বার্তাবাংলা ডেস্ক »

interior design

আসমা ডলি :: বাড়ী কিংবা ফ্ল্যাট, ছোট কিংবা বড় যাই হোক না কেন এটি মানুষের প্রকৃত শান্তি এবং স্বস্তির কেন্দ্র হওয়া উচিত পাশাপাশি এর পরিবেশ অর্থাৎ বাড়ী, ফ্ল্যাটের ডেকোরেশন মানুষের রুচি ও ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এতে মানুষের প্রশান্তি আরো পরিপূর্ণ হয়। গৃহসজ্জা নিঃসন্দেহে একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প। এর সুনির্দিষ্ট ব্যাকরণও আছে। ঘরের ফ্লোর, সিলিং, ওয়াল, কালার, কিচেন, ফার্নিচার, দরজা, জানালা, বহিরাংশ (Exterior) প্রত্যেকটা কিছুতেই একটি সমন্বয়-ভারসাম্য এবং শৈল্পীক অবস্থান থাকলে সেটা হবে নান্দনিক ইন্টেরিয়র ডেকোর। বিচ্ছিন্ন ভাবে ইন্টেরিয়র ডেকোর করলে সেট কখনোই রুচিসম্মত বা শৈল্পীক হয়না। তাছাড়া এতে ব্যয়ও অনেক বেশী হয়। ফ্ল্যাট বা বাড়ীর মালিকরা যারা ভালো ইন্টেরিয়র ডেকোর করাতে চান তাদের প্রফেসনাল এবং অভিজ্ঞ ইন্টেরিয়র প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করানো উচিত।

ইন্টেরিয়র ডেকোর করার সময় অবশ্যই বাড়ীর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও দীর্ঘস্থায়ীত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করাতে হবে। নান্দনিক গৃহসজ্জার প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা আলাদা Creative ডিজাইন চিন্তা করে তৈরী করতে হবে। যেমন: মেইন ডোর, ইনসাইড ডোর, লিভিং রুম, লবি, ফ্যামিলি লিভিং, কিচেন রুম, মাস্টার বেড, রিডিং রুম, চাইল্ড বেড, ডাইনিং স্পেস, বাথরুম, ড্রেসিং রুম, ষ্টোর রুম, বারান্দা, গার্ডেনিং ইত্যাদি প্রত্যেকটা স্পেসের আয়তন ও অবস্থান বুঝে ফ্লোর, সিলিং, ফার্নিচার, ওয়াল, কালার সহ সবকিছুর সমন্বয়ে আলাদা আলাদা ডিজাইন তৈরী করতে হবে। ডিজাইনের একটি নির্দিষ্ট থিম থাকতে হবে, আবার সবকিছুর মধ্যে একটি সমন্বয় থাকতে হবে। যেহেতু সম্পূর্ণ ইন্টেরিয়র একটি বিশাল সৃষ্টিশীল শিল্প তাই এক সাথে এর পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা সম্ভব নয়। আজ আমরা শুধু মাত্র কিচেন কেবিনেটের বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে মৌলিক আলোচনা করব।

কিচেনঃ

বাড়ী বা ফ্ল্যাট, ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, একটি পরিবারে কিচেন থাকবেই এবং তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিচেনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, কিচেনের পরিপূর্ণ সহজ ব্যবহার, এর সহজ পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ এবং এর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কিচেন কেবিনেট ও অন্যান্য কিছুর ডিজাইন তৈরী করতে হবে। যেমন: একটি ১৫০০ (+ -) স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬-৮ জন হতে পারে। মাঝে মধ্যে গেস্ট থাকলে ১০-১২ জনও হতে পারে। আবার পারিবারিক অনুষ্ঠান বা ধর্মীয়-সামাজিক উৎসবে ৪০-৫০ জন অতিথি আমন্ত্রীত হতে পারে। তাই কিচেন কেবিনেট ডিজাইন করতে হবে এমন ভাবে যাতে প্রতিদিন অন্তত ৬-১২ জন মানুষের খাবার তৈরী এবং পরিবেশন করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার প্রত্যেকটা হাতের কাছে পাওয়া যাবে, আবার প্রয়োজনে ৪০-৫০ জন মানুষের খাবার তৈরী এবং পরিবেশনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছু সুনির্দিষ্ট স্থানে স্টক রাখা যাবে। তাছাড়া ডিপফ্রিজ, ওভেন, ওয়াশিং স্পেস, কাটিং স্পেস, বার্নার, কিচেন হুড, কিচেন ডোর ও প্রয়োজনীয় সবকিছু কিচেনের আয়তন বুঝে সেট করতে হবে। কিচেন কেবিনেট করার মেটেরিয়াল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাঠ ব্যবহার করলে ভালো নাকি বোর্ড ব্যবহার করলে ভালো? কাঠ ব্যবহার করলে বহু রকম কাঠ আছে। আবার বোর্ড ব্যবহার করলে বহু রকম বোর্ড আছে। কিছু কিছু বোর্ড দিয়ে কিচেন কেবিনেট করলে আপাতত খরচ কিছুটা কম হয়, তবে সেগুলো বেশি দিন টেকেনা। মূল বিষয় হচ্ছে কোন কাঠ মিস্ত্রী বা অনভিজ্ঞ কারো পরামর্শ না শুনে অভিজ্ঞ ও পেশাদার ডিজাইনার দিয়ে কিচেন কেবিনেটের ডিজাইন ও মেটেরিয়াল নির্ণয় করা উচিত। কিচেনের কাজ করার ক্ষেত্রেও একজন অভিজ্ঞ ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ভালো পরিকল্পনা দিতে পারবে। অর্থাৎ কিচেনে একসাথে কতজন মানুষের কাজ করতে পারবে সেটা নির্ভর করবে কিচেনের স্পেস এবং পুরো কিচেনের ডিজাইন তৈরীর উপর। অনেক সময় বড় কিচেন হওয়া স্বত্বেও ভালো বা সঠিক ডিজাইনের অভাবে অনেক কম জিনিস রাখা যায় বা কম মানুষ একসাথে কাজ করতে পারে। তাছাড়া দৃষ্টি নন্দনও হয়না। কিচেন ছোট, বড়, মাঝারি যাই হোক না কেন ঘরের নিয়মিত জনসংখ্যা ও সব কিছু বিবেচনা করে সঠিক ডিজাইন তৈরী করতে পারলে কিচেন সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখা, কিচেনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজ করা, কিচেনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা, কিচেনে তৈরী করা খাবার সহজেই ডাইনিং এ পরিবেশন করা, সবকিছু সহজে ব্যবহার করতে পারা, সর্বোপরি কিচেনের সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সম্ভব। আগামীতে মাস্টার বেড, চাইল্ড বেড ও গেস্ট বেড রুম নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আসমা ডলি : ইন্টেরিয়র ডিজাইনার

ইমেইল : [email protected]

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »