মো. আশিকুল ইসলাম চয়ন :: অযুত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। যে দেশের মানুষ রক্তের ক্যানভাসে স্বাধীন দেশের সীমানা এঁকেছে, আর সেই রক্ত কে ঘামে পরিণত করে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নিরন্তন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, আর আমাদের মাননীয় রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতা দখলের জন্য একেক সময় একেক নাটক করে যাচ্ছেন।
আমরা গণতন্ত্র বলতে বুঝি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সকলের প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। কিন্তু বর্তমানে আমরা কি দেখছি, এটা কি গণতন্ত্র? আওয়ামীলীগ এ দেশের সবচেয়ে পুরাতন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল, যে দলের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে অন্য দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে, যে দল এ দেশের স্বাধীনতা উপহার দিয়েছে, যে দল গণতন্ত্র, গণ মানুষের শাসনের জন্য সর্বাধিক সংগ্রাম করেছে, যে দল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সেই দলের এহেন রাজনৈতিক অনুশীলন মানুষ প্রত্যাশা করে না।
সেই দল বালি থেরাপি দিয়ে বিরোধী মত কে দমন করবে, তা মেনে নেওয়া যায় কি? এক সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আওয়ামীলীগের উপর প্রচণ্ড নির্যাতন চালিয়েছে, তবে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের কে মাঠে পাওয়া যেত।আর বিএনপি নেত্রী বা ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচী দিয়ে ঘরে বসে থাকে , এভাবে কোন দেশের কোন রাজনৈতিক দল দাবী আদায় করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। আমরা গত বছর দেখলাম বিএনপি ঘোষিত রোড ফর ডেমোক্রেসি, তাতে জন সম্পৃক্ততা ছিল না , শুধু ছিল আতঙ্ক। আজ পরিতাপের সাথে লিখতে হয়, আওয়ামীলীগ কেন বালুর ট্রাক দিয়ে বিএনপি নেত্রীর অফিস অবরুদ্ধ করছে? তাদের সভা সমাবেশ করা সাংবিধানিক অধিকার যা সংবিধান ৩৭ নং অনুচ্ছেদ দ্বারা প্রতিটি নাগরিক ও দলকে নিশ্চিত করেছে।
বর্তমানে বিএনপির যে দলীয় অবস্থা তাতে সমাবেশ করলে সরকারের কিছু আসবে যাবে বলে মনে হয় না । বরং এই সব অজুহাতের দরুন তারা একের পর এক হরতাল অবরোধ দিয়ে জানমালের ক্ষতি সাধন করছে । দেশের ১৬ কোটি জনগণ কোন অপরাধ করে নাই তাহলে কেন তাদের জানমালের ক্ষতি করা হচ্ছে? কি অপরাধ শিশু ছাত্রটির? বই কাঁধে স্কুলে যাওয়া কি তাঁর অপরাধ? মানুষ আজ অবরুদ্ধ থাকতে চাই না, কে ক্ষমতায় এলো গেলো এটা বোঝেনা, তারা বোঝে একমুঠো ভাত, সন্তানদের কে স্কুলে পাঠিয়ে শিক্ষিত করতে, চলাচলে চায় নিরাপত্তা । তারা রাজনৈতিক নাটক ছিনেমা বোঝে না । গাড়ি, রেল পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে , এগুলো কি কাঁরও বাপের সম্পত্তি, এগুলো জনগণের ঘামে অর্জিত টাকায় কেনা।
এদেশের গণপরিবহণের সাথে যে সমস্ত সম্মানিত শ্রমিক ভাইয়েরা জড়িত, তাদের কি স্ত্রী সন্তান নেই, তাদের সন্তানেরা কি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে না? তারা কি করে বাঁচবে? আপনাদের অফিসে খাট-পালং, টিভি-ফ্রিজ সবই আছে, আরামে থাকছেন খাচ্ছেন আর জনগণ কে মারছেন, পোড়াচ্ছেন । এটা কখনো জনস্বার্থের রাজনীতি হতে পারে না । আজ আওয়ামীলীগ রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে ইট বালুর ট্রাক দিয়ে মোকাবেলা করছে আর বিএনপি মাঠে না নেমে অমিত সাহা ও কংগ্রেসম্যানদের নাম ব্যাবহার করে রাজনৈতিক নাটক করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক ভাবে কতটা দেওলিয়া না হলে বিজেপি সভাপতি অমিত সাহা ও ছয় কংগ্রেস ম্যানদের নাম ব্যাবহার করে এ রকম মিথ্যাচার করতে পারে? তা আমার বোধে আসে না ।
হরতাল-অবরোধ ডেকে দৈনিক দেড়-দুহাজার কোটি টাকা লোকসান করছে, এর দায়ভার কে নিবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেশনজট হাত থেকে কে রেহায় দিবে? যে মানুষটি দিন এনে দিন খায়, তাঁর অন্নের জোগান কে দিবে? আওয়ামীলীগের নেতা নেত্রীদের কে বিনয়ের সাথে বলবো আপনারা সেনা সমর্থিত কোন রাজনৈতিক দল করেন না । আপনাদের সাথে জন সম্পৃক্ততা আছে, আপনারা রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করেন। আর বিএনপি নেত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ আপনি আপনার সন্তান কে পরিমিত পরিমার্জিত বক্তব্য প্রদানের আহব্বান জানান , দল কে সংগঠিত করেন, ক্ষমতায় যাবার দাবী ছেরে জনগণের দাবী নিয়ে অফিস যাপন বাদ দিয়ে রাজপথে এসে জনগণের কাতারে দাড়িয়ে অহিংস আন্দোলন করেন, তাহলে আপনার দলের নেতাকর্মী না পেলেও জনগণ কে সঙ্গে পাবেন । উভয় দলের নেতা কর্মীকে দলের চেয়ে দেশ আর দেশের জনগণের কথা বেশী ভাবতে হবে , রাজনীতি হতে হবে জন কল্যাণমুখী ।
সবাইকে সাথে নিয়ে দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে । আপনারা দুজনই আমাদের চোখে সন্মানিত নেত্রী, কেনোনা আপনারাই আমাদের দেশ কে বিশ্ব দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেন । জনগণের নিকট আর কষ্ট দুর্ভোগের প্রতিমা রুপে আবির্ভূত না হয়ে শাশ্বত সুন্দর সমৃদ্ধের প্রতিমা রুপে আবির্ভূত হন। দেশের জনগণ পূজার অর্ঘ্য নিয়ে ভালোবাসার অশ্রু জলে ভক্তি নিবেদন করবে গোটা জীবন। এর ব্যাত্তয় হলে এ দেশ, সমাজ, অর্থনীতি, জনগণ সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে !!
লেখক : নিবন্ধক ও আহব্বায়ক, দ্যা ফোরাম অব নিউ ভোটারস ।