বার্তাবাংলা ডেস্ক :: ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মাত্র আট বছরের এক শিশু ইংরেজিতে অনুবাদ করছে পুরো রামচরিতমানস। এবং এ অনুবাদের কাজ সে হাতে নিয়েছিল মাত্র আট বছর বয়সে, যখন সে মাত্র প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। রামচরিতমানস ‘অবধি’ ভাষায় লিখিত ষোড়শ শতকের এক মহাকাব্য যার রচয়িতা প্রাচীন কবি তুলসিদাস গোস্বামী।
আশ্চর্য মেয়েটির নাম পলক অবস্তি, তার বাড়ি ভারতের মধ্যপ্রদেশের রতলম জেলায়। বর্তমানে সে রতলমের তেগ বাহাদুর স্কুলের চতুর্থে শ্রেণিতে পড়ে।
যে বয়সে শিশুদের পড়ার বইয়ে মন বসে না, জানালা দিয়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে খেলার সাথীদের কাছে চলে যায়, সে বয়সে এমন অসম্ভব অধ্যবসায়কে কী করে পলক আয়ত্ব করলো সে এক আশ্চর্য।
জানা যায়, প্রতিদিন ভোর চারটা ত্রিশ মিনিটে বিছানা ছাড়তো মেয়েটি। অতঃপর পরিবারের শিক্ষা অনুযায়ী ভগবান হনুমানের অর্চনা শেষ করে এক ঘণ্টার জন্যে বসতো তুলসিদাসের রামচরিতমানস নিয়ে। চলতো প্রাচীন সেই ভাষাকে বিন্দু বিন্দু করে অক্ষরে অক্ষরে ইংরেজিতে রূপান্তরের কাজ। বিগত তিন বছরে তার একটুও ব্যতয় ঘটেনি। এরই মধ্যে সে মহাকাব্যটির সাতটি কাণ্ডের চারটি কাণ্ড ইংরেজিতে অনুবাদ করে ফেলেছে। কান্ডগুলো হলো, বাল্য কাণ্ড, অযোধ্যা কাণ্ড, অরণ্য কাণ্ড, কিস্কিন্ধা কাণ্ড। বাকি আছে সুন্দর কাণ্ড, লঙ্কা কাণ্ড, উত্তর কাণ্ড। পলক আশা করছে এ বছরই বাকি কাণ্ডগুলোর ভাষান্তর শেষ হবে।
ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া পলককে প্রশ্ন করেছিল, কেন সে এতো বড় কাজে হাত দিলো, কোথা থেকে এ অনুপ্রেরণা পেলো। জবাবে পলক যা বললো তা চমকপ্রদ।
তার ভাষ্য, ‘যখন আমি প্রথম শ্রেণিতে পড়ি, তখন অনেকের কাছ থেকেই একটা কথা বহুবার শুনেছি, তা হলো, ইংরেজি ভাষার বহুল ব্যবহারের যুগে তারা ক্রমেই নিজেদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আর ধর্মের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই ইংরেজিতে পুরো রামচরিতমানস অনুবাদ করে ফেলবো, তাতে করে যারা ইংরেজিতে কথা বলেন, ইংরেজির চর্চা করেন, তারা তাদের বিশ্বাস, ধর্ম ও সংস্কৃতির কাছাকাছি থাকতে পারেন।’
পলকের পরিবার বিষয়টি নিয়ে গর্বিত এবং সমগ্র ভারত এ বিস্ময়বালিকার আলোচনায় রীতিমতো মুখরিত।
পলকের বাবা মা এসেছেন উত্তর প্রদেশের উরাইবা জেলা থেকে, পলক তাদের একমাত্র সন্তান। আরও ছোটবেলা থেকেই সে ছবি আঁকায় পটু এবং রামচরিতমানসে আঁকা ছবিগুলো তাকে ভীষণ প্রভাবিত করে। বাবা মায়ের উৎসাহে রামায়নের বিভিন্ন কাণ্ডের দৃশ্যায়ন সে রংতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছে এর আগে যা সর্বশেষ রামায়নের ইংরেজি রূপান্তরে হাত দেবার উত্তম মানসিক ভিত্তিভূমি হিসেবে কাজ করেছে। পলকের মা মনে করেন, স্বয়ং রাম এবং হনুমান তার ছোট্ট মেয়েকে নিবিঢ় তত্ত্বাবধায়নে রেখেছেন। যে কারণে তার এমন ‘ঐশ্বরি ‘ প্রভা ছড়াতে পারছে তার মেয়ে।
পলক অবস্তির এ কাজে প্রণোদনা যোগাতে রামভক্তেরা চলে এসেছে ইতোমধ্যেই। রূপান্তর সম্পন্ন হলে তারা এটিকে পূর্ণ বইরূপে প্রকাশ করতে আগ্রহী।