বার্তাবাংলা ডেস্ক »

google scolarshipবার্তাবাংলা রিপোর্ট ::  নারীদের প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলার জন্য গুগল প্রতিবছরই বিশেষ একটি শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে থাকে। এ বছরেও শুরু হয়েছে ‘দ্য গুগল অনিতা বর্গ মেমোরিয়াল স্কলারশিপ’ শিরোনামের এই শিক্ষাবৃত্তির কার্যক্রম। গত বছর থেকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে এই শিক্ষাবৃত্তি।

বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের প্রযুক্তি বিষয়ক উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করে থাকে বড় সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই। ব্যতিক্রম নয় গুগলও। গুগল কোডজ্যাম, গুগল ডুডল, গুগল সায়েন্স ফেয়ার প্রভৃতি নানা ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তরুণ প্রতিভার সন্ধান করে থাকে তারা। পাশাপাশি তরুণদের শিক্ষাবৃত্তি নিয়েও তাদের রয়েছে একটি বাত্সরিক আয়োজন। নারী শিক্ষার্থীদের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার এই আয়োজনের নাম ‘দ্য গুগল অনিতা বর্গ মেমোরিয়াল স্কলারশিপ’।
একজন অনিতা বর্গ
মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী অনিতা বর্গ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৯ সালের ১৭ জানুয়ারি। ছোটবেলা থেকেই গণিত ভালোবাসতেন অনিতা। তবে প্রোগ্রামিংয়ে তার আগ্রহ গড়ে ওঠায় পড়ালেখা করেন কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়েই। ১৯৬৯ সালে প্রোগ্রামিংয়ের একটি চাকরিও পান তিনি। ১৯৮১ সালে তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল অপারেটিং সিস্টেমের সিনক্রোনাইজেশনের দক্ষতা। এরপর কম্পিউটার বিজ্ঞানের নানা শাখা নিয়েই কাজ করেন অনিতা। তবে তার নামে একটি স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি চালু করার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে নারীদের প্রযুক্তি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ। ইনস্টিটিউট ফর ওম্যান অ্যান্ড টেকনোলজি (বর্তমানে অনিতা বর্গ ইনস্টিটিউট ফর ওম্যান অ্যান্ড টেকনোলজি) নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি নারীদের প্রযুক্তি শিক্ষায় আগ্রহী করার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই প্রযুক্তি দ্বারা প্রভাবিত। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে যারা প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষায় অধ্যয়নরত ছিলেন, তাদের অনেকেই অনিতার সংস্পর্শে এসে নিজের জীবনকে বদলে নিতে পেরেছিলেন। বলা যায় প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণের এক বৈপ্লবিক কর্মসূচি ছিল তার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান। এর বাইরেও তিনি নারীদের জন্য আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সাথেও যুক্ত ছিলেন। তার প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানা পুরস্কারও লাভ করেন অনিতা বর্গ। ২০০৩ সালের ৬ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন অনিতা। অনিতা বর্গের তৈরি ইনস্টিটিউটের তথ্য পাওয়া যাবে www.anitaborg.org ঠিকানায়।
অনিতা বর্গের নামে গুগল’র শিক্ষাবৃত্তি
অনিতা বর্গ তার কর্মজীবনের পুরোটাতেই চেষ্টা করে গেছেন নারীদের প্রযুক্তি শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে আগ্রহী করে তোলার। অনিতা মনে করতেন প্রযুক্তি খাতে নারীদের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তার ভিশন ছিল ‘৫০/৫০ বাই ২০২০’। যার অর্থ হলো ২০২০ সালের মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের অর্ধেক হবে নারী। এখনও পর্যন্ত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নারীরা কম্পিউটার বিজ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের পুরুষদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অনিতার চিন্তাধারার সাথে গুগল’র চিন্তাধারাও মিলে যায়। আর সে কারণেই অনিতা বর্গের স্মরণে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য গুগল ২০০৪ সাল থেকে চালু করে ‘দ্য গুগল অনিতা বর্গ মেমোরিয়াল স্কলারশিপ’ প্রোগ্রামটি। গুগল আশা করে, বিশ্বব্যাপী নারীরাও কম্পিউটিং এবং প্রযুক্তি বিষয়ে উত্কর্ষ সাধনে সক্ষম হবে এবং তারাও এই খাতে নেতৃত্বের স্থানে উঠে আসবে। এর আগে এশিয়া, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের জন্য আলাদা করে অনিতা বর্গ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছে গুগল। গত বছর থেকেই আলাদা করে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য এই বৃত্তি প্রদান শুরু করেছে গুগল।
এ বছরের জন্য এই আবেদনের শেষ তারিখ ১৮ মে, ২০১৪। আবেদনপত্র গ্রহণ শুরু হবে ১ মে, ২০১৪ তারিখ থেকে।
যা রয়েছে শিক্ষাবৃত্তিতে
নারী শিক্ষার্থীদের জন্য গুগল’র এই শিক্ষাবৃত্তিতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচের জন্য বৃত্তি প্রদান করবে গুগল। এই অঞ্চলের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে প্রদান করা হবে এই বৃত্তি। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা খরচের জন্য একটি আর্থিক অনুদান ছাড়াও নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ করার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গুগল অফিসে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা, সংলাপ, সামাজিক কার্যক্রমসহ নানা ধরনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে নির্বাচিতদের জন্য।
যারা আবেদন করতে পারবেন
এই শিক্ষাবৃত্তিতে আবেদন করতে পারবেন কেবলই নারী শিক্ষার্থীরা। বৃহত্তর চীন ছাড়া এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত সকল নারী শিক্ষার্থীই আবেদন করতে পারবেন এই বৃত্তির জন্য। আবেদনকারীকে কম্পিউটার বিজ্ঞান, কম্পিউটার প্রকৌশল এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধ্যয়নরত হতে হবে। প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলীই হবে এই বৃত্তির জন্য মনোনীত হওয়ার মূল চাবিকাঠি। তাছাড়া কম্পিউটার বিজ্ঞানে নারীদের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করার মানসিকতাও থাকতে হবে।
যেভাবে আবেদন করতে হবে
এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন করতে হলে অনলাইনে https://services.google.com/fb/forms/anitaborg2014applicationasiapacific ঠিকানায় গিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। প্রার্থীর ব্যক্তিগত এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ফরমটি পূরণ করতে হবে। এর জন্য যেসব তথ্যের প্রয়োজন হবে তার মধ্যে রয়েছে—প্রার্থীর নাম, ইমেইল, ফোন নম্বর, নাগরিকত্ব, পড়ালেখার পর্যায় ও বিষয়, অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রভৃতি তথ্য।
এ ছাড়াও প্রয়োজন হবে প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত এবং ট্রান্সক্রিপ্টের ডিজিটাল কপি। এই দুইটি ডক্যুমেন্টের ডিজিটাল কপির ক্ষেত্রে পিডিএফ ফরম্যাটকেই মূলত প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। এর বাইরে এই বৃত্তির সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে একটি প্রবন্ধও যুক্ত করতে হবে। এই ডক্যুমেন্টগুলো আবেদনের সাথে যুক্ত করতে এগুলোকে গুগল ড্রাইভে আপলোড করে সেটি সকলের জন্য শেয়ারের উপযোগী করে লিংক তৈরি করে সেই লিংকটি সংশ্লিষ্ট স্থানে বসিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সব তথ্য সংযোজন করে আবেদনের ওয়েবপেজের শেষের দিকে Terms & Conditions অংশের শেষে I agree রেডিও বাটনে ক্লিক করে Submit বাটনে ক্লিক করতে হবে।
আরও যা জানা প্রয়োজন
আবেদনপত্রের সাথে অফিশিয়াল ট্রান্সক্রিপ্ট সংযোজন করতে হবে। তবে আবেদন করার ডেডলাইনের মধ্যে অফিশিয়াল ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে আনঅফিশিয়াল ট্রান্সক্রিপ্ট দিয়েও আবেদন করা যাবে। তবে পরবর্তী সময়ে মূল অফিশিয়াল ট্রান্সক্রিপ্ট প্রদর্শন করতে হবে। আর ট্রান্সক্রিপ্টের ভাষার ক্ষেত্রে ইংরেজিকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও অন্য কোনো ভাষার ট্রান্সক্রিপ্টও গ্রহণযোগ্য হবে।
গুগল’র এই শিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন http://www.google.com/anitaborg/apac।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »