স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। এ কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু বাস্তবে কতজন নিয়মিত নিজের যত্ন নিই? ব্যস্ততা, মানসিক চাপ, প্রযুক্তিনির্ভরতা— সব মিলিয়ে আমরা শরীর ও মনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছি। অথচ প্রতিদিনের ছোট কিছু অভ্যাসই আমাদের সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
এই ফিচারে আমরা জানবো প্রতিদিনের এমন কিছু সহজ অভ্যাস যা নিয়ম করে করলে আপনি দীর্ঘস্থায়ীভাবে শরীর ও মন— দু’টোই সুস্থ রাখতে পারবেন।
১. সকালে ঘুম থেকে উঠেই ১ গ্লাস পানি
ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের শরীর পানিশূন্য থাকে। এই সময় ১ গ্লাস গরম বা স্বাভাবিক পানি পান করলে হজমশক্তি বাড়ে, টক্সিন বেরিয়ে যায় এবং মেটাবলিজম সচল হয়।
টিপস : চাইলে এতে লেবু বা এক চিমটি মধু মিশিয়ে নিতে পারেন, তবে চিনির পরিমাণ কম রাখাই ভালো।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন (কম হলেও করুন)
রোজ জিমে যাওয়ার দরকার নেই। আপনি চাইলে ২০-৩০ মিনিট হাঁটাচলা, বাসায় হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম, বা অনলাইন ফিটনেস ভিডিও অনুসরণ করতে পারেন।
ব্যায়ামের উপকারিতা :
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে
- মানসিক চাপ কমায়
- ঘুম ভালো হয়
মনে রাখবেন : শরীর নড়াচড়া করলেই তবেই সেটা ব্যায়াম— গাড়ি না নিয়ে হেঁটে যাওয়াও একটা ভালো শুরুর অভ্যাস।
৩. পুষ্টিকর সকালের নাস্তা
দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো সকালের নাস্তা। এটি বাদ দিলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যায়, ফলে ক্লান্তি, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং ওজনও বাড়তে পারে।
ভালো নাস্তায় যা থাকতে পারে :
- ডিম, ওটস, ফল
- দুধ বা দই
- বাদাম, চিয়া সিড
- সবজি যুক্ত স্যান্ডউইচ বা খিচুড়ি
৪. যথেষ্ট পানি পান করুন
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। যারা প্রচুর ঘামান বা বাইরে কাজ করেন, তাদের আরও বেশি প্রয়োজন।
পানি পান করলে যা হয় :
- ত্বক ভালো থাকে
- কিডনি পরিষ্কার থাকে
- হজমশক্তি ভালো হয়
- শরীরে শক্তি থাকে
পানির সাথে চা-কফি বা কোমল পানীয় গুনে ফেলবেন না— সেগুলো শরীরে পানিশূন্যতা বাড়াতেও পারে।
৫. প্রযুক্তি থেকে খানিকটা বিরতি
আমরা প্রতিদিন গড়পড়তা ৭-৮ ঘণ্টা মোবাইল বা কম্পিউটারে কাটাই। এর ফলে চোখে চাপ পড়ে, ঘুম কমে, মনোযোগ নষ্ট হয় এবং উদ্বেগ বাড়ে।
কী করবেন?
- প্রতিদিন অন্তত ১ ঘণ্টা স্ক্রিন মুক্ত সময় রাখুন
- বিছানায় মোবাইল না নিয়ে যান
- চোখের জন্য ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন (২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ড ২০ ফুট দূরে তাকানো)
৬. ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য
ঘুম শরীরের মেরামতের সময়। নিয়মিত কম ঘুম হলে ওজন বাড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, এবং মন-মেজাজ বিগড়ে যায়।
ঘুমের রুটিন :
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও ওঠা
- ঘুমানোর আগে বই পড়া বা ধ্যান
- মোবাইল-টিভি বন্ধ করে রাখা
- ঘরের আলো কমানো
৭. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
খাবারই আমাদের শরীর গঠন করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় নিচের বিষয়গুলো রাখার চেষ্টা করুন:
- প্রচুর সবজি ও ফল
পর্যাপ্ত প্রোটিন (ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল)
ভালো চর্বি (তিলের তেল, অলিভ অয়েল, বাদাম)
- এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত লবণ, চিনিযুক্ত পানীয়, প্যাকেটজাত খাবার
মনে রাখবেন— ব্যালেন্সড ডায়েট মানে কোনো খাবার একদম বাদ দেওয়া নয়, বরং সব কিছু পরিমিতভাবে খাওয়া।
৮. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন
শুধু শরীর ভালো থাকলেই হবে না, মনের সুস্থতাও জরুরি। এখনকার সময় মানসিক চাপ বা অবসাদ অনেক সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে।
কীভাবে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখবেন?
- প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাস চর্চা
- পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো
- নিজের জন্য সময় বের করা (যেমন— গান শোনা, আঁকা, বই পড়া)
প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সহায়তা নেওয়া
৯. প্রতিদিন কিছু “নো স্ক্রিন” সময় রাখুন
এই সময় আপনি নিজের জন্য কিছু করবেন— বাগান করবেন, হাঁটবেন, মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে থাকবেন, অথবা শুধু চুপচাপ কিছু ভাববেন।
এই ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ সময় শরীর-মন দুটোতেই প্রশান্তি আনবে।
১০. ধন্যবাদ জানান, প্রতিদিন
সাধারণ একটি কাজ হলেও প্রতিদিন অন্তত ৩টি বিষয় চিন্তা করুন, যেগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। এটা আপনার মন ভালো রাখবে, জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।
উপসংহার
সুস্থ থাকা মানে শুধু অসুস্থ না থাকা নয়। বরং এটা একটি পূর্ণ জীবন যাপন করা, যেখানে আপনি শরীরের চাহিদা যেমন বুঝবেন, তেমনি মনের কথাও শুনবেন।
এই অভ্যাসগুলো সবই সহজ, কিন্তু নিয়ম করে করলে আপনি নিজেই বুঝবেন পার্থক্য কতটা বিশাল।
আজ থেকেই শুরু করুন। আপনার সুস্থ জীবনের জন্য আপনার নিজেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নেওয়া উচিত। ছোট ছোট পদক্ষেপই আপনাকে নিয়ে যাবে সুস্থ, সুন্দর এক জীবনের পথে।