না বুঝেই রূপচর্চা করতে গিয়ে অনেক সময় হয়ে যায় হিতে বিপরীত। রূপচর্চার ক্ষেত্রে কী কী এড়িয়ে যাওয়া উচিত, জানা থাকলে হবে না ত্বকের নানা সমস্যা। রূপবিশেষজ্ঞরা জানালেন রূপচর্চার ভুলভ্রান্তির কথা। হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা এবং হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ার ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি জানালেন রূপচর্চার নানা বিষয়।
সাধারণত ত্বকের চারটি ধরন রয়েছে। ত্বকের ধরনভেদে স্ক্রাবারও নানা রকম হয়ে থাকে। যেকোনো ধরনের ত্বকে সপ্তাহে দুই দিনের বেশি স্ক্রাব করা উচিত না। যাদের চামড়া খুব পাতলা ও ত্বক শুষ্ক, তাদের ১৫ দিন পরপর এক দিনের বেশি করা ঠিক না। কারণ, প্রতিদিন আমাদের ত্বকে যে মৃত কোষগুলো হয়, তা একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত জমে যাওয়ার পর তুলতে হয়। যদি প্রতিদিন স্ক্রাব করা হয়, তবে ত্বকের ভেতর আঁচড় কেটে যায়। ফলাফল ত্বকে স্বাভাবিকের তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি বলিরেখা পড়ে যায়। তৈলাক্ত ত্বকে মাইল্ড স্ক্রাবার ছাড়া অন্য কোনো স্ক্র্যাবার ব্যবহার না করাই ভালো। স্ক্রাব দুই থেকে তিন মিনিটের বেশি করা উচিত নয়।
শুষ্ক ত্বকে ফেসিয়ালের জন্য যেকোনো টকজাতীয় ফল যেমন: লেবু, মাল্টা, কমলা ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকে মধু ব্যবহার করলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। অ্যালোভেরা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ফুটন্ত পানিতে অ্যালোভেরা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে এরপর এর জেল্লা বের করে ত্বকে ব্যবহার করা উচিত। কাঁচা হলুদের রস বের করে জ্বাল দিয়ে তারপর ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়াও কাঁচা হলুদ সব ধরনের ত্বকের জন্য মানানসই নয়। কাঁচা হলুদের মধ্যে একধরনের তেল থাকে, যা আমাদের পরিবেশের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে পারে না। এ জন্য অনেক সময় হলুদ ব্যবহারের পর ত্বক কালো হয়ে যায়।
কাঁচা দুধ বা টকদই দিয়ে বানানো প্যাক ত্বকে ব্যবহার করা হলে অবশ্যই কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধোবেন। ফল বা ফলের রস দিয়ে তৈরি ঘরোয়া প্যাকগুলো ব্যবহারের পর মিনারেল পানি দিয়ে মুখ ধোবেন। কারণ, প্যাক ব্যবহারের পর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তখন অতিরিক্ত ক্লোরিনযুক্ত পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে ত্বকে বলিরেখা পড়ে যায়। ফলমূল দিয়ে বানানো ঘরোয়া প্যাক ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর্যন্ত বা শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে। তবে বাজার থেকে কেনা প্যাক সাধারণত ১৫ মিনিটের বেশি ব্যবহার করা ঠিক না। অবশ্যই প্যাকের গায়ে যেই সময় উল্লেখ করা থাকবে, তা অনুসরণ করতে হবে।
যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক হারবাল জাতীয় উপকরণ দুধ, মধু, টকদই বেসনের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত। দশ মিনিটের বেশি প্যাক লাগানো উচিত না। তৈলাক্ত ত্বকের প্যাক বা স্ক্রাবে মধু, বাদাম ব্যবহার না করাই ভালো। এতে করে ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে যেকোনো কিছু প্রথমে ত্বকের কিছুটা অংশে পরীক্ষা করে তারপর ব্যবহার করুন। প্যাক, ক্রিম বা লোশন সার্কুলার মোশনে ব্যবহার না করে নাক থেকে কান পর্যন্ত, থুতনি থেকে কানের লতি পর্যন্ত, কপাল থেকে নাক বরাবর সংযোগস্থান পর্যন্ত ব্যবহার করা উচিত। কারণ, সার্কুলার মোশনে ত্বকে প্যাক, ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করলে একপর্যায়ে এসে চোখে বা ঠোঁটের কোনে বলিরেখা পরে যায়।
টকদই তৈরি হয় ভালো ধাঁচের ব্যাকটেরিয়া থেকে। এই টকদই যদি মাথার ত্বকে ব্যবহার করা হয়, তবে ফাঙ্গাস পড়ে যেতে পারে। আবার টকদই ও ডিম একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ব্যবহার করলেও ঠিক একই ধরনের সমস্যা হতে পারে।
ঘরোয়া টোনার ব্যবহার করাই ভালো। কারণ, বাজারের টোনারগুলোতে ত্যালাপিন ও অ্যালকোহল থাকে। তাই বাজারের টোনার গোলাপজল বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করাই ভালো। কারণ, বাজারের টোনারে অ্যালকোহল বা অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে। তাই সরাসরি ব্যবহারে এই উপাদানগুলো ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। খালি হাতে টোনার ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, এতে করে টোনার লোমকূপ পর্যন্ত পোঁছাতে পারে না এবং এর ব্যবহারও কার্যকর হয় না। এ ছাড়াও টোনার সার্কুলার মোশনে বা ঘষে কখনোই ব্যবহার করা ঠিক না।
মাথার ত্বকের ধরন না জেনে যেকোনো পণ্য ব্যবহার করা উচিত না।
ভালো করে না জেনেশুনে ত্বকের কোনো পণ্য কেনা ঠিক না।
আমাদের দেশের পরিবেশ বিবেচনায় পাউডার জাতীয় সানস্ক্রিন ভালো কাজ করে। কারণ, এতে করে লোমকূপ সুরক্ষিত থাকে ও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ করে ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে না। তাই পাউডার জাতীয় সানস্ক্রিন ছাড়া ভিন্ন ধাঁচের সানস্ক্রিন ব্যবহার না করাই ভালো।
শীত ও গ্রীষ্মকালভেদে ত্বকের পণ্য ভিন্ন হয়ে থাকে। ত্বকের ধরন বুঝেই এই পণ্যগুলো ব্যবহার করতে হবে।