নাসির উদ্দিন হায়দার :: সরকার তার শেষ বেলায় এসে সংবাদপত্র-কর্মীদের জন্য নতুন ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করেছে। এতে সংবাদপত্রকর্মীদের শতকরা ৭৫ ভাগ বেতন বেড়েছে। ঘটনা সামান্য নয়। এখন একজন স্টাফ রিপোর্টার বা সাব এডিটর ৩০ হাজার টাকার বেশি বেতন পাবেন। শিক্ষানবীশরা হয়তো এরচেয়ে খানিকটা কম পাবেন। তাহলে ভাবুন সিনিয়র সাব এডিটর, বিশেষ প্রতিনিধি ও বার্তা সম্পাদকদের বেতন কত হবে?
সরকার অবশ্যই শেষ বেলায় একটা প্রশংসনীয় কাজ করেছে। অনেকে এতে অন্য কিছু দেখছেন। যেমন কারও ধারণা সাংবাদিকদের মন পাওয়ার জন্য সরকার ওয়েজবোর্ডের সুপারিশের চেয়েও শতকরা ৫ ভাগ বেশি বেতন বাড়িয়েছে। আগামী নির্বাচনে হয়তো এটা কাজে দেবে। সরকার সাংবাদিকদের মন পাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সাংবাদিকদের মন পেলেই কি সরকারের আশা পূরণ হবে? আসলে সরকারের মন পেতে হবে সংবাদপত্র মালিক ও সম্পাদকদের। কারণ মালিক বা সম্পাদকের মতের বাইরে সাংবাদিকরা কিন্তু এক লাইনও লিখতে পারেন না, বা পারবেন না।
ওয়েজবোর্ড নিয়ে কি আসলে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কিছু আছে? আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি দেশের হাতেগোনা কয়েকটি হাউস ছাড়া আর কোনো পত্রিকা ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করবে না। সব সরকারই ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করে তার দায়িত্ব শেষ করে, বাস্তবায়নের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। ভবিষ্যতেও একই চিত্র দেখা যাবে এটা নিশ্চিত।
আমার জানা মতে, অনলাইন নিউজপেপারের জন্য এখনো কোনো নীতিমালা তৈরি হয়নি। আবার অনলাইন পত্রিকার জন্য ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন ব্যাধতামূলক না হলেও বিডি নিউজ ও বাংলা নিউজ পূর্ণ ওয়েজবোর্ড দেয় কর্মীদের। কিন্তু দেশের শত শত অনলাইন পত্রিকা এসবের ধার ধারে না।
ওয়েজবোর্ড নিয়ে মালিকরা কিন্তু অনেক নাটকও করে। যেমন এখন অনেক পত্রিকা ডিএফপিকে দেখানোর জন্য সাংবাদিকদের চেকের মাধ্যমে ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন দেয়। কিন্তু আগে থেকেই কর্মীদের সাথে মালিকপক্ষের মৌখিক চুক্তি থাকে। সে অনুযায়ী পরে অতিরিক্ত টাকা নগদ ফেরত নেয়। শুভংকরের ফাঁকি আর কাকে বলে!
নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি। আমি ২০০৫ সাল থেকে ২০১১ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রথম আলোতে ওয়েজবোর্ডের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চাকরি করেছি। শেষ কয়েক বছর থেকে ওয়েজবোর্ডেরও বেশি সুবিধা দিয়ে আসছে পত্রিকাটি। সেই এক সুখের দিন ছিল। ‘সুখের লাগিয়া বাঁধিনু এ ঘর…’ হয়তো আমার সুখ শেষ হয়ে গেছে, কারণ আমি এখন প্রথম আলোতে নেই। তবে আমি খুশি আমার সহকর্মীরা ওই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
সবশেষে একটা প্রত্যাশা-নতুন ওয়েজবোর্ড হলো, বেতনও বাড়লো, সাংবাদিকতার নামে অসাধুতা কমবে কি?
নাসির উদ্দিন হায়দার, সাংবাদিক