হজ ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। এটি শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে একবার পালনীয়। হজ ফরজ হওয়ার জন্য যে শর্তগুলো পূরণ হতে হবে তা হলো:
- মুসলিম হওয়া
- বিবেকবান (আকিল) হওয়া
- প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া
- স্বাধীন হওয়া
- আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়া
নারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি শর্ত হল, তার সঙ্গে মাহরাম পুরুষ থাকা আবশ্যক।
হজের রুকন (মূল উপাদান)
হজের চারটি রুকন রয়েছে:
- ইহরাম বাধা: হজের নিয়্যত করা। (ইহরাম পোশাক পরিধান করাই যথেষ্ট নয়)
- আরাফায় অবস্থান: ৯ই জিলহজ্জ সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ার পর থেকে ঈদের দিনের ফজরের আগে পর্যন্ত।
- ত্বওয়াফে ইফাদাহ: আরাফার পর বায়তুল্লাহ শরীফে প্রদক্ষিণ (হজের মূল তাওয়াফ)।
- সাঈ করা: সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার যাতায়াত।
হজের ধরন
- ইফরাদ হজ: শুধুমাত্র হজের নিয়্যত করা। উমরা আলাদা সময়ে করা হবে।
- কিরান হজ: একসাথে হজ ও উমরার নিয়্যত করে ইহরাম বাঁধা। এতে হাদয়ী কোরবানী ফরজ।
- তামাত্তু হজ: উমরা করে ইহরাম খুলে হালাল হওয়া, তারপর হজের দিন হজের জন্য নতুন ইহরাম বাধা। এতে হাদয়ী কোরবানী ফরজ।
হজের ওয়াজিবসমূহ
ওয়াজিবসমূহের কোন একটি ছুটে গেলে ফিদিয়া দিতে হয়।
- মীকাত থেকে ইহরাম বাধা
- আরাফায় সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান
- মুযদালিফায় রাত যাপন
- মিনায় তাশরীক দিবসে রাত যাপন
- জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ
- মাথা মুন্ডন বা চুল কাটা
- বিদায়ী তাওয়াফ (হায়েয/নিফাস ছাড়া সকলের জন্য)
মীকাতসমূহ
সময়ের মীকাত:
- শাওয়াল, জিলক্বদ, জিলহজ্জ (হজের মাস)
স্থানের মীকাত:
- যুল হুলাইফাহ (মদিনাবাসীদের জন্য)
- যুহফাহ (সিরিয়া, মিশর, মরক্কো)
- কারনুল মানাজিল (নাজদবাসীদের জন্য)
- ইয়ালামলাম (ইয়ামানবাসীদের জন্য)
- জাতে ইরাক (ইরাকবাসীদের জন্য)
মস্তাহাব আমল
- ইহরামের জন্য গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহার
- পুরুষদের জন্য সাদা দুটি কাপড় (চাদর ও লুঙ্গি)
- ইহরামের আগে নখ, অপ্রয়োজনীয় চুল কাটা
- তালবিয়া পাঠ
- আগমনী তাওয়াফ
- রমল ও ইজতিবা (ত্বওয়াফে কদমে দ্রুত হাঁটা ও ডান কাঁধ খোলা রাখা)
- মুযদালিফায় মাগরিব-ইশা একত্রে পড়া
- মিনায় আরাফার রাত যাপন
- হাজরে আসওয়াদ চুম্বন
ইহরামে নিষিদ্ধ কাজ
- চুল কাটানো
- নখ কাটা
- পুরুষদের সেলাইযুক্ত কাপড় পরা
- মহিলাদের নিকাব ও মোজা পরা
- সুগন্ধি ব্যবহার
- স্থল শিকার
- বিবাহ/বিবাহ পড়ানো
- যৌন সংস্পর্শ
ফিদিয়ার ধরন
- ফিদিয়া নেই: বিবাহ ও যৌন উপভোগ (বীর্য না বের হলে)। কেবল তওবা করতে হবে।
- সমতুল্য প্রাণী: শিকার হত্যা
- গুরুতর ফিদিয়া: হজের আগে সহবাস (হজ বাতিল হবে, পূর্ণ করতে হবে এবং পুনরায় হজ করতে হবে)
- বিকল্প ফিদিয়া: চুল কাটা, সুগন্ধি ইত্যাদি—৩ রোজা, ৬ জন মিসকিনকে খাওয়ানো, অথবা ছাগল কোরবানি করা।
হজের দিনসমূহ
- ৮ জিলহজ্জ – পানি বহনের দিন (মিনা যাত্রা)
- ৯ জিলহজ্জ – আরাফা দিবস
- ১০ জিলহজ্জ – ঈদ ও কোরবানি
- ১১-১৩ জিলহজ্জ – তাশরীক দিবস (মিনায় অবস্থান ও কঙ্কর নিক্ষেপ)
দুআ করার স্থান
- আরাফার ময়দান
- মুযদালিফা
- তাশরীক দিনে কঙ্কর নিক্ষেপের পর
- কাবা শরীফ তাওয়াফের সময়
- সাফা-মারওয়া সাঈ করার সময়
হজ ও উমরার পদ্ধতি (সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা)
- মীকাতে গোসল, সুগন্ধি ও ইহরাম
- তাওয়াফ ও সাঈ
- উমরার পর চুল কেটে হালাল হওয়া (তামাত্তু হজে)
- ৮ জিলহজ্জ পুনরায় ইহরাম ও মিনায় রওনা
- মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কসর করে আদায়
- ৯ জিলহজ্জ: আরাফা অবস্থান, দুআ, তাকদিম সালাত
- সূর্যাস্তে মুযদালিফায় রওনা, সেখানে রাত যাপন
- ১০ জিলহজ্জ: মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানি, মাথা মুন্ডন, তাওয়াফে ইফাদাহ, সাঈ
- মিনায় পুনরায় রওনা ও তাশরীক দিবসে কঙ্কর নিক্ষেপ
- ১২/১৩ তারিখ মিনা ত্যাগ
- মক্কা ছাড়ার আগে বিদায়ী তাওয়াফ
হজ একটি পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সঠিক নিয়মে পালন করতে হলে শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি নিতে হয়। এই গাইডটি অনুসরণ করে প্রত্যেক হজ যাত্রী যেন সহজে ও সঠিকভাবে হজ সম্পন্ন করতে পারে, সে দিকেই আমাদের প্রচেষ্টা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল হজ করার তাওফিক দান করুন, আমিন।