মো.জাবিহুল আলম ভূঁইয়া ::আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখনকার সময়ের শিশুদেরকে অনেকেই তুলনামূলক অধিক স্মার্ট আর বুদ্ধিমান বলে দাবি করেন। তাদের এই দাবির সপক্ষে যুক্তিও নেহায়েত কম নেই। বিশেষ করে নানা ধরনের প্রযুক্তি পণ্যের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে নেওয়া এবং এগুলোর ব্যবহার খুব দ্রুত আয়ত্তে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে হাল আমলের শিশুদের দক্ষতা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এই শিশুদেরকেই যখন কম্পিউটার দুনিয়ার বাইরে বের করে এনে খোলা আকাশের নিচে কোনো গাছ বা পাখির কথা জানতে চাওয়া হয় তখন তারা যেন নেহাত বোকা বনে যায়। এমনকি শৈশবের ওপর নগরায়নের আগ্রাসনের কারণে প্রকৃতির আট-দশটা স্বাভাবিক ঘটনার প্রতিও বর্তমান শিশুদের জ্ঞান তুলনামূলক কম। হয়তো ভাবছেন, প্রযুক্তিনির্ভর এই সময়ে শিশুদের প্রকৃতি জ্ঞান অতটা না থাকলেই বা কী? জীবন কী আর তাতে আটকে থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তরটা আপাতদৃষ্টিতে হ্যাঁ হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। প্রকৃতির সঙ্গে শিশুদের যোগাযোগ মাত্র এক প্রজন্মের ব্যবধানেই অনেক কমে গেছে দাবি করে ওয়াইল্ড নেটওয়ার্ক নামে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর একটি ফোরাম। যুক্তরাজ্যের শিশুদের ওপর পরিচালিত এক জরিপের পরিপ্রেক্ষিতে এই ফোরামটি দাবি করেছে, পরিবেশ ও প্রকৃতির সাথে শিশুদের এই যোগাযোগ কমে যাওয়ার বিষয়টি একদিকে যেমন তাদের উদাসীন করে তুলছে প্রকৃতি সম্পর্কে তেমনি এর প্রভাব পড়ছে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও। তারা জানান, যুক্তরাজ্যের মতো স্থানে গড়ে পাঁচ থেকে আট বছর বয়সী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে মাত্র একজনের প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ফলে বাইরের দুনিয়ার গাছ, পাখি বা পোকামাকড়ের নাম এদের কাছে অচেনা। তবে শুধু সমস্যার কথা বলাই নয়, বরং একই সাথে সমাধানের একটি পন্থাও বাতলে দিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, শিশুরা যদি তাদের চিরাচরিত কম্পিউটার গেমস বা টেলিভিশনের দুনিয়া থেকে প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা সময়ের জন্য হলেও বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করে বা তাদের পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির সংস্পর্শে আসে তাহলে সেটিও শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ধারা বজায় রাখতে যথেষ্ট সহায়ক হবে। এদিকে এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে ইতোমধ্যে গোটা যুক্তরাজ্যে শিশুদেরকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রজেক্ট ওয়াইল্ড থিং নামের একটি বিশেষ উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে পর্যায়ক্রমে প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে ওয়াইল্ড নেটওয়ার্ক।
মন্তব্য যুক্ত করুন