যে-কোনো দেশেরই মূল চালিকাশক্তি তরুণ জনগোষ্ঠী। তাই একটি দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য তরুণ-সমাজকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি (Sustainable Development Goal) অর্জনের জন্য তাই তরুণদের বিষয়টিও প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তরুণদের সরাসরি সম্পৃক্ত করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। আর ২০৪১ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে ২১ কোটি। তখন যুবাদের সংখ্যা তুলনামূলক হারে কমে যাবে। তাই তরুণ সম্প্রদায়ের পেছনে বিনিয়োগের এখনই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময়। এসডিজি অর্জন করতে হলে তরুণ ও শিশুদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এখন যার বয়স ৫-১০ বছর, ২০৩০ সালে তার বয়স হবে ২০-২৫ বছর। ২০৩০ সালে তার জন্য গুণগতমানের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হলে এখনই ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের নার্সিং করতে হবে।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে গত ৩০-৪০ বছরে শিক্ষার গুণগত, পরিমাণগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু প্রায়োগিক শিক্ষার ক্ষেত্রে তেমন জোর দেওয়া হয় নি। কারিগরি শিক্ষার চেয়ে সাধারণ শিক্ষার দিকেই মনোযোগ ছিল সবগুলো সরকারের। সাধারণ শিক্ষা দিয়ে কি সবার কর্মসংস্থান সম্ভব? কারিগরি শিক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা দেশে নেই। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি অন্যতম একটি প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে আমার বিশ্বাস। উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, তাদের তরুণ-সমাজের বেশিরভাগই কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। উচ্চশিক্ষায় যারা যায় তাদের মূল ফোকাস থাকে গবেষণা কিংবা নীতি-নির্ধারণী বিষয়গুলোতে। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষায় আবার মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক কম। এটিও এসডিজি অর্জনে অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
চলতি বছরের (২০১৬) জানুয়ারি থেকে এসডিজির কার্যক্রম শুরু হলো। ১৫ বছরের জন্য অর্থাৎ ২০৩০ সাল পর্যন্ত এসডিজির মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা আছে ১৭টি। আর টার্গেট রয়েছে ১৬৯টি। বাংলাদেশ এরই মধ্যে এমডিজিতে (মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) সাফল্য অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এসডিজিতেও সাফল্য অর্জন করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এসব সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও মাথায় রাখতে হবে।
১৭টি এসডিজির মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুধামুক্তি, খাদ্যনিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টির লক্ষ্য অর্জন, টেকসই কৃষিব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা, সব বয়সের সবার কল্যাণে কাজ করে যাওয়া, অন্তর্ভুক্তি ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, আজীবন শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা, লিঙ্গসমতা অর্জন, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি অন্যতম।
এসডিজি বাস্তবায়নে শিশু ও তরুণদের ভূমিকার কথা বারবার বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে মানবসম্পদকেও খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এসডিজিতে। এমডিজি বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Millennium Development Goal) থেকে এসডিজির কাজের পরিসর ব্যাপক। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ রয়েছে। তার মধ্যে অতিদারিদ্র্য কমানো, বৈষম্য দূর করা, গুণগত শিক্ষা, জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলা ইত্যাদি অন্যতম।
বাংলাদেশে এসডিজির পরিকল্পনাগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেটি এখন একটি বড় ইস্যু। এর জন্য বিশ্ব অংশীদারি প্রয়োজন। সামর্থ্য এবং সক্ষমতা বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন। এছাড়া এসব লক্ষ্য অর্জন হবে সুদূর পরাহত। এমডিজির পর এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে তরুণ-সমাজকে বেশি বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। তা না হলে এসডিজি বাস্তবায়ন পুরোপুরি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কারণ এসডিজির অনেকগুলো টার্গেটই সরাসরি তরুণদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আর যেহেতু তরুণরা সমাজের একটা বিশাল জনগোষ্ঠী তাই তাদের এতে সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। টেকসই উন্নয়নের জন্য তরুণদের মধ্যে প্রায়োগিক ও কারিগরি শিক্ষা অর্জনের দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। এর ফলে লক্ষ্য অর্জন অনেকখানি সহজতর হবে বলে মনে করি।
লেখক : বার্তাবাংলা’র প্রধান সম্পাদক