের অবজ্ঞা বা বিষ দৃস্টিতে বিবেচনা করা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রুপ নিয়েছে, আপনার বেলায় যে ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে, তা আপনার পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী বা রাস্ট্রপতিদের ক্রিয়ার অনুরূপ কর্ম! জানি, গরীব একটি দেশে সবার অভাব মোচনের মতো অর্থের সংকুলান নেই, তবুও আশা রাখি, আপনি এই সংকীর্ণতার ঊর্ধে উঠতে পারবেন! তবে আমার লেখার মূল লক্ষ্য ভিন্ন কিছু! আসছি সে প্রসংগেই!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজকে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন প্রিয় মানুষ, জনপ্রিয় নেতা আলতাফ মাহমুদ ভাই! মৃত্যুদূতের আগমনের প্রহর গুনছেন চিত্রনায়িকা দিতি, অসংখ্য সফল ছবির নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন, নিতান্ত অবহেলায় হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো গুনছেন দেশের প্রধান কবি, ‘উপমহাদেশ’ এর কবি আল মাহমুদ! বিদেশে গিয়ে ব্যয় বহুল চিকিৎসা সেবা নেয়ার সামর্থ্য নেই – এমন অনেক গুনীজন বিনে চিকিৎসায়, ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে নিতান্ত অনাদরে, অবহেলায় ধুকে ধুকে পাড়ি জমান অন্যলোকে, অন্যভুবনে! তারা তো চলেই গেলেন, চলে যাবেন। কিন্তু যাবার আগে একটা প্রশ্ন রেখে যান জাতির সামনে! “আমরা কি রাস্ট্রের কাছে আরেকটু সন্মান, আরেকটু আনুকূল্য কি পেতে পারতামনা, পেতে পারিনা, !
না, মাননীয়, প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে কতিপয় তোষামুদে, ‘পোষা’ সাংবাদিকদের মতো প্রশংসায় ভাসিয়ে দিবোনা! আমি আমার অল্প বুদ্ধিতে যা কুলোয়, সেটাই আপনারর কাছে আবেদন জানাবো। আমার বার্তা আপনার দৃস্টিগোচর হবে, তারপর আপনি বিহিত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন, এমন দূরাশা করিনা, কিন্তু এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে, নাগরিক দায়িত্ব টা তো পালন করতেই হবে! আমি সেটকুই মাত্র করছি!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, যে মানুষগুলোর শয়ন-স্বপনে বাংলাদেশ! এই দেশের মাটি ও মানুষ ছিলো যাদের মন-মননে, শয়ন – স্বপনে, প্রতিটি নি:শাষে- বিশাস বাংলাদেশ, তাদের অধিকাংশই শেষ নি:শাসটি ছাড়ছেন দূরের কোন দেশের নির্জন কোন হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউতে ! সজন-পরিজন, প্রিয়জনহীন অবস্থায়! বিদেশে শেষ নি:শাস ত্যাগ করা গুনীজনদের তালিকা ক্রমশ: দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে! বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে পাঠক নন্দিত লেখক হুমায়ুন আহমেদ, পপ গুরু আজম খান, রাস্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, আব্দুল জলিল, আব্দুস সামাদ আজাদসহ অসংখ্য গুনী মানুষ মারা গেছেন বিদেশের কোন হাসপাতালে! চিকিৎসা নিতে গিয়ে আর কোন দেশের এতো বেশি সংখ্যক জ্ঞানী, গুনী মানুষ দেশের বাইরে মারা যাওয়ার রেকর্ড আছে কী না আমার জানা নেই! আমাদের প্রতিবেশি কয়েকটি রাস্ট্র তো তাদের অন্যতম প্রধান রাজস্ব এর উত্স এই মেডিকেল ট্যুরিজম! বাংলাদেশের লাখো কোটি মানুষ সজনদের সুচিকিৎসার আশায় এসব দেশের টিকেট কাটে! কেন তারা বিদেশমূখী, আমাদের সাস্থ্য বিভাগ কখনো কি বিষয়টি নিয়ে স্টাডি করে দেখেছে!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ইচ্ছা করলে আরো ৫টি পদ্মা সেতূর কাজ শুরু করতে পারবেন! ঢাকার সড়কগুলোর উপর দিকটা ঢেকে দিতে পারবেন সুদীর্ঘ-সুপ্রশস্ত উড়াল সেতু নির্মান করে! মেট্রোরেল লাইনে রাজধানীকে আমূল পালটে দিতে পারবেন, ঢাকা হবে ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত! একের পর এক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সুনিশ্চিত করতেও পারবেন! পারবেন আরো অনেক কিছু! যতকিছু আপনার কীর্তি, তার সবগুলোর জন্য বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে! আরো কিছু ক্ষুদ্র উদ্যোগ আপনাকে নিয়ে যেতে পারে সীমাহীন উচ্চতায়!
মানুষ মরনশীল, একদিন আমি, আপনি, আমরা সবাই এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো! চলে যেতে হবে! কিন্তু কিছু কাজ আমাদেরকে এনে দিতে পারে অমরত্ত্ব!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি পৃথিবীর নাম্বার ক্যান্সার হাসপাতাল ও ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্রটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করতে পারেন না! পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ‘হৃদয় রোগ’ এর হাসপাতালটি কি আমাদের বাংলাদেশে হতে পারেনা!
না, প্রধানমন্ত্রী, ভাবনার কিছু নেই, আমাদের দেশের মেধাবী চিকিৎসকগন পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন! যাদের চিকিৎসা সেবায় সুস্থ হয়ে উঠছেন, শত-সহস্র মানুষ! এমন একটি মহতি উদ্যোগ শুরু হলে, একটা দেশের রাস্ট্রপ্রধান আহবান জানালে, দেশ প্রেমিক, ডাক্তার, বিজ্ঞানীদের অনেকেই দেশ সেবায় ছুটে আসবেন! আর দেশের ১৬ কোটি মানুষ নানা বিষয়ে দ্বিধা-বিভক্ত, সন্দিহান থাকলেও আপনার এই আহবানে এক বিন্দুতে এসে দাঁড়াবে! কারন এই মহান উদ্যোগ তো তাদের জন্যই! নিজভুমে, আপনজনের কোলে শেষ নি:শাসটি ছাড়তে পারার জন্য!
কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টাটি বাধবে কে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি এই অধমের চিন্তাগুলো একটিবার বিবেচনা করে দেখবেন! আমরা আর কোন আলতাফ মাহমুদকে অর্ধ চিকিৎসায়, আর কোন নায়ক মান্নাকে ভুল চিকিৎসায়, কিংবা আর কোন হুমায়ুন আহমেদ, বা জিল্লুর রহমানের মতো কোন রাস্টপতিকে বিদেশের মাটিতে মারা যাক, সেটা আর দেখতে চাইনা!