মোশাররফ হোসেন মুসা :: ঘাড় কাত মানুষদের নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে একটি গল্প প্রচলিত আছে; তা হলো- এক গৃহস্থ পরিবারের বড় ছেলে ঘোষণা দেয় তাকে যে বোঝাতে পারবে তাকে সে বলদ গরু দুটি দিয়ে দিবে। এতে বৃদ্ধ পিতা চিন্তিত হয়ে জানতে চান- গরু দিলে হাল চাষের কি হবে! পিতাকে আশ্বস্ত করে ছেলের উত্তর- ‘আমি বুঝলে তো!’ যুগ যুগ ধরে রাজনীতিতেও অনুরূপ ঘাড় কাত করা লোকের সমাগম রয়েছে। তবে তাঁরা বাম কাত ও ডান কাতে বিভক্ত রয়েছেন। যাদের ঘাড় ডানদিকে কাত করা তাদের বিশ্বাস একটাই- ধর্মের মধ্যেই সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে। তারা কৌশলগত কারণে মাঝে মধ্যে ঘাড় কিঞ্চিত সোজা করলেও বাম দিকে কাত করেছেন এমন ঘটনা বিরল। কিন্তু যাদের ঘাড় বাম দিকে কাত করা তারা স্থির থাকেন কম। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য- এ অস্থিরতার পিছনে রয়েছে প্রগতিশীলতার সম্পর্ক। এ শিবিরের জনৈক তাত্মিকের ঘাড় কাত করা স্বভাব নিয়ে বহুল আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। যেমন- মনীষীরা বহু আগেই বলেছেন- ‘ধর্ম থেকে ইহজাগতিক দর্শনকে পৃথক না করলে প্রগতি থাকে না।’ তিনি বলেন- ‘ঐশি ধর্মের বেলায় এ যুক্তি প্রযোজ্য নয়।’ তাবৎ কৃষি বিজ্ঞানীর মতে- অধিক জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বীজ গ্রহণের বিকল্প নেই। তিনি বলেন- ‘এতে মানুষের দেহে ক্ষতিকর উপাদান যোগ হচ্ছে। কেবল সনাতন পদ্ধতিতেই বিষমুক্ত খাদ্য পাওয়া সম্ভব।’ সুফি সাধকরা দীর্ঘদিন যাবৎ বলে আসছেন- ‘আধ্যাত্মিকতাবিহীন ধর্ম উগ্রতা নিয়ে আসে। তিনি বলেন- ‘রাজনীতি বিহীন আধ্যাত্মিকতা অর্থহীন।’ সুফি সাধকরা আরও বলেছেন- ‘আউল-বাউলদের জন্য প্রয়োজন বড় বড় দীঘি আর বটবৃক্ষ।’ তিনি এক সাধকের মাজারের পাশে অফিস খুলে বয়ান দিচ্ছেন- ‘সর্বাগ্রে তাদেরকে ধূম্র জাতীয় উপাদেয় ত্যাগ করতে হবে। বাউল তত্ত্ব বুঝতে হলে চেয়ার-টেবিলে বসতে হবে।’ তাঁর এসব তত্ত্ব এতদিন তেমন কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে নি। কিন্তু সম্প্রতি একটি নয়া তত্ত্ব হাজির করে সরাসরি ডান দিকে ঘাড় কাত করে গোল বাধিয়েছেন (শোনা যায়- কতিপয় রাজনীতিকের মুখে গণহত্যা, নাস্তিকতা আর নষ্টামির যে গল্প শোভা পাচ্ছে সেটার পিছনে নাকি তারই কারসাজি রয়েছে)। তিনি বলেছেন- ‘একটি দল যদি বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতির অপব্যবহার করে ক্ষমতায় যেতে পারে, তাহলে অপর পক্ষেরও ধর্মকে অপব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়ার অধিকার রয়েছে।’ তার নিশ্চয় জানা রয়েছে- যারা ধর্মের মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান খোঁজেন তারা ধর্মতাত্মিক বৈ অন্য কিছু নন। বিধায়, তিনি ধর্মপন্থীদের পক্ষাবলম্বন করে দার্শনিকতার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
লেখক : গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক
ঈশ্বরদী, পাবনা।