নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম সমৃদ্ধ প্রথম ল্যাপটপ তৈরি করলো হুয়াওয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় ছয় বছর ধরে মার্কিন চিপবঞ্চিত প্রতিষ্ঠানটি প্রথম নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম সমৃদ্ধ ল্যাপটপ আনল। হারমোনি ওএসে ল্যাপটপটিতে এরইমধ্যেই যুক্ত করা হয়েছে দেড় শতাধিক অ্যাপ্লিকেশন। যদিও ল্যাপটপে কোন চিপ ব্যবহার করা হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি।

মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ আর অ্যাপলের ম্যাক ওএস। এই দুই অপারেটিং সিস্টেমেই চলছে বিশ্বের বেশিরভাগ পার্সোনাল কম্পিউটার। প্রযুক্তির এইখাতে মার্কিন আধিপত্যকে টেক্কা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছিলো চীন। দীর্ঘ প্রয়াস শেষে অবশেষে মিললো সফলতা।
চলতি সপ্তাহেই নিজেদের প্রথম অপারেটিং সিস্টেম হারমোনি সংযুক্তির মাধ্যমে দুটি ল্যাপটপ বাজারে ছাড়লো হুয়াওয়ে। মেটবুক ফোল্ড ও মেটবুক প্রো নামের দুটি মডেল চলছে হারমোনির ৫ম সংস্করণের মাধ্যমে।
হুয়াওয়েকে নিয়ে আলোচনার প্রধান কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির দ্বন্দ্বের দীর্ঘ ইতিহাস। ২০১৯ সালে জাতীয় নিরাপত্তার কথা তুলে প্রতিষ্ঠানটির চিপ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওয়াশিংটন। এতে নিজস্ব প্রযুক্তিতে সেমিকন্ডাক্টর ও ওএস তৈরিতে মনোনিবেশ করে হুয়াওয়ে।
এক বছর পরই হারমোনি সিস্টেম যুক্ত করা হয় স্মার্টফোনে। আর ২০২১ সাল থেকে শুরু হয় ল্যাপটপ প্রোটোটাইপ তৈরির কাজ। প্রতিষ্ঠানটি বলছে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে নিশ্চিত করা যাবে গ্রাহকদের স্বাচ্ছন্দ্য।
হুয়াওয়ে হারমোনি ওএস প্রজেক্টের প্রযুক্তিবিদ ঝেং কুনফান বলেন, ‘পরীক্ষাগারে মানুষের চোখের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে অপারেটিং সিস্টেমটি তৈরি করা হয়েছে। ইউজার সরাসরি ডিভাইসের সামনে না থাকলে এটি সহজেই এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে অপারেশন সরবরাহ করতে পারবে। সংযোগ বিলম্ব মাত্র কয়েক মিলি সেকেন্ডের। বা বোঝাই যাবে না।’
হুয়াওয়ের দাবি, ইতোমধ্যেই অপারেটিং সিস্টেমে যুক্ত করা অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যা দেড় শতাধিক। গেল বছর পর্যন্ত ৭২ লাখ ডেভেলপার হারমোনি ওএসের জন্য অ্যাপ তৈরি করেছে। যা ইন্সটল করা হয়েছে স্মার্টফোন ও টিভিসহ ১০০ কোটির বেশি ডিভাইসে।
হুয়াওয়ের নির্বাহী পরিচালক ইউ চেংডং বলেন, ‘মাইক্রো কার্নেল ডিজাইনের কারণে হারমোনি ওএস চালিত ডিভাইসের কোর মডিউলগুলো অন্যান্য সার্ভিস অ্যাপ্লিকেশনের চেয়ে আলাদা রাখা হয়েছে। এতে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ইতোমধ্যে ১৫০টির বেশি অ্যাপ্লিকেশন যুক্ত করা হয়েছে। সামনে যোগ হবে আরও এক হাজার।’
ফিজিক্যাল কিবোর্ডবিহীন ১৮ ইঞ্চির ও-লেড ডিসপ্লে সমৃদ্ধ মেটবুক ফোল্ডের বেইজ ভ্যারিয়েন্টের দাম প্রায় সাড়ে তিন হাজার ডলার। অন্যদিকে, এক হাজার ১০০ ডলারে পাওয়া যাবে মেটবুক প্রো। কোন চিপ ব্যবহার করা হয়েছে তা উল্লেখ করা না হলেও হুয়াওয়ে বলছে, নতুন চিপসেট উৎপাদন প্রযুক্তির দাম বেশি হওয়ার কারণে ল্যাপটপ দুটির দাম তুলনামূলক বেশি।