
রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তার প্রথম উত্থান ব্রাজিলের ত্রাতা হিসেবে স্বীকৃত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার হাত ধরে।
তবে রাজনৈতিক জীবনে তিনি আপোসহীন নেতা। দুর্নীতিকে কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করেছেন। এক সময়ের তুখোড় গেরিলা নেতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে কঠোর ন্যায়নিষ্ঠতার প্রতীকে পরিণত হন। বামধারার রাজনীতিকে জনপ্রিয় করার জন্য তার দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে তার নামের আগে যুক্ত হয়েছে ‘আইরন লেডি’ অর্থাৎ লৌহ মানবী।
অনেক সংস্কারমূলক কাজে সফল হলেও রুসেফের সমালোচকরা দাবি করেন, লুলা দা সিলভার সঙ্গে রুসেফের তুলনা হয় না। বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়ে লুলা ব্রাজিলীয়দের ভাগ্য উত্তরণে যতটা আশার প্রতীকে পরিণত হন, রুসেফ সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। ফলে লুলার সমর্থন ছাড়া রুসেফ কোনো মতে রাজনৈতিক মঞ্চে সফল হতে পারতেন না।
এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে থেকে দ্বিতীয়বার নির্বাচনে জয়ী হলেন রুসেফ। রোববারের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্য ডানপন্থি দলের নেতা অ্যাসিও নেভেসকে হারিয়ে প্রেসিডেন্টের মসনদ দখলে রাখেন তিনি। জয়ের পর রুসেফ বলেন, ‘আমি এখনো পর্যন্ত যতটা ভালো প্রেসিডেন্ট, দ্বিতীয় মেয়াদে তার চেয়েও ভালো প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
আইরন লেডি রুসেফ তার মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যকে দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কার করেন। নিরপেক্ষ তদন্ত করে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর থেকে তার জনপ্রিয়তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
কিন্তু রুফেসের উত্থানের পেছনে রয়েছে আরো বড় ঘটনা। এক লাফে মগ ডালে ওঠার মতো হঠাৎ তিনি রাজনীতির আকাশে নক্ষত্র হয়ে ওঠেন। লুলা ক্ষমতায় থাকার সময় তার প্রধান সহযোগী, যাকে বলা হতো ব্রাজিলের ভবিষ্যৎ নেতা, সেই জোস ডিরসিউকে বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করানোর পর ভাগ্য খুলে যায় রুসেফের। লুলার বিকল্প হয়ে ওঠেন রুসেফ।
তবে বর্তমানে রুসেফের কিèন ইমেজে কলঙ্কের কালি লাগাতে তৎপরতা শুরু করেন তার বিরোধীরা। রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাস নিয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিরোধী দলগুলো। এ বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির প্রাক্তন পরিচালক অভিযোগ করেন, ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রুসেফ কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরসের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তেল বিক্রির একটি চুক্তি করিয়ে দিয়ে তারা কমিশন নিয়েছেন। কিন্তু রুসেফ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। এর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণও হাজির করতে পারেননি কেউ।
দিলমা রুসেফের জন্ম ১৯৪৭ সালে ব্রাজিলের বেলো হরিজন্তের একটি উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে। তার বাবা পেড্রো রুসেফ ছিলেন বুলগেরিয়া থেকে আসা কমিউনিস্ট নেতা। বাবার কাছ থেকে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন।
কিন্তু ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছা ছিল ব্যালে অভিনেত্রী হওয়ার। এ সুযোগ হাতের মুঠোয় চলে আসে বামপন্থি রাজনীতিতে অনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়ার পর। তবে ইচ্ছা পূরণে খুব বেশি মনোনিবেশ করতে পারেননি তিনি। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে নেমে পড়েন তরুণী রুসেফ। ১৯৬৪ সালে ব্রাজিলের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী।
১৯৭০ সালে তিনি সেনাশাসনবিরোধী আন্ডারগ্রাউন্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলার অভিযোগে গ্রেফতার হন। তার তিন বছরের কারাদ- হয়। কারাবাসের সময় সেনারা তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। তারপরও তিনি সেনাবিরোধিতা থেকে সরে আসেননি।
রুসেফের বিচারের সময় সেনাপন্থি আইনজীবী ও বিচারক তাকে ‘নাশকতার সন্যাসীনী ’ বলে অভিহিত করেন। ফলে সাজা ভোগের সময় তার ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে। ২০০৯ সালে ধরা পড়ে তার লসিকা-সংক্রান্ত ক্যান্সার। যা ওই নির্যাতন ভোগের ফল। এর পরেও ওই বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। প্রথম মেয়াদে ক্ষমতার চার বছর পর ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জয়ী হয়ে তিনি তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছেন।