বার্তাবাংলা রিপোর্ট :: তথ্য প্রযুক্তির যুগে দিনদিন সাইবার অপরাধ বাড়ছে। তাই সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এ বিষয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। দৈনিক ভোরের কাগজ ও চিফ টেকনলোজি অফিসার্স (সিটিও) ফোরামের যৌথ উদ্যোগে গতকাল রোববার আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। সন্ধ্যায় ভোরের কাগজ অফিসের কনফারেন্স রুমে ওই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ‘সাইবার সিকিউরিটি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। দিনদিন সাইবার ক্রাইম যেভাবে বাড়ছে তাতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে তা মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান সরকারের যে পথ চলা শুরু হয়েছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির যুগে সাইবার ক্রাইমকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কারণ, আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করছি। এখানে সাইবার অপরাধ মোকাবেলার প্রস্তুতি না থাকা আর দরজা জানালা খুলে ঘরে বসবাস করা একই কথা। কোনোভাবেই সাইবার অপরাধীদের সরকার সুযোগ দিতে চায় না বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব এন আই খান বলেন, কেবল নিরাপত্তার কথা বললেই চলবে না। বিদেশ থেকে সফটওয়্যার কিনে আনলে কতটা ব্যয়সাশ্রয়ী তা দেখতে হবে। সেফ কোডিংয়ের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এটা করতে পারলে সাইবার নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত হবে। এ বিষয়ে আমরা ফান্ড দিতে প্রস্তুত আছি। সাইবার নিরাপত্তার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ভিজিলেন্স টিম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ টিম করে কতটা লাভ হবে তা নিয়েও একটি গবেষণা প্রয়োজন। নিরাপত্তা বাড়াতে প্রতিরোধকমূলক ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজ করবে সুশাসন।
সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকার তার মূলপ্রবন্ধে বলেন, আমরা যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করি তা অনেক সময়ই পাইরেটেড হওয়ায় সাইবার নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, গুগল, ইয়াহু, প্যান্টাগনের মতো সাইটও শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হ্যাক হচ্ছে। তবে সচেতন হলে হ্যাকিং থেকে অনেকসময়ই বাঁচা সম্ভব। এন্টিভাইরাস ব্যবহারসহ শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার সাইবার অপরাধের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, প্রত্যেকটি বিষয়েরই ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক রয়েছে। সাইবার জগতও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে নিরপত্তাহীতার ভয়ে পিছিয়ে থাকলে চলবে না। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানি ছড়িয়ে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধমন্দির পোড়ানোর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, প্রায় দু বছর হতে চললেও এ ঘটনায় কোনো অপরাধী এখন পর্যন্ত সাজা পায়নি। সাংবাদিক শ্যামল দত্ত আরও বলেন, আমরা এখন প্রযুক্তির মহাসড়কে আছি। এই প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জও অনেক। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
আইসিটি বিভাগের যুগ্মসচিব শ্যামা প্রসাদ বেপারী, সিটিও ফোরামের ভাইস-প্রেসিডেন্ট নওয়েদ ইকবাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট দেবদুলাল রায়, সিটিও ফোরামের কোষাধ্যক্ষ ড. ইজাজুল হক, এয়ারটেল বাংলাদেশের সিআইও লুৎফুর রহমান, সিসিএ বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগের জি ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, বিডাব্লিউআইটির প্রেসিডেন্ট লুনা সামসুদ্দোহা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্মসচিব মোঃ বিল্লাল হোসেন, বেসিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মেট্রোনেটের সিইও সৈয়দ আলমাস কবীর, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মোঃ আরিফুর রহমান, লঙ্কাবাংলার কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।