বার্তাবাংলা রিপোর্ট :: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত তথা দুবাই যেতে এক মাসের ভিজিট ভিসা পেয়েছেন। সরকারি দায়িত্ব পালনের জন্য তিন মাসের ভিসা পাননি। তাই ভিজিট ভিসায় গেলে তাদের আবার দেশে এসে দুবাই যেতে হবে। অন্যদিকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সরবরাহের জন্য নির্বাচিত মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান আইরিশ করপোরেশন বেরহাডের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এ ব্যবসা করার অনুমোদন নেই। দেন-দরবার করেও তারা দুবাইতে ব্যবসা করার অনুমোদন পাননি। এমন অবস্থায় সেখানে বসবাসরত প্রবাসীদের এমআরপি দেয়া নিয়ে ঝামেলার মুখে পড়েছে সরকার। এ নিয়ে এখন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন ২৩ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলছে নানা আলোচনা- পর্যালোচনা। পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত জুনে ইউএই-তে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য এমআরপি তৈরি করতে মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান আইরিশ করপোরেশন বেরহাডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ সরকারের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। চুক্তি অনুযায়ী সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের এমআরপি দিতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ এবং পাসপোর্ট বিতরণের কাজ করবে মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান বেরহাড। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলা হয়, এ চুক্তির মাধ্যমে সে দেশে বসবাসরত বাংলাদেশীরা আরও সহজে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ও ঝামেলামুক্ত পন্থায় এমআরপি পাবেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইরিশ করপোরেশন বেরহাডের এমডি দাতো হামদান আবাদি ও বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মাবুদ। তবে চুক্তির পর থেকে ঝামেলা যেন সরকারের পিছু ছাড়ছে না। দুবাইতে দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তাদের আলাদা আলাদা টিমের সরকারি আদেশ জারির পর থেকে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএই বিভিন্ন রাজ্যে সব মিলিয়ে ২৩ লাখ ১৭ হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন। সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী আছেন দেশটিতে। এ কারণে রেমিট্যান্স আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস ইউএই। সেখানে শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন রকম পেশায় কর্মরত মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও অনেক বাংলাদেশীর বড় রকমের ব্যবসাও রয়েছে। বর্তমানে এমআরপি ও ভিসা জটিলতার কারণে তারা গুরুতর সমস্যায় পড়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের ব্যবসার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। দুবাইয়ে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী জানান, সরকারের হঠকারিতার কারণে ইউএইতে থাকা লাখ লাখ বাংলাদেশী এখন ভাগ্য বিপর্যয়ের মুখে। অথচ ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০-এর স্বাগতিক দেশ হিসেবে দুবাইকে সমর্থন দেয়ায় নেপাল ৩ লাখ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এর চেয়ে বেশি সুযোগ নিতে পারতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের সরকার ওই পথে অগ্রসর হয়নি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক কর্মকর্তা এমিরেটস এয়ারলাইন্সযোগে দেশে আসার সময় দুবাইতে ট্রানজিটে থাকেন। অনেকেই চান একদিন বা কয়েক দিনের ভিসা নিয়ে দুবাইতে কাটিয়ে দেশে ফিরতে। ওই সুযোগও পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। যদিও আগে এমিরেটস এয়ারলাইন্সে দেশে ফিরলে এ সুযোগ নিতে কোন সমস্যা পোহাতে হতো না। বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ছাড়া অন্য কোন দেশের নাগরিকদের এটা কোন সমস্যা নয়। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশী নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের মালিকানাধীন এয়ারলাইনের (এমিরেটস, ফ্লাই দুবাই বা ইতিহাদ) যাত্রী হিসেবে বৃটেন, আমেরিকা বা কানাডা ভ্রমণ করলে, তাদের শর্তসাপেক্ষে ৯৬ ঘণ্টার ট্রানজিট ভিসা দেয়া হতো। এরই মধ্যে এ ভিসাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে সরকার সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের পাশাপাশি সবাইকে নিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
মন্তব্য যুক্ত করুন