>> পাহাড়ী এলাকায় বেড়েছে কীটনাশকযুক্ত মশারির ব্যবহার
মশিউর আহমেদ মাসুম :: বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে। সরকার ও ব্র্যাকসহ বেসরকারি সংস্থাগুলোর নিবিড়ভাবে কাজ করার কারণে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এদিকে ব্র্যাকের সরবরাহকৃত কীটনাশকযুক্ত মশারি ব্যবহারে পড়েছে বিপুল সাড়া। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার সভা, সেমিনার ও সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির কারণে মানুষ আগের চেয়ে সচেতন হওয়ায় বান্দরবানসহ পার্বত্য এলাকায় এ ধরণের রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বান্দরবান সদর এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন ও স্থানীয় এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বান্দরবান সদরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী। পেশায় স্কুল শিক্ষক। তিনি জানান, ম্যালেরিয়ার প্রধান বাহক মশা। এটা আগে থেকে জানতাম। ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘ দিন থেকে সাধারণ মশারি ব্যবহার করতাম। কিন্তু তা তেমন কাজে আসত না। কারণ, সাধারণ মশারি ব্যবহার করার পরও আশে পাশের অনেক মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পেতাম।
যোগ করেন, একবার উপজেলা সদরে ব্র্যাকের ম্যালেরিয়ার বিষয়ক সেমিনার হলে সেখানে আমি কীটনাশকযুক্ত মশারির কথা জানতে পারি। এর ব্যবহারবিধি ও বিশেষত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হই। তখন আমি এ মশারি ববহার করা শুরু করি। এখন দেখি গ্রামের অনেকে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কীটনাশকযুক্ত মশারি টানাচ্ছে। ফলে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমে এসেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু মোহাম্মদ আলী নয়, সদর উপজেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ কীটনাশকযুক্ত মশারি ব্যবহারের পাশাপাশি এর ব্যবহার বিধি সম্পর্কে অবগত হচ্ছে। তারা এ ধরণের মশারি পুকুরে পরিস্কার না করে নিয়ম অনুযায়ী অন্য জায়গায় পরিস্কার করছে এবং ব্যবহারের পর নিয়ম অনুযায়ী মাটিতে পুঁতে ফেলছেন।
ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে- পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও লাইন ডাইরেক্টর (সিডিসি), অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ জানান, ম্যালেরিয়ামুক্ত দেশ গড়ে তোলাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। এ জন্য সরকার ও এনজিওগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় কাজ করতে হবে। এর পাশাপাশি দেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করতে বাংলাদেশ-ভারত এর মধ্যে সীমান্ত ইস্যুতে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত কীটনাশকযুক্ত মশারি এলএলআইএন (লং লাস্টিং ইনসেকটিসাইডাল নেটস) বিতারণ করা হয়েছে ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার ৯০৫টি। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ৬ লাখ ১২ হাজার কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতারণ করা হয়এবং এ সময়ে ৫ লক্ষ মশারি পুন:স্থাপন করা হয়েছে। ২০১১-২০১২ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৪ টি কীটনাশকে চুবানো সাধারন মশারি (আইটিএন) বিতারণ করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমডিজি‘র লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী (বেইস লাইন ২০০৮) ২০১৫ সালের ভিতরে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর হার ৬০ শতাংশে কমিয়ে কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ২০১২ সালে সেই লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করেতে সক্ষম হয়েছে।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, গত একবছরে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা কমেছে ২৩ লাখ ৫০ হাজার। ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫৬ লাখ। আর বর্তমানে এ সংখ্যা হচ্ছে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এক বছরের ব্যবধানে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ২৬২৭ জন। তবে ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে ৩ জন লোক বেশি মারা যান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করার জন্য গ্লোবাল ফান্ড টু ফাইট এইডস, টিবি অ্যান্ড ম্যালেরিয়া GFATM) থেকে আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার ব্র্যাকসহ ২১ টি এনজিওর সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ২০০৭ থেকে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:ম্যালেরিয়া সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সেবা মাঠ পর্যায়ে আরো বিস্তৃত করা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে কীটনাশকযুক্ত দীর্ঘস্থায়ী মশারি বিতরণ, ব্যবহারযোগ্য সাধারণ মশারিগুলোকে কীটনাশকে চুবানো, অ্যাডভোকেসি, কমিউনিকেশন ও সোশাল মবিলাইজেশন কার্যক্রমকে আরো জোরদার করা, ম্যালেরিয়ার বাহক মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করা এবং সরকার. এনজিও ও প্রাইভেট সেক্টরের মধ্যে সমন্বয় ও অংশীদারিত্ব জোরদার করা।