বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলেছে ধূমপায়ীর সংখ্যা। এতে দেখা যায়, কিরিবাতি রয়েছে প্রথম স্থানে। দ্বিতীয় ভারত। তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্রীস। বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবসে এমনই এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বীপ রাষ্ট্র কিরিবাতিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ ধূমপান করে। সেখানে পুরুষদের তিন ভাগের দুই ভাগ এবং নারীদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ধূমপান করে। দেশটির মোট পুরুষ জনসংখ্যার অর্ধেক ধূমপান করে। নারীদের মধ্যে ধূমপান করে প্রায় ৩৫ শতাংশ।
পূর্ব তিমুরের ৮০ শতাংশ মানুষ ধূমপান করে। পৃথিবীর যেসব দেশে পুরুষরা সবচেয়ে বেশি ধূমপান করে, পূর্ব তিমুর তাদের মধ্যে সবচেয়ে উপরে। তবে এখানে নারীদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ ধূমপায়ী। বিশ্বে বেশি ধূমপান করে যেসব দেশের মানুষ, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এখানে ধূমপায়ীর হার মোট জনসংখ্যার ৩৯.১ শতাংশ। যার মধ্যে নারী ধূমপায়ী ১৭.৭ শতাংশ।
বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারী শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি। সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপের তামাকের ব্যবসা কিনে নিয়েছে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষস্থানীয় তামাক কোম্পানি জাপান টোব্যাকো ইনকরপোরেটেড (জেটিআই)। প্রায় ১২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায় আকিজ গ্রুপের তামাকের ব্যবসা কিনে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের সিগারেট বাজার বিশ্বের মধ্যে অষ্টম, যার পাঁচভাগের একভাগ আকিজ টোব্যাকোর দখলে।
সারা বিশ্বের ধূমপায়ীদের নিয়ে ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’তে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ধূমপায়ীর হারে বিশ্বের মধ্যে সেরা ১০টি দেশের তালিকায় সবচেয়ে ওপরের দিকে রয়েছে নাউরু। তাদের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ধূমপায়ীর হার ৫২.১ শতাংশ। এরপর রয়েছে- মিয়ানমার, চিলি, লেবানন, সার্বিয়া, বাংলাদেশ ও বুলগেরিয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, তামাকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে বছরে সারা বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষ মারা যায়। ফুসফুসে ক্যানসারেরও অন্যতম কারণ এই ধূমপান। দ্য টোব্যাকো এটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ ও ৫ দশমিক ৭ শতাংশ নারী তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫৭ হাজার মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে মারা যায়। আর তিন লাখ ৮২ হাজার মানুষ কর্মক্ষমতা হারায়। ধূমপানজনিত প্রধান আটটি রোগের চিকিৎসা বাবদ বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বাংলাদেশের।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ বলছে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বলকান অঞ্চলে ধূমপায়ীর হার সবচেয়ে বেশি। পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকায় সাধারণত ধূমপায়ীর হার কম দেখা গেলেও এবার চিলি ধূমপায়ীর হারে বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম হয়েছে।
চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, সারা বিশ্বে ১০টি মৃত্যুর মধ্যে একটির জন্য দায়ী ধূমপান৷ এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যকই চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা রাশিয়ার নাগরিক৷ ঐ চারটি দেশের ধূমপায়ী সংখ্যার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন্স, জাপান, ব্রাজিল আর জার্মানির ধূমপায়ীর সংখ্যা যোগ করলে, তা বিশ্বের মোট ধূমপায়ীর সংখ্যার প্রায় সাড়ে ৬৩ শতাংশ হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।