নারীরা পুরুষদের প্রতি ঠিক কীভাবে আকৃষ্ট হন? প্রেমের এই রহস্যকে অনেকেই অনুভব করতে পারলেও, বৈজ্ঞানিকভাবে তা বোঝা সবসময় সহজ নয়। ‘আকর্ষণের বিজ্ঞান’ নিয়ে বহু গবেষণা, বই ও প্রবন্ধ থাকলেও প্রতিবারই এটি বোঝা গেছে—আকর্ষণ মূলত পরিস্থিতিভিত্তিক এবং একাধিক উপাদানের মিলিত প্রভাব।

তবে সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে কিছু নির্দিষ্ট গুণাবলি, যা পুরুষদের নারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
বুদ্ধিমত্তা ও রসবোধ
নারীরা এমন পুরুষদের প্রতি বেশি টান অনুভব করেন যারা বুদ্ধিমান এবং রসবোধসম্পন্ন। হিউমার বা হাস্যরস একজন পুরুষের ইতিবাচক মনোভাব, জীবনবোধ এবং সমস্যা মোকাবিলার ক্ষমতা প্রকাশ করে। একজন যিনি মেয়েদের হাসাতে পারেন, সাধারণত তাঁর প্রতি আকর্ষণও গড়ে ওঠে বেশি। একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত, নারীরা সেই পুরুষদের পছন্দ করেন যাঁরা তাদের মানসিকভাবে ‘স্বচ্ছন্দ’ বোধ করাতে পারেন।
অভিব্যক্তি ও কোমল আচরণ
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী হেলেন ফিশারের মতে, বিশ্বের বেশিরভাগ নারী অভিব্যক্তিভিত্তিক আকর্ষণে বিশ্বাসী। একজন পুরুষের কণ্ঠস্বরে নম্রতা, চোখে চোখ রাখা, মনোযোগ দিয়ে শোনা, সহানুভূতি প্রকাশ এসব আচরণ নারীদের খুব দ্রুত আকৃষ্ট করতে পারে।
গবেষণা অনুযায়ী, জোরজবরদস্তিমূলক বা কর্তৃত্ব দেখানো পুরুষদের তুলনায়, বোঝার চেষ্টা করে এমন পুরুষদের নারীরা বেশি পছন্দ করেন।
চেহারা নয়, ব্যক্তিত্বই মুখ্য
সাম্প্রতিককালে পুরুষদের প্রতি নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বদলেছে। দামি পোশাক, বিলাসবহুল গাড়ি বা বাইরের চাকচিক্য নারীদের কাছে আর শুধু মূল আকর্ষণ নয়। বরং একজন পুরুষের ভিতরের সৌন্দর্য, নম্রতা, আচরণ এবং ব্যক্তিত্বই নারীদের হৃদয় জয় করে নেয়।
২০১০ সালের এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা এমন পুরুষদের পছন্দ করেন যাঁরা আত্মবিশ্বাসী, অভিজ্ঞ এবং স্থির। এমনকী, আপনি যদি সাইকেল চালিয়ে চলাফেরা করেন, তা-ও সমস্যা নয়—যদি আপনার মধ্যে ব্যক্তিত্ব এবং আত্মবিশ্বাস থাকে, তবেই আপনি হতে পারেন নারীদের পছন্দের।
হালকা দাড়ির প্রতি নারীদের দুর্বলতা!
২০১৩ সালে নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, নারীরা সাধারণত হালকা দাড়িওয়ালা পুরুষদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় পছন্দ করেন। পুরো দাড়ি বা ক্লিন-শেভের তুলনায় এই ধরনের স্টাইল তাঁদের কাছে বেশি ভারসাম্যপূর্ণ এবং সৌন্দর্যবর্ধক। এই ট্রেন্ডটি এখন বিশ্বজুড়ে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়, যেখানে ‘স্টাইলিশ দাড়ি’ নিজেই একটি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট।
অভিজ্ঞতা ও বয়স
নারীরা প্রায়শই এমন পুরুষদের পছন্দ করেন যাঁরা বয়সে একটু বড় এবং অভিজ্ঞ। ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ফিওনা মুর এক গবেষণায় বলেন, ‘আর্থিকভাবে স্বাধীন নারীরা অনেক সময় আরও স্থিতিশীল, আত্মবিশ্বাসী এবং অভিজ্ঞ পুরুষদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হন। এই ধরনের পুরুষদের মধ্যে একটি প্রটেকটিভ অনুভূতি থাকে যা নারীদের নিরাপত্তাবোধ জাগায়।
দয়া ও যত্নশীলতা
এই দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন পুরুষ যদি নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল, সদয় ও যত্নশীল হন, তাহলে তা নারীর মনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। যত্ন নেওয়া মানে শুধু উপহার দেওয়া নয়, বরং মনোযোগ দেওয়া, কথা শোনা, সম্মান দেখানো এবং মানসিক সাপোর্ট দেওয়া।
বিজ্ঞান কী বলছে?
বিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত আকর্ষণের পূর্ণাঙ্গ সূত্র বের করতে পারেনি। প্রতিটি মানুষ আলাদা, তাই তাদের পছন্দও আলাদা। তবে, একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যেসব কমন গুণ উঠে এসেছে, তা হল—
- বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ
- হাস্যরসপূর্ণ ও ইতিবাচক মনোভাব
- আত্মবিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা
- শরীরী ভাষা ও ব্যক্তিত্ব
- নম্রতা ও সহানুভূতি
- হালকা দাড়ি ও গোছানো রূপ
প্রেম ও আকর্ষণ সবসময়ই একটি গভীর এবং জটিল প্রক্রিয়া। নারীরা শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে নয়, একজন পুরুষের মনের সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব, আচরণ এবং মানসিক স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করেই প্রেমে পড়েন।
সুতরাং, যদি আপনি নিজেকে আরও ভালোভাবে গড়ে তুলতে চান—আপনার ব্যক্তিত্বে সদয়তা, রসবোধ ও আত্মবিশ্বাস আনুন। কারণ, সেগুলিই নারীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

