কৌশলী ইমা :: ‘মুক্তিযোদ্ধাদের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে’-হ্যাঁ প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকা তথা রাজধানীর বুকে এধরনের শ্লোগান দিলো মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত রাজাকারদের সন্তানরা। অনেকেই হয়তো অবাক হচ্ছেন এধরনের শ্লোগান শোনে! কিন্তু আমি মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ অবাক হননি- যদি অবাকই হতেন তাহলে কিউ কিছু বলছেন না কেন? মাথায় অনেক চিন্তা ও প্রশ্ন আসে- আমি ঘুমোতে পারি না, আমি ঘুমোতে পারি না। এ কী করে সম্ভব হলো- এত স্পর্ধা রাজাকারদের সন্তানরা কোথা থেকে পেলো? কোনো মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী এবং যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে- তারা এধরণের শ্লোগান দিতে পারে না। কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বা অভিযোগ থাকতে পারে- কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের গালে কেন জুতা মারা হলো? এটা কি মুক্তিযোদ্ধাদের গালে জুতা মারা হলো?- এ জুতাতো মারা হলো বাংলাদেশের পতাকার গালে, বাংলাদেশের মানচিত্রের গালে, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের গালে, বাংলাদেশের সংবিধানের গালে! রাজাকারদের সন্তানরা কি চাচ্ছে একাত্তরে তাদের পিতার/দাদার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে? এ রাজাকার সন্তানরা যদি বিসিএস অফিসার হয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর থেকে তুলে হলেও তাদের গালে জুতা মেরে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিবে এবং জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থাযে কী হবে সেটা ভাবলেও গা শিহরিত হয়ে উঠে- এবং সেটা মাথার চিন্তায় আসলে ঘুম আসে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “কোটা পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে, মেয়েদের কোটা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কিসের আন্দোলন? মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে মুক্তিযোদ্ধাদের খাটো করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা যদি ঝুঁকি নিয়ে দেশ স্বাধীন না করত তাহলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনই হতো না। তাদের অবদানকে খাটো করার জন্য কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে? মেধাবী ছাত্ররা গাড়ি পোড়ায় না, উচ্ছৃঙ্খল হতে পারে না। এরা কি চাকরি পাওয়ার যোগ্য? তাদেরকে যারা উসকানি দিচ্ছে তারা কি আগামীতে রাজাকার-আল বদর কোটা দিয়ে দেশ চালাবে।?”
আবার বিরোধী দলীয় প্রধান বলছেন- কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে- তাদেরকে ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে চাকরি দেওয়া হবে। এ আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের যে অপমান করা হচ্ছে- সেটা কিন্তু তিনি একবারও উল্লেখ করেননি।
আবারো মাথায় চিন্তা! আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার প্রতিটি রায়ের পর্যবেক্ষণে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভুমিকার কথা বলেছেন, ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন (অপরাধী সংগঠন) বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু সন্ত্রাসী সংগঠন বলা হলেও এ দলকে এখন পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখী করা হয়নি কেন? এ প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না কেউ। নানান চিন্তা মাথায় আসে- তারপর আবার হেফাজতে ইসলাম প্রধান বলছেন- ‘মেয়েরা হচ্ছে তেঁতুলের মতো’ – যে মেয়েরা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছেন- তাদের সম্পর্কে এতো জঘন্য অপবাদ! যাবো কোথায়? মেয়ে হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি?
আবারো মাথায় চিন্তা! বিশ্বের কোনো দেশ কিছু বলেনি- কিন্তু পাকিস্তান কেন বলছে গোলাম আযম তথা যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ব্যাপার! এটা কি ‘ঠাকুর ঘরে কে রে- আমি কলা খাই না।’ আবার এই পাকিস্তানেই গোলাম আযমের পক্ষে প্রচন্ড বিক্ষোভ হচ্ছে! তাই আবারো ছেলেবেলায় পড়া সুকুমার রায়ের ‘বিষম চিন্তা’ কবিতাকে স্মরণ করেই বলছি-
“মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার-
… কতই ভাবি এসব কথার জবাব দেবার মানুষ কই?”
লেখক : মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মশিল্পী। সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কমান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও পরিচালক সঙ্গীত একাডেমী নিউইংল্যান্ড।