রানের হিসেবে বাংলাদেশের ওয়ানডেতে সবচেয়ে বড় জয় ১৮৩ রানের। সেই রেকর্ড টাইগারদের ভাঙার সুযোগ ছিল বৃহস্পতিবার। তবে অল্পের জন্য সেটা হয়নি। তারপরও রানের দিক থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয়টা পেল বাংলাদেশ।

তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা জিতল ১৭৯ রানে। ওয়ানডেতে যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় জয়। সঙ্গে দেশের মাটিতে ক্যারিয়ানদের বিপক্ষে চতুর্থ সিরিজ জয়ের আনন্দে মাতলেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগের বড় জয়টা ছিল ১৬০ রানের, ২০১২ সালে খুলনায়।
মিরপুরে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৯৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৯১ রান করেন সৌম্য। এ ছাড়া ৮০ রান করেন সাইফ। পরে বল হাতে ৩০ ওভার এক বলে ১১৭ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুটিয়ে দেয় টিম টাইগার্স।
২৯৭ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নেমে কখনোই স্বস্তিতে ছিল না ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশের স্পিনাররা উইকেট নেন নিয়মিতই। ৩০.১ ওভারে ১১৭ রানে অলআউট হয়েছে দলটি। সবগুলো উইকেটই পেয়েছেন স্পিনাররা। নাসুম আহমেদ ও রিশাদ হোসেন ৩টি করে, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানভীর ইসলাম ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান দলে থাকলেও একটি বলও করেননি।
এর আগে সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসানের ১৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটির ভিতে দাঁড়িয়েও ৩০০ করতে পারেনি বাংলাদেশ, থামে ২৯৬ রানে। তবে ওই রানটাই যথেষ্ট হয়েছে বড় জয় পেতে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়ে শুরু থেকেই স্পিন ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করে বাংলাদেশ। তবে দেখেশুনে খেলেন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার। জুটি ভাঙতে পঞ্চম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশকে। আলিক আথানজেকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন নাসুম। নিজের পরের ওভারে ফিরে আবারও উইকেটের দেখা পান নাসুম।
বাঁহাতি এই স্পিনারের এবারের শিকার আকিম অগাস্টে। তিন বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি এই টপ অর্ডার ব্যাটার। খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন ব্রেন্ডন কিং। থিতু হওয়ার আগেই এই ওপেনারকেও ফেরান নাসুম। ১৭ বলে ১৮ রান করে বোল্ড হয়েছেন তিনি।
গত ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জেতাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক শেই হোপ। তবে বৃহস্পতিবার তাকে সুযোগ দেননি তানভীর ইসলাম। ১৬ বল খেলে তিনি করেন ৪ রান। হোপের পথেই হেঁটেছেন শারেফানে রাদারফোর্ডও। ১২ রান করা এই ব্যাটার রিশাদের বলে মিরাজের হাতে ধরা পড়েন।
শুরুতেই ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। শেষদিকে জাস্টিন গ্রেভস-আকিল হোসেনরা পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেছেন। দশ নম্বরে নামা আকিলের ব্যাট থেকে এসেছে ২৭ রান। যা ইনিংসে কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে নেন নাসুম আহমেদ ও রিশাদ হোসেন। এ ছাড়া দুটি করে উইকেট নেন মিরাজ ও তানভীর।
এরআগে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান দুর্দান্ত খেলেন। শুরু থেকেই শট খেলা ও প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার তাড়না দেখিয়েছেন দুজন, যা কাজে লেগে গেছে দারুণভাবে। শুরুটা করেন সাইফ। আগের ম্যাচের ক্যারিবিয়ান নায়ক আকিল হোসেনকে প্রথম ওভারেই দুটি চার মারেন সাইফ, বাঁহাতি এই স্পিনারের পরের ওভারে মারেন ছক্কা।
একটু সাবধানে শুরু করা সৌম্যর প্রথম চার আসে ব্যাটের কানায় লেগে। একটু পর তিনি জেগে ওঠেন রোস্টন চেইসকে রিভার্স সুইপে ছক্কা মেরে। ১০ ওভারেই ৭৪ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। তাদের সৌজন্যে ৪৫ ইনিংস পর ওয়ানডেতে শতরানের শুরুর জুটি পায় বাংলাদেশ।
দুজনের জুটি শতরান পেরিয়ে দেড়শ ছাড়িয়ে এগিয়ে যায় আরও। আগের ম্যাচে ১০ ওভারে ১৪ রান দিয়েছিলেন যিনি, সেই আলিক আথানেজের প্রথম দুই ওভারেই আসে এ দিন ১৭ রান। শেষ পর্যন্ত ১৭৬ রানে শেষ হয় জুটি। ছয়টি করে ছক্কা ও চারে ৭২ বলে ৮০ রান করে আউট হন সাইফ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৬/৮ (সাইফ ৮০, সৌম্য ৯১, হৃদয় ২৮, শান্ত ৪৪, মাহিদুল ৬, রিশাদ ৩, নাসুম ১, সোহান ১৬*, মিরাজ ১৭; আকিল ১০-১-৪১-৪, চেইস ৮-১-৫৩-১, পিয়ের ১০-০-৪৬-০, গ্রেভস ৭-০-৬১-০, মোটি ৮-০-৫৩-১, আথানেজ ৭-০-৩৭-২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩০.১ ওভারে ১১৭ (আথানেজ ১৫, কিং ১৮, ওগিস ০, কার্টি ৩৫, হোপ ৪, রাদারফোর্ড ১২, চেইস ০, গ্রেভস ১৫, মোটি ৭, আকিল ২৭, পিয়ের ০; নাসুম ৬-১-১১-৩, মিরাজ ৭.১-০-৩৫-২, তানভির ৮-০-১৬-২, রিশাদ ৯-০-৫৪-৩)।
ফল: বাংলাদেশ ১৭৯ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: সৌম্য সরকার।
সিরিজ সেরা: রিশাদ হোসেন।

