মুজাহিদ মসি:: সাফল্য আপনার জন্যইে অপক্ষো করছে। সাফল্য আপনার মৌলিক অধিকার। এ অধিকার অর্জিত হয় অনেক শ্রমে, অনেক ত্যাগে। সাফল্যের পথে রয়েছে অজস্র বাধা, আছে মরীচিকা। পথ চলতে গিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন চোরাবালিতে।
সফল ও ব্যর্থ মানুষের মাঝে বাহ্যিক বা শারীরিক কাঠামোয় কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য শুধু জীবনদৃষ্টিতে। সঠিক জীবনদৃষ্টি মানুষকে সফল করে আর ভ্রান্ত জীবনদৃষ্টি তাকে ব্যর্থ করে।
সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সাফল্যের স্বর্ণদুয়ার উন্মোচনের জন্যেই সাফল্যের পঞ্চসূত্র। ৬ পর্বের এ কণিকা আপনাকে দেখাবে সাফল্যের সরল পথ। সাফল্য আপনার জন্যেই অপেক্ষা করছে।
সাফল্য
প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তরের সামর্থ্যই সাফল্য। এটি একটি বিরামহীন প্রক্রিয়া।
সাফল্যের ধরন অনেক। মানসিক সাফল্য হলো প্রশান্তি শারীরিক সাফল্য সুস্বাস্থ্য আর আর্থিক সাফল্য হচ্ছে সচ্ছলতা। আত্মিক সাফল্য হচ্ছে আত্ম উপলব্ধি। অর্থ-বিত্ত, খ্যাতি-সম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি সাফল্যের একেকটি উপকরণ হলেও সাফল্য মানে অভাববোধের অনুপস্থিতি।
সফল তিনি-ই যিনি আপাত ব্যর্থতার ছাই থেকে গড়ে নিতে পারেন নতুন প্রাসাদ। প্রতিটি অর্জনকেই মনে করেন নতুন শুরুর ভিত্তি। প্রতিটি অর্জন শেষেই শুরু করেন আরো বড় অর্জনের অভিযাত্রা।
র্ব্যথতার কারণ
ব্যর্থতার কারণ হতে পারে আপাত গুরুত্বহীন খুবই ছোট ছোট বিষয়।
১. সংশয়
প্রশান্তি সুস্বাস্থ্য ও সাফল্যের পথে প্রথম বাধা বা দেয়াল হচ্ছে সন্দেহ, সংশয়
ও অবিশ্বাস। । পারবো কি না, হবে কি না, যদি না হয় তাহলে কী হবেÑ নানারকম নেতিবাচক প্রশ্ন, ভয় ও আশঙ্কা।
আসল পঙ্গুত্ব মনের, দেহে নয়। সংশয় প্রথমেই মনকে পঙ্গু করে দেয়। নেতিবাচক চিšতা মনের মধ্যে এসে মস্তিষ্ককে তার বিশাল শক্তিভাণ্ডার নিয়ে লাগাতার কাজ করার পথে বাধা সৃষ্টি করে। সাফল্যের লক্ষ্যে মনোদৈহিক প্রক্রিয়া তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। বাস্তবে ব্যর্থতা ও হতাশা গ্রাস করে জীবন।
২. লালতি অভ্যাসচক্র
আজন্ম লালিত পরিবেশ বা পরিবারের প্রভাবে ক্ষতিকর তথ্য, ধারণা, সংস্কার দ্বারা সৃষ্ট অভ্যাসচক্রেই সাধারণ মানুষ ঘুরপাক খায়। বাবা-দাদার ভ্রান্ত জীবনাচরণকেই সে মনে করে জীবন। জীবন যে এর চেয়ে অনেক বড় কিছু তা তার ভাবনাতেই আসে না। লালিত অভ্যাসচক্র তার মধ্যে এক ভ্রান্ত নিরাপত্তা বোধ সৃষ্টি করে। ফলে নতুন কাজ নতুন পদক্ষেপ নিতে ভয় পায়; পাছে যা আছে তা-ও যদি চলে যায়।
সুযোগকে এভাবে হাতছাড়া করার জন্যে দায়ী ভাগ্য নয় বা কোনো কিছুর অভাব নয়, দায়ী তাদের স্বভাব। আমি এমনই, আমাকে এভাবেই চলতে হবে, আমার ভাগ্যে এই লেখা আছেÑ এ ধরনের ভ্রান্ত ভাবনা, ভ্রান্ত অভ্যাসচক্রের বন্দিত্ব জীবনে দুর্দশা ও ব্যর্থতার দ্বিতীয় কারণ।
৩. অলীক কল্পনা
কী হলে কী হতো, এমন যদি হতো, যদি আমার এটা থাকতোÑ এ অলীক কল্পনাগুলোই দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের প্রধান কারণ। অলীক কল্পনা মানুষকে নিয়ে যায় বর্তমান থেকে অনেক দূরে। নষ্ট করে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। ডুবিয়ে রাখে আফসোস, আলস্য বা অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায়।
অলীক কল্পনার ধরন বিভিন্ন হলেও এর মূলে রয়েছে সবকিছু বিনা পরিশ্রমে ও রাতারাতি পাওয়ার ভাবনা, কাজে ফাঁকি দেয়া, সাফল্যের জন্যে অন্যের সাহায্যের আশা কিংবা ব্যর্থতায় অন্যকে দোষারোপ করার মানসিকতা। আলাদিনের চেরাগ বা অন্যের সাহায্যের অপেক্ষা করতে করতে সে ব্যর্থতা আর হতাশায় হারিয়ে যায়।
৪. আলস্য
প্রয়োজনীয় কাজ সময়মতো না করে ফেলে রাখার নাম আলস্য। আকাশকুসুম কল্পনা, আড্ডা, টিভি, ইন্টারনেটে চ্যাটিং, ফেসবুক, এসএমএসÑ সবকিছুর জন্যে অলসরা সময় পায়, শুধু সময় পায় না বা আগ্রহী হয় না প্রয়োজনীয় কাজ করার। শারীরিক দুর্বলতা, মানসিক অস্থিরতা কিংবা পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতার হাজারটি কারণ অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে থাকে।
প্রায়ই নিজেকে দুঃখী ও অবহেলিত মনে করাও আলস্যের আরেকটি রূপ। আলস্যের মূল কারণ লক্ষ্যহীনতাÑ কাজটি কেন করতে হবে তা নিজের কাছে পরিষ্কার না থাকা। অবচেতন মনে পরিবর্তনের অনীহা অর্থাৎ করবো করবো করে কাজ ফেলে রাখাও আরেকটি কারণ। কারণ যা-ই হোক আলস্য ও দীর্ঘসূত্রিতা জীবনের সকল সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়।
সাফল্য ॥ ভ্রন থকেইে শুরু
অবলোকন করুন এমন একটি প্রতিযোগিতা যাতে ৪০ থেকে ৫০ কোটি প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছে। লক্ষ্য একটি বৃত্তের মাঝে পৌঁছা। যেখানে শুধু একজনের বেঁচে থাকার আশ্রয় রয়েছে। সেখানে যে পৌঁছতে পারবে, সে-ই বেঁচে থাকবে। আর বাকি সবাই মারা যাবে। প্রতিনিয়ত রাসায়নিক অস্ত্র বর্ষিত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ প্রতিযোগী মুহূর্তে মারা যাচ্ছে। কিন্তু একজন প্রতিযোগী সকল বিপদ অগ্রাহ্য করে সেই বৃত্তে প্রবেশ করলো আর সময়ের বিবর্তনে মানুষরূপে আবির্ভূত হলো এই পৃথিবীতে।
মাতৃগর্ভে একটি ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে পিতার দেহ থেকে যে ৪০ থেকে ৫০ কোটি শুক্রাণু যাত্রা শুরু করেছিলো, আপনি হচ্ছেন সেই শুক্রাণুর বিকশিত রূপ, যে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হতে পেরেছিলো। ৪০/৫০ কোটির সাথে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন বলেই আপনি পৃথিবীতে আসতে পেরেছিলেন।
তাই কঠোর বাস্তবতার আলোকেই বলা যায়, আপনি এক বিজয়ী বীর। জীবনের প্রথম সংগ্রামে জয়ী হয়েছেন, জীবনের প্রতিটি সংগ্রামে জয়ী হবেন, যদি আপনার প্রতিটি প্রত্যাশাকে, প্রতিটি অনুভবকে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করেন। বিশ্বাস একবার গেঁথে গেলে আপনার মনোদৈহিক প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপনাকে পরিচালিত করবে সাফল্যের পথে। সাফল্যের পঞ্চসূত্রের অনুশীলন এই বিশ্বাসকেই গেঁথে দেবে আপনার অন্তরতম সত্তায়।
সংশয় অলীক কল্পনা আলস্য ত্যাগ করে, লালিত অভ্যাসচক্র ভেঙে আপনি এগিয়ে যাবেন অনিবার্য বিজয়ের পথে।
সাফল্যরে পঞ্চসূত্র
প্রকৃতির ছন্দে স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় জীবন জয়ের পথে এগিয়ে যাওয়ার সূত্র। এ সূত্রের প্রয়োগ সঠিক জীবনদৃষ্টির প্রকাশ ঘটাবে আপনার মধ্যে।
১. শোকর
আপনার যা আছে, যতটুকু আছে সেজন্যে আšতরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেই মন প্রশান্ত হবে। ঠান্ডা মাথায় ম¯িতষ্ককে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সামর্থ্য ও উপায়-উপকরণ নিয়েই যাত্রা শুরু করার নাম শোকর।
২. মনছবি
মনের পর্দায় আঁকা আপনার ভবিষ্যৎ সাফল্যের ছবি।
অর্থাৎ আপনি যা চান তা সুনির্দিষ্টভাবে চাওয়া, ‘পাবো’ বলে বিশ্বাস করা, ‘পাচ্ছি’ বলে অনুভবের পাশাপাশি বা—বে কাজ শুরু করে ফলাফলের জন্যে অপেক্ষা করার প্রক্রিয়ার নাম মনছবি।
৩. সাদাকা
অর্থ শ্রম মেধা ও সময়কে সেবায় রূপান্তরিত করা, নিজের ও অন্যের কল্যাণে কাজ করা, অন্যের সাথে সদাচরণ করা, বঞ্চিত অসহায়কে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করার নাম সাদাকা।
৪. সবর
বিজয় না আসা পর্যন্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ঠান্ডা মাথায় নীরব সংগ্রাম। জীবনের লক্ষ্য অর্জনে হিজরত অর্থাৎ সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকা।
৫. সঙ্ঘায়ন
একা কাজের চেয়ে সবাই মিলে কাজ করলেই অর্জনের পরিমাণ হয় বেশি। সবাই মিলে করলে কাজ দ্রত হয়, ভুল হয় কম। পারস্পরিক সমমর্মিতা বাড়ায় আনন্দ। ‘আমি’র পরিবর্তে ‘আমরা’র চেতনা যুক্ত হওয়ায় সামগ্রিক কল্যাণ বাড়ে। ব্যক্তির অর্জনও হয় বিশাল।
সূত্র: কোয়ান্টাম কণিকা:
মহাজাতক
মুজাহিদ মসি : কলামিস্ট