এক সময় বাংলাদেশে বিলবোর্ড, সাইন বোর্ড, পত্রিকা, টেলিভিশনসহ সকল প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হত । দোকান, রাস্তাসহ প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই চোখে পড়ত তামাকজাত দ্রব্যের বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপন। সরাসরি তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি থাকতে ব্যান্ড শো, গাছ লাগানো, ইয়ুথ প্রিভেনশন ক্যাম্পেইনসহ নানা ধরনের প্রচারণা কার্যক্রম। গণমাধ্যমে প্রকাশিত/প্রচারিত বিজ্ঞাপনের একটি বড় অংশ থাকত তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, কিন্তু আজ এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে । এখন আর পত্রিকার পাতা জুড়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন দেখা যায় না। ২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে সকল প্রচার মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের সকল প্রকার বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয় । আইনটি ২৬ মার্চ ২০০৫ সাল হতে কার্যকর করার পর প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার দাবি দীর্ঘদিনের। ১৯৮৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় নিপসম আয়োজিত একটি সেমিনারের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধের প্রথম সুপারিশ পাওয়া যায় । পরবর্তী সময়ে জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ইসলাম তাঁর তামাক বিরোধী কার্যক্রমে বিজ্ঞাপন বন্ধের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে নিয়ে এসেছেন ।
১৯৮৮ সালে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। প্রায় এই সময় হতে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে নির্বাহী সিদ্ধান্তে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ হয়। ১৯৯০ সালে ১৯৮৮ সালের এ আইনটি অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তামাকজাত সামগ্রী বিপণন (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন অধ্যাদেশ প্রণীত হয়। যাতে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপনের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলেও তা আলোর মূখ দেখেনি।
১৯৯৪ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল Media and Tobacco: Get the Message Across এবং ২০০৩ সালে Tobacco Free Film, Tobacco Free Fashion. যা প্রচার মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবিকে আরো জোরদার করে। ১৯৯৯ সালের দিকে দৈনিক ভোরের কাগজ স্বউদ্যোগে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ছাপানো হতে বিরত থাকার ঘোষণা করে । ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ইসলাম সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধের দাবিতে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা করেন । যা তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধের দাবিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপনের দুটি মূল উদ্দেশ্য: প্রথমত; কিশোর ও তরুণদের ধূমপান ও তামাক ব্যবহার করতে উৎসাহী করা এবং দ্বিতীয়ত; ধূমপায়ীদের ধূমপানের বিষয়ে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই বিজ্ঞাপন বিদ্যমান রেখে জনসচেতনতার মাধ্যমে তামাক ব্যবহার হ্রাস অবাস্তব কল্পনা। বিজ্ঞাপন বন্ধের ফলে যুবদের আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা ব্যহত হয় বিধায় তামাক কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন বন্ধের বিরোধীতা করে। কোম্পানীগুলো তাদের বার্ষিক খরচের একটি বড় অংশ বিজ্ঞাপনের পিছনে ব্যয় করে থাকে ।
১৯৯৮ সালের দিকে বাংলাদেশে ব্যবসারত একটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে দেখা যায় কোম্পানিটির করপূর্ব মুনাফা ছিল ৭৭১.৪ কোটি টাকা। আর কোম্পানিটি বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেটের বাজারজাত, উন্নয়ন এবং বিস্তৃতিতে ব্যয় করেছে ১৬৭ কোটি টাকা । এ হিসেবে থেকে অনুমান করা যায় কোম্পানিগুলো তাদের আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় করতো বিজ্ঞাপনের জন্য যার উদ্দেশ্য মানুষকে ধূমপানে আকৃষ্ট করা। কোম্পানির এ ধরনের প্রলুদ্ধকর কার্যক্রম বন্ধ না করে তামাক ব্যবহার হ্রাস করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
ভয়েজ অব ডিসকভারির কার্যক্রম নিষিদ্ধ বাংলাদেশ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধে একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। ১৯৯৯ সালে বিএটি’র গোল্ডলীফ সিগারেটের প্রচারতরী হিসেবে ভয়েজ অব ডিসকভারী লন্ডন থেকে যাত্রা শুরু করে ১৭০ দিনে ১৬টি দেশ ভ্রমণ করে বাংলাদেশে আসে। এজন্য কোম্পানি টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ায়, বিলবোর্ড, পোস্টারসহ বিভিন্নভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। সিগারেটের এই প্রচারতরী বাংলাদেশে আসার প্রতিবাদে সম্মিলিতভাবে মানববন্ধন, র্যালি, সমাবেশ, গোলটেবিল বৈঠকসহ নানা কর্মসূচির পাশাপাশি মহামান্য হাইকোর্টে বিভাগে রিট পিটিশন দাখিল করে । জোটভূক্ত সংগঠনগুলো রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে ভয়েজ অব ডিসকভারির প্রচারণামূলক কার্যক্রম এর উপর ২২ নভেম্বর ১৯৯৯ হাইকোর্ট হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। শুধু তাই নয় দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচার ২৮ নভেম্বর ১৯৯৯ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল । ভয়েজ অব ডিসকভারির নিষিদ্ধের সংবাদ দেশে ও আন্তর্জাতিক পত্র পত্রিকায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশ পায়।
২৮ জুলাই ২০০১ থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ শিশু-কিশোরদের ধূমপান নিরুৎসাহিত করার কর্মসূচি শুরু করে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা টেলিভিশন ও গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করে। হোটেল শেরাটন (বর্তমান রুপসী বাংলায়)-এ বিশাল জমকালের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইয়ুথ প্রিভেনশন ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়। তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো তামাক কোম্পানির এ ধরনের কার্যক্রমকে প্রহসন হিসেবে অবহিত করে ব্যাপক প্রতিবাদ কার্যক্রম গ্রহণ করে। তামাক কোম্পানির এ ধরনের অব্যাহত প্রতিবাদের পর তামাক কোম্পানির ইয়ুথ প্রিভেনশনের এ কার্যক্রম বেশিদিন অব্যাহত ছিল না। যা বাংলাদেশে তামাক বিরোধী কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।
২০০৩ সালে ইম্পেরিয়াল টোবাকো কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা বাংলাদেশে তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। ইম্পেরিয়াল টোবাকো কোম্পানী বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা শুরু করার লক্ষ্যে পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করে। বিজ্ঞাপনের বিষয় ছিল ঞঐঅগঊঝ সিগারেট খাওয়ার প্রেক্ষিতে লটারিতে পাওয়া যাবে ইংল্যান্ডে যাওয়ার সুযোগ। এ ধরনের প্রলোভন দিয়ে ব্যাপক প্রচারণা শুরু করে। লটারির মাধ্যমে এ ধরনের প্রলোভন বাংলাদেশ দন্ডবিধির ২৯৪বি লঙ্ঘন। বাংলাদেশে তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ইম্পেরিয়াল টোবাকো কোম্পানির ঞঐঅগঊঝ ব্রান্ডের প্রচারণা কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা ও রীট পিটিশন দায়ের করা হয় । উক্ত মামলায় ইম্পেরিয়াল টোব্যাকো কোম্পানির কার্যক্রমের উপর আদালত অস্থায়ী নিষেধ জারি করেন।
বাংলাদেশে বেসরকারী টেলিভিশনগুলোতে চ্যানেলে এক সময় প্রচুর তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো। তবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সিগারেটের বিজ্ঞাপন হতো না । তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো স্যাটেলাইট চ্যালেনে বিজ্ঞাপন বন্ধের জন্য ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-র পক্ষে টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবি জানানো হয়। স্টিকার, পোষ্টার, লিফলেট, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের বিষয়ে জনমত সৃষ্টির কার্যক্রম চালায় । তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তথ্য মন্ত্রণালয় সকল বেসরকারী টেলিভিশনকে রাত ১০ টার পর তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচারের নির্দেশনা প্রদান করে ।
তামাক কোম্পানিগুলো সিংগীত শিল্পী এবং অভিনয় শিল্পীদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন তৈরি ও অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু করে। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটভুক্ত সংগঠনগুলো শিল্পীদের তামাক কোম্পানিগুলোর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করার অনুরোধ জানিয়ে পত্র প্রদানসহ বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। তৎকালীন একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ‘‘শেষ পর্যন্ত সিগারেটটি ধরে ফেললাম’’ শিরোনামে এক তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। যদিও পরবর্তীতে তিনি এ ধরনের বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহন তার ভুল হিসেবে স্বীকার করেন ।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞাপনের বন্ধের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ এ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপনের নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের নমুনা বিতরণ এবং বিনামূল্যে প্রদান, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে উৎসাহী করতে কোন দান, পুরষ্কার, বৃত্তি বা স্কলারশীপ প্রদান ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়। আইনের বিধান লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে অনুর্ধ্ব তিনমাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক এক হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডের বিধান করা হয়।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির প্রেক্ষিতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সিগারেটের বিজ্ঞাপন বন্ধ হলেও তামাক কোম্পানিগুলো ভিন্নভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার অব্যাহত রাখে। সিগারেটের ছোট ছোট টং দোকান, পোষ্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, সাইনবোর্ডসহ নানা উপায়ে কোম্পানিগুলো আইনভঙ্গ করে বিজ্ঞাপন পরিচালনা করে। তামাক কোম্পানিগুলো সারা দেশে আইনভঙ্গ করলেও তামাক কোম্পানিকে শাস্তি/জরিমানা করা হয়নি। বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘনের জন্য ছোট দোকানদারদের জরিমানা করা হয়। তবে কোন ব্যক্তিকে জেল প্রদান করার তথ্য পাওয়া যায়নি। কোন ছোট দোকানীকে জরিমানা করে হলে কোম্পানি সে পরিমান টাকা দোকানীকে আবার দিয়ে যেত বলে অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিগুলো নিত্যনতুন বিজ্ঞাপন প্রচারে উৎসাহী করতে দোকানীদের অর্থসহ নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা প্রদান করে থাকে। সার্বিক দিক বিবেচনায় দেখা যায় ২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির প্রয়োগ মুলত ধূমপায়ীদের উপরই প্রয়োগ করা হয় ।
তামাক কোম্পানীগুলো আইন মানছে না। অপরদিকে কিছু ক্ষেত্রে আইনের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে, উপহার সামগ্রী প্রদানের মাধ্যমে নানাভাবে তামাকজাত দ্রব্যের প্রচারনামূলক উদ্ভুদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যে বিষয়গুলো আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি এমন ক্ষেত্রে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। যেমন-নাটক সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন, নাম ও লোগো ব্যবহার করে বৃক্ষরোপনসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা ইত্যাদি। এসকল সমস্যার সমাধানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ২৯ এপ্রিল ২০১৩ জাতীয় সংসদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী বিল পাশ হয়। ২ মে ২০১৩ মহামান্য রাষ্ট্রপতি আইনটি বাংলাদেশে কার্যকরে জন্য অনুমোদন করে। এই সংশোধনীতে তামাকজাত দ্রব্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৫ সালের আইনের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানের অনেক কিছুই এ আইনে বলবৎ রয়েছে।
নতুন যে সকল বিষয় সংশোধনীতে যুক্ত করা হয়েছে, তা হলো: কোন প্রেক্ষাগৃহে, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বা ওয়েব পেজে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য সম্পর্কিত কোন বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ, বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত, বিদেশে প্রস্তুতকৃত কোন সিনেমা, নাটক বা প্রমান্য চিত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা অন্য কোন গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শন বা বর্ণনা নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচীর মাধ্যমে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, সাইন, ট্রেডমার্ক, প্রতীক ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য ।
আইনের সংশোধনীতে বিজ্ঞাপনের লংঘন করিলে তিনি অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে এবং কোন ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দন্ডের দ্বিগুণ হারে দন্ডের বিধান করা হয়েছে। ২০০৫ সালের আইনের বিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্যক্তিকে জরিমানা প্রদান করা সম্ভব ছিল। সংশোধনী অনুসারে ব্যক্তি পাশাপাশি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা প্রদান করা সম্ভব হবে।
তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন কিশোর-তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। নতুন নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টির প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হলে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে। তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় ‘‘তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারনা এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ’’। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীতে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধে অনেক বিধানযুক্ত করা হয়েছে। সংশোধনীতে নিষিদ্ধ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন অপসারণের জন্য স্বল্পতম সময় বেধে দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেয়া প্রয়োজন। এ ধরনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম আইন বাস্তবায়নের পথকে সহজ করবে।
তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনভঙ্গের ক্ষেত্রে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলে ফ্যাক্স, ইমেইল বা চিঠির মাধ্যমে অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এই অভিযোগ কেন্দ্র সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। যাতে মানুষ আইনভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করে। এ প্রক্রিয়া সরকারের আইন মনিটরিং ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সহজতর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির কার্যকর প্রয়োগ যুবকদের মাঝে তামাক ব্যবহার কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বিগত সময়ে দেখা গেছে ধূমপানমুক্ত স্থান সংক্রান্ত বিধান বাস্তবায়নে যে পরিমান গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধে বিধান বাস্তবায়নে সে ধরনের গুরুত্ব প্রদান হয়নি । তাই বর্তমানে আইনটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার প্রদান করা জরুরি।
লেখক : বিশিষ্ট আইনজীবী এবং এনজিওকর্মী