মোহাম্মদ কামরুজ্জামান: আধুনিক প্রযু্ক্তির এ যুগে মোবাইল ছাড়া এক মুহূর্তও ভাবাই যায় না। সে কাজে হোক কিংবা বিনোদনে, আমরা সারাক্ষণই এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে চলেছি। অনেকের মতে, চায়ের চেয়েও মারাত্মক নেশা মোবাইলের। আর করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউনের এই দিনগুলোতে মোবাইলই যেন এখন সময় কাটানোর বড় মাধ্যম। তবে আপনি কি জানেন, মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে হতে পারে ভয়াবহ ক্ষতি?
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, একটানা মোবাইল ব্যবহারে অজান্তেই শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। এর ফলে হয়তো আপনার হাতের আঙুল আড়ষ্ট হতে পারে। আবার ঘাড়ে টান ধরা, চোখ ব্যথা ও হাত তুলতেও কষ্ট হওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে।
এ ব্যাপারে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, ভুল ভঙ্গিমায় এক নাগাড়ে মোবাইল ব্যবহার করার ফলে পেশিতে টান পড়ে। আবার রক্তচলাচলের গতিও কমে যায়। এরই ফলস্বরূপ শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা-বেদনার সূত্রপাত হয়।
এ ছাড়া মোবাইল নিয়ে বাজারে কিংবা অন্য কোথাও গেলে তা থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে যেসব সমস্যা হতে পারে-
* এক নাগাড়ে মোবাইলে কথা বললে ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যথার ঝুঁকি বাড়ে।
* অনবরত মোবাইলে মেসেজ বা সোশ্যাল সাইটে লেখালেখি করলেও হাতের কবজি ও আঙুলে ব্যথা হতে পারে।
* মাইগ্রেন ও মাথা ব্যথার শঙ্কা থাকে।
* ব্রিটেনের হ্যান্ড ও এলবো সার্জন রজার পাওয়েল ও তার সহযোগীদের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, যারা দু’ঘন্টার বেশি সময় ধরে মোবাইলে টেক্সট করেন, তাদের ‘টেক্সট ক্ল’ এবং ‘সেল ফোন এলবো’ নামে আঙুল ও কব্জির সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যার নাম ‘কিউবিটাল টানেল সিনড্রোম’।
* অনবরত টেক্সট লেখার জন্য হাতের বুড়ো আঙুল, তর্জনি এবং মধ্যমা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার হয় বলে এই আঙুল দুটির কাছাকাছি থাকা স্নায়ুর উপর বাড়তি চাপ পড়ে। এর ফলে শুরুর দিকে আঙুল অসাড় লাগে, পরের দিকে ব্যথা হয়।
* অনেকে কনুইয়ে ভর দিয়ে মোবাইলে টেক্সট করেন বা কথা বলেন। অতিরিক্ত সময় ধরে এমন করলে হাত, কাঁধ, ঘাড় ব্যথার ঝুঁকি বাড়ে।
* রাতের অন্ধকারে মোবাইলের নীল আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে ইনসমনিয়া অর্থাৎ অনিদ্রার ঝুঁকি বাড়ে। একই সঙ্গে ‘সিভিএস’ অর্থাৎ ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’ অর্থাৎ চোখের জল শুকিয়ে গিয়ে চোখের সংক্রমণ হয়, চোখ কড়কড় করে।
* কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করায় হাড়ের আলনা নার্ভ অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হলে সার্জারি করা ছাড়া উপায় থাকে না।
* শুধু স্নায়ুরোগই নয়, সারাক্ষণ মোবাইল নাড়াচাড়ার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিও কম নয়।
এসব সমস্যা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। যেমন-
* যতটা সম্ভব ফোন স্পিকারে দিয়ে কথা বলুন।
* সব আঙুল পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করুন।
* টানা ব্যবহারের ফাঁকে হাত ও আঙুল স্ট্রেচিং করে নেওয়ার মতো অভ্যাস বজায় রাখুন।
* শিশুর হাতে বেশি সময়ের জন্য মোবাইল দেবেন না।