বার্তাবাংলা ডেস্ক :: উইন্ডোজ এক্সপির চেয়ে বেশি হ্যাকিং ঝুঁকিতে রয়েছে উইন্ডোজ সেভেন ও ভিস্তা। গত সময়ে এ অপারেটিং সিস্টেমগুলোয় সংঘটিত সাইবার হামলার ওপর ভিত্তি করে তৈরি মাইক্রোসফটের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
এখন পর্যন্ত অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মধ্যে মাইক্রোসফট এক্সপির জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সম্প্রতি এ অপারেটিং সিস্টেম বন্ধ করে দেয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের যেসব কম্পিউটারে এ অপারেটিং সিস্টেম চালু রয়েছে, তাতে খুব বেশি দিন নিরাপত্তাসংক্রান্ত সমর্থন দেবে না বলে জানিয়েছে। এতে চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে এ অপারেটিং সিস্টেমচালিত কম্পিউটারগুলো।
কিন্তু সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে মাইক্রোসফট জানায়, এক্সপির চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সেভেন ও ভিস্তা সংস্করণ দুটি। গত বছরের সর্বশেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বিশ্বজুড়ে এক্সপিচালিত কম্পিটারগুলোর চেয়ে সেভেন ও ভিস্তাচালিত কম্পিউটারগুলোয়ই বেশি সাইবার হামলা হয়েছে। ওই প্রান্তিকে এক্সপিচালিত মোট কম্পিউটারের ২ দশমিক ৪২ শতাংশ কম্পিউটার সাইবার হামলার শিকার হয়। এদিকে ভিস্তার ক্ষেত্রে এ হার ছিল ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর উইন্ডোজ সেভেনের ক্ষেত্রে এ হার ছিল ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এদিকে উইন্ডোজ এইটচালিত কম্পিউটারে সাইবার হামলার হার ছিল ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর উইন্ডোজ ৮.১-এ সংঘটিত সাইবার হামলার হার মাত্র দশমিক ০৮ শতাংশ।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলার পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এ কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাথা ব্যথা বেড়েছে। প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো এখন যে কোনো পণ্য তৈরির আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তি গ্রাহকদের মধ্যে নিরাপদ পণ্যের প্রতি আগ্রহের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ কারণে অদূর ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রযুক্তি খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। মাইক্রোসফট বরাবরই তাদের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তার ব্যাপারে আশাবাদী। প্রতিষ্ঠানের দাবি অনুযায়ী তাদের অপারেটিং সিস্টেমে প্রবেশ করে সাইবার হামলা পরিচালনা করা কোনো সহজ বিষয় নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি সাধারণ গ্রাহকের মানে উদ্বেগ তৈরি করবে। কারণ বিশ্বব্যাপী বিপুলসংখ্যক মানুষ তাদের পিসিতে উইন্ডোজ সেভেন ও ভিস্তা ব্যবহার করছে।
মাইক্রোসফটের একাধিক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ‘রটব্রো’ নামের একটি বিশেষ ম্যালওয়্যার ইন্টারনেট ব্রাউজারে হামলা চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর উইন্ডোজের অপারেটিং সিস্টেমগুলোয় এ হামলা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেমগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে আসে প্রতিষ্ঠানটির নতুন অপারেটিং সিস্টেম ৮.১। মাইক্রোসফটের দাবি অনুযায়ী, এ অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাদের অন্য অপারেটিং সিস্টেমগুলোর চেয়ে উন্নত। এখানে খুব সহজে কোনো হ্যাকার প্রবেশ করতে পারবে না।
কিন্তু শুধু উইন্ডোজ ৮.১-এর বাজারে আসাই এ সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ এরই মধ্যে বিশ্বের বিপুল পরিমাণ প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে উইন্ডোজ এক্সপি, সেভেন ও ভিস্তা ব্যবহার হচ্ছে, যা গ্রাহক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। এখনো বিশ্বের বিপুল পরিমাণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার হচ্ছে, যা এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক গ্রাহাম ক্লুলে বলেন, উইন্ডোজ এক্সপির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে যাবে বলে আশা করছি। আগের তুলনায় বর্তমানে অনেক কম সংখ্যায় উইন্ডোজ এক্সপি ও সেভেনচালিত কম্পিডটার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এক্সপিকে নিরাপত্তাজনিত যে কোনো সমর্থন করা থেকে বিরত থাকার ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন প্রতিবেদনে এ অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু শুধু এক্সপি নয়। এবারের প্রতিবেদনে সেভেন ও ভিস্তার নামও উঠে আসার কারণে এ খাতের সংশ্লিষ্টদের মাথা ব্যথা যে বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
মাইক্রোসফট তাদের অপারেটিং সিস্টেমগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অনলাইন থেকে এ অপারেটিং সিস্টেমের গ্রাহকরা ইনহ্যান্সড মিটিগ্যাশন এক্সপেরিয়েন্স টুলকিট (ইএমইটি) নামের বিশেষ সেবা ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। এ সফটওয়্যার গ্রাহকের অপারেটিং সিস্টেমে যে কোনো ম্যালওয়্যারের প্রবেশ প্রতিহত করবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে যে কোনো বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে সাধারণ গ্রাহকদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে।