সচেতনতার অভাবে রাজধানীর সড়কের পাশে যত্রতত্র প্রস্রাব করার কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না পারিবেশ দূষণ। অথচ পাশেই রয়েছে সিটি করপোরেশনের পাবলিক টয়লেট। এ বর্জ্যে উচ্চমাত্রায় অ্যাসিড এবং লবণ থাকায় মাটি, পার্শ্ববর্তী গাছপালাসহ সার্বিকভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে। ব্যস্ত সড়কের বাতাসে বর্জ্যের এ উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় মানুষের চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আসাদুল ইসলাম দুলাল-
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এভাবে প্রস্রাব করার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর ফলে মানুষের সার্বিক চলাচল ব্যহত হচ্ছে। যারা এ ধরনের কাজ করছে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এই পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে মোটেও সচেতন নন। এমনকি পাশেই সিটি করপোরেশনের পাবলিক টয়লেট থাকা সত্ত্বেও সেটা ব্যবহারে তাদের মধ্যে কোনো আগ্রহ নেই।
যেখানে-সেখানে প্রস্রাব করার মাধ্যমে পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের মধ্যেও রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। সড়কে যে স্থানে এ ধরনের কাজ হচ্ছে; সেখানে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা দূষিত হচ্ছে। আর সড়কের ওই স্থান পার্শ্ববর্তী সড়কের চেয়েও দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি গাছপালাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অনেক গাছ মরে যেতে দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, যেসব পথচারী এ ফুটপাত ধরে চলাচল করতো; তারা এখন ফুটপাত ছেড়ে রাস্তার মাঝপথ দিয়ে চলাচল করছে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
খোলা স্থানে প্রস্রাব করেছেন এমন একজনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি কখনো এভাবে ভেবে দেখেননি। তার প্রয়োজন হয়েছে তাই তিনি এ কাজ করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি মোটেও সচেতন নন।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময় কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে বিশেষ কোনো সাড়া না পেয়ে অনেকটা হতাশ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
রাজধানীর ব্যস্ততম কারওয়ান বাজার ও বাংলামটরের মাঝামাঝি পান্থকুঞ্জ পার্কের পাশেই এ ধরনের একটি স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মনুষ্য সৃষ্ট বর্জ্য বা প্রসাব করার কারণে তা গড়িয়ে ফুটপাত থেকে প্রধানসড়কের মাঝপথে পৌঁছে গেছে। ফলে পুরো এলাকায় উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে এ ধরনের কাজ হচ্ছে, সেখানকার রাস্তা এবং ফুটপাত ব্যবহারকারীদের প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেসের উল্টো পাশের সড়কে ফুটপাত ধরে হাঁটার সময় দেখা গেছে, ফুটপাতের মাঝের গাছগুলোর গোড়ায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে প্রস্রাব জমে তা ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তায় এসে পড়েছে। ফলে দুর্গন্ধে আশপাশ দিয়ে চলাচল করা কষ্টকর হয় উঠেছে।
স্থানীয় গ্যারেজ মালিক সেলিম উদ্দিন জানান, এখানে প্রতিদিন শতশত লোক প্রস্রাব করে থাকে। এ কারণে গাছগুলো ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। এলাকায় আগে কয়েকটি দোকান ছিল, দুর্গন্ধের কারণে তারা চলে গেছে। ফলে ফুটপাত ধরে পথচারীরা চলতে চান না। তারা সড়কের মাঝপথ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন।
এ বিষয়ে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় এই ধরনের কাজ যাতে না করে সেজন্য তাদের বুঝিয়েছি। রাস্তার পাশেই পাবলিক টয়লেট রয়েছে। তারা যেন ওটি ব্যবহার করে। কিন্তু তারা গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত কাজ সারার চেষ্টা করেন। এ কারণে কষ্ট করে দূরে যেতে চান না। ফলে এটি বন্ধ করা যাচ্ছে না।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সফিউল্লাহ জানান, তারা যেন যেখানে-সেখানে এ কাজ না করে, সে জন্য পাবলিক টয়লেট করা হয়েছে। এর পরেও তারা সচেতন না হলে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, এটি পরিবর্তন করা একদিনের বিষয় নয়। এ জন্য ফ্যাসিলিটিজ দ্বারা তাদের প্রভাইডেড করতে হবে। প্রয়োজনে ফ্যাসিলিটিজ বাড়াতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষ যারা এটার ব্যবহারকারী, তাদেরকে আস্থায় আনতে ৫ টাকার পরিবর্তে ২ টাকা করতে হবে। এছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সব ধরনের মিডিয়াকে বেশি বেশি প্রচার করতে হবে।
বিকল্পভাবে সরকারের যেসব জায়গায় সম্ভাব্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যেমন- শপিং সেন্টার এবং মসজিদগুলোকে এই ধরনের সেবার আওতায় এনে সরকারিভাবে বাজেটিং করে পাবলিক টয়লেটের উন্নয়ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা দরকার। এটাকে ব্যবহারে তাদেরকে যথাসম্ভব সামর্থের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার আয়ের উৎস হিসেবে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে প্রণোদনা দেবে। সরকারকে এ ধরনের অল্টারনেটিভ সমাধান এক্সপোর্ট করতে হবে। অন্যথায় ঢাকা শহরের এ বিশাল সংখ্যক জনগণের জন্য অল্প সংখ্যক পাবলিক টয়লেট দিয়ে সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করেন এ নগর পরিকল্পনাবিদ।
শুধু পান্থকুঞ্জ বা তেজগাঁও নয় পুরো রাজধানীজুড়ে এ ধরনের শতশত স্থানে প্রতিনিয়ত এ ধরনের কাজ করতে দেখা যায়।