উপরে দেয়া ছবিটির ইতিহাস বেশ পুরনোই বলা যায়। ১৯৭৫ সালের ছবি এটি। বজ্রপাতের ঠিক আগ মুহূর্তে এই দুই ভাইয়ের চুলের অবস্থা এমনটাই হয়ে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে ঘটেছিল ঘটনাটি। বজ্রপাতের শিকার হয়ে এদের মধ্যে ১৮ বছরের বড় ভাই বেঁচে থাকলেও মারা যায় ১২ বছরের ছোট ভাইটি।
বজ্রপাত যখন আছড়ে পড়ে তার ঠিক আগ মুহূর্তে সেখানে থাকা মানুষের চুলগুলো এভাবেই উপরের দিকে উঠে যেতে চায়। বলা হয়, এটাই ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগটির শেষ সতর্কবার্তা। ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট এ নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি নিউজে একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে যে ভাইটি বেঁচে আছে তার নাম ম্যাককুইলেন। বর্তমানে তার বয়স ৫৬ বছর।
সে সময়ের কথা স্মরণ করে ম্যাককুইলেন বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সিকোইয়া ন্যাশনাল পার্কের মরো পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল ছোট ভাই শন, বোন মেরি এবং বন্ধু মারজি। চূড়ায় ওঠার পরই বুঝতে পারলেন আবহাওয়া খারাপ হয়ে আসছে এবং তাদের চুলগুলো খাড়া হয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে কৌতূহল বশত কয়েকটি ছবি তুলে নেয় মেরি।
ম্যাককুইলেন তার ব্লগে লেখেন, তিনি বাতাসে তার বাহু তুলে ধরেন। খুব জোরে বজ্রপাতের শব্দ হয়। হঠাৎ করেই স্থানটির তাপমাত্রা কমে যেতে থাকে। তার ভাষায়, ‘উজ্জ্বল আলোর মতো কিছু একটা সব গ্রাস করে নিয়ে গেল।’ এরপরই তার মনে হলো, সময় কমে আসছে। নিজেকে ওজনহীন মনে হতে থাকে ম্যাককুইলেনের।
তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসেন কুইলেন। এমন সময় মনে পড়ে ছোট ভাইয়ের কথা। তিনি দেখলেন, বজ্রপাতের স্থানটিতে স্থির হয়ে আটকে আছে ছোট ভাই শন। কুইলেন লেখেন, ‘শন পুরোপুরি বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল। ওর দুটি হাঁটু জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিল। ওর পিঠ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। আমি ছুটে গিয়ে শনের শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করলাম। ও তখনো জীবিত।’
সঙ্গে সঙ্গে নিজের ভাইকে নিচে নামিয়ে আনেন কুইলেন। শনের শরীরের তিনভাগের একভাগ পুড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আর বাঁচানো যায়নি তাকে। এদিকে কুইলেনের নিজের শরীরটাও পুড়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। দীর্ঘ ছয় মাস কোমায় থেকে অবশেষে জ্ঞান ফিরে তার। ততদিনে অনেক কিছুই বদলে গেছে।
রসিকতা করে কুইলেন বলেন, ‘ওই বজ্রপাত আমাকে কিংবা আমার ভাইকে কোনো ‘সুপার পাওয়ার’ দেয়নি। তবে এক ধরনের সম্মান দিয়েছে। কারণ এমন একটা মুহূর্তের সাক্ষী আমি। আর কখনোই কোনো পাহাড়ে চড়ার ইচ্ছা নেই আমার!’
কখনো কখনো বজ্রপাত দেখতে অনেক সুন্দর। তবে কখনো আবার ঘাতক। এক জরিপে দেখা যায়, ১৯৮২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর গড়ে ৫৪ জন লোক মারা যায়। তবে পরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ বিষয়ে সচেতনতার প্রসার ঘটায় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ২০১১ সালের পর থেকে দেশটিতে প্রতি বছর গড়ে ২৬ জন লোক মারা যায়।
বজ্রপাতের সময় জরুরি হলো নিরাপদ স্থানে অবস্থান। আপনার এবং আপনার পরিবার নিরাপদে থাকুক। এ–সংক্রান্ত কয়েকটি পরামর্শ :
১। খোলা জায়গায় কোনো বড় গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। গাছ থেকে কমপক্ষে ৪ মিটার দূরে থাকতে হবে
২।যথাযথ বজ্রনিরোধক দণ্ড ব্যবহার করতে হবে
৩।ঘরের ভেতরে আশ্রয় নিতে হবে
৪।বজ্রপাতের সময় মুঠো ফোন বন্ধ রাখুন
৫। ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকতে হবে
৬। বৈদ্যুতিক তার বা খুঁটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে
নিচু হয়ে নৌকার পাটাতনে যথাসাধ্য কম স্পর্শ রেখে অবস্থান নিতে হবে