ফকির ইলিয়াস, নিউইয়র্ক :: হলভর্তি দর্শক-শ্রোতা। এরা সবাই কাব্যপ্রেমি। চমৎকার আরেকটি কাব্যসন্ধ্যা উপহার দিলেন কবি শহীদ কাদরী। আমেরিকান সামারের খ্যাতির সাথে তাল মিলিয়ে এটি ছিল একটি নান্দনিক বিকেল। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরী বলেছেন, মৌলিক কবি পৃথিবীতে কেউ নেই। যিনি প্রথম কবিতা লিখেছিলন, তিনিই মৌলিক কবি। কারণ তিনিই প্রথম কবিতাটি লিখেছিলেন। আমি মনে করি সব ভালো কবিই মৌলিক কবি। ব্যক্তিসত্তা দ্বারা কবিতা রঞ্জিত হয়। দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিকত্বই কবিকে বাঁচিয়ে রাখে। শিল্পে মৌলিকতাই হচ্ছে ভাবনার সৃজনশীলতা। কবি বলেন, বিজ্ঞান বস্তুকে বুঝার চেষ্টা করে। আর কবিতা কল্পনাকে রাঙায়। শহীদ কাদরী আয়োজিত ‘ একটি কবিতা সন্ধ্যা’র এটি ছিল দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। ১৫ জুন ২০১৩ শনিবার বিকেলে নিউইয়র্কের জ্যামাইকার একটি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান।
কবি শহীদ কাদরী বাংলা একাডেমী পরিচালিত ‘মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার’ ২০১২-এ ভূষিত হয়েছেন। তা নিয়ে অভিবাসীদের মাঝে ছিল আনন্দের বন্যা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই গোটা অভিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে কবিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান কবি ফকির ইলিয়াস।কবির ‘ হে হিরন্ময় ‘ কবিতাটি পড়ে ফকির ইলিয়াস বলেন, শহীদ কাদরীর কাছে বাংলা কবিতা ঋণী। আসুন আমরা দাঁড়িয়ে এই কবিকে সম্মান জানাই।এসময় প্রবাসের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন কবিকে গোলাপ তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপরই শুরু হয় আলাপচারিতা । এই পর্ব সন্চালনা করেন ফারুক ফয়সল। আলাপচারিতা পর্বে কবি শহীদ কাদরীর সাথে অংশ নেন- কবি ফকির ইলিয়াস, কবি তমিজ উদদীন লোদী ও কবি শামস আল মমীন। এবার লিখিত প্রশ্নাবলী আহ্বান করা হয়। প্রশ্নকর্তাদের মাঝে ছিলেন- দলিলুর রহমান, জেসমিন আরা ও রাজিয়া নাজমী শামীম। এক প্রশ্নের উত্তরে ফকির ইলিয়াস বলেন, সৃজনশীলতার উৎকর্ষ সাধনের জন্য একজন কবির নিয়মিত পড়াশোনা করা জরুরী বিষয়। কোনো কর্মশালা সেই কবিকেই শাণিত করতে পারে, যার মাঝে ধারণ করার শক্তি আছে। কবি ফকির ইলিয়াস বলেন, ছড়া চটজলদি কিছু বিষয়কে জনপ্রিয় করে তুলতে পারে ঠিকই, কিন্তু কাব্য সব সময় নির্মিত হয় বড় ক্যানভাসে। আরেকটি প্রশ্নের জবাবে ফকির ইলিয়াস বলেন, বিজ্ঞানে আবিষ্কারে মৌলিকতা আর কবিতার মৌলিকতা এক নয়। কারণ কাব্যমানস লালিত হয় কল্পনার ব্যাপৃতির উপর। আর বিজ্ঞান এগিয়ে চলে বাস্তবতাকে ভিত্তি করে। তিনি বলেন, একজন আবৃত্তিকার যত বেশি নিজকে কবিতার সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন তত বেশিই কবিতাটি জনপ্রিয়, নন্দিত হয়ে উঠে। প্রশ্নের জবাবে কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, অন্তমিলের কবিতা থেকে রবীন্দ্রনাথও বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। বেরিয়ে এসেছিলেন।প্রত্যেক কবিকেই ছন্দ-প্রকরণ জানতে হবে। তারপর নির্ভর করবে তিনি কীভাবে ভাঙছেন কিংবা নতুনত্বের জন্ম দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, জীবনের রোমান্টিকতাই নতুন বাঁকের জন্ম দেয়। প্রশ্নের জবাবে কবি শামস আল মমীন বলেন, কবিতার ক্রিয়েটিভ ফ্লো হচ্ছে নিজের সত্তাকে নিজের মতো করে প্রকাশের দক্ষতা অর্জন। প্রতীকি অর্থে কিংবা ভাবনা জগতে স্বকীয়তা তৈরির বিষয়টি তাই বার বার আসে। তিনি বলেন, নিয়ম ভাঙারও একটা নিয়ম আছে। সে নিয়মটি না জেনেই অনেকে বলছেন তারা প্রথা ভাঙছেন। মুক্তছন্দের যে অনুরণন, তা বুঝার শক্তি ও দক্ষতা অর্জন করতে না পারলে সেই মাঠে দাঁড়ানোই সম্ভব নয়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দেন কবি শহীদ কাদরী। তিনি বলেন, আধুনিক মার্কিনী কবিতা, চৈনিক ( চীনা ) কবিতা দ্বারা প্রভাবিত। পাশ্চাত্যের অনেক কবি প্রাচ্য দ্বারা প্রভাবিত। তিনি বলেন, রোমান্টিসিজম নিয়মের বলয় ভেঙেই তৈরি হয়। অন্যজগতের অতিরিক্ত কিছুকে দেখাই রোমান্টিসিজম।নতুন সমাজ নির্মাণের ধ্যান ধারণাই রোমান্টিক। আমি বলি, কার্ল মার্ক্সস রোমান্টিক ছিলেন।
শহীদ কাদরী বলেন, আমার যে প্রশ্নটি অনেক সময় মনে হয় তা হচ্ছে, ” আমি কি করলে আরও ভালো কবিতা লিখতে পারি, এই প্রশ্নটি আমাকে কেউ করলো না”। যশপ্রার্থী নবীন কবিরা আমাকে এই প্রশ্ন করলে আমি খুশি হতাম। তিনি বলেন, পড়াশোনার কোনো বিকল্প নাই। কবি বলেন, আমাদেরকে দুটো ঘটনা খুব বেশি মুক্তপথে ঠেলে দিয়েছে। একটি হচ্ছে এ্যাবস্ট্রাক্ট পেইন্টিংস আর অন্যটি হচ্ছে গদ্য কবিতা। অনেকে মনে করেন রংতুলি দিয়ে কয়েকটি আঁচড় দিলেই ‘এ্যাবস্ট্রাক্ট’ হয়ে গেল। আর টানা গদ্যে কিছু পংক্তি লিখলেই তা কবিতা হয়ে গেল। তা কিন্তু নয়। কবিতার চিত্রকল্প, বাক্য বিনির্মাণ, উপমা শৈলী কে কতটা উজ্জ্বল এবং ভিন্নতরভাবে লিখতে পারছেন তার উপর নির্ভর করবে কবিতায় টিকে থাকা- না থাকা।
শহীদ কাদরী বলেন, ছন্দ শেখা যায়। কবিতা শেখা যায় না। কবিতার ওয়ার্কশপে গিয়ে শেখা যায় অনেক কিছু। কিন্তু তা কাজে লাগাবার যোগ্যতা থাকতে হবে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল – ‘ বাংলাদেশের কবিদের কবিতা’। এই পর্বে শামসুর রাহমানের কবিতা আবৃত্তি করেন মিজানুর রহমান প্রধান ও শাহানা বেগম রীনা। রফিক আজাদের কবিতা আবৃত্তি করেন- মোশাররফ হোসেন ও ক্লারা রোজারিও। আবদুল মান্নান সৈয়দের কবিতা আবৃত্তি করেন- এজাজ আলম ও ফারহানা পলি। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর কবিতা আবৃত্তি করেন- আবীর আলমগীর ও জাকির হোসেন আরজু। অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে ছিল অভিবাসী কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ। কবিতা পড়েন- ফকির ইলিয়াস, তমিজ উদদীন লোদী, শামস আল মমীন, মোখলেসুর রহমান, মঞ্জুর কাদের, আহমেদ ছহুল, লুবনা কাইজার, নীলুফার রেজা পারভীজ, ও কাজী আবুল কাশেম। একটি কবিতা সন্ধ্যার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন নীরা কাদরী। শব্দ নিয়ন্ত্রণে শাহেদ চৌধুরী। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা স্থায়ী এই অনুষ্ঠানটি গোটা উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আগামী অনুষ্ঠান হবে সেপ্টেম্বর ২০১৩ মাসে।
কবি শহীদ কাদরী বাংলা একাডেমী পরিচালিত ‘মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার’ ২০১২-এ ভূষিত হয়েছেন। তা নিয়ে অভিবাসীদের মাঝে ছিল আনন্দের বন্যা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই গোটা অভিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে কবিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান কবি ফকির ইলিয়াস।কবির ‘ হে হিরন্ময় ‘ কবিতাটি পড়ে ফকির ইলিয়াস বলেন, শহীদ কাদরীর কাছে বাংলা কবিতা ঋণী। আসুন আমরা দাঁড়িয়ে এই কবিকে সম্মান জানাই।এসময় প্রবাসের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন কবিকে গোলাপ তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপরই শুরু হয় আলাপচারিতা । এই পর্ব সন্চালনা করেন ফারুক ফয়সল। আলাপচারিতা পর্বে কবি শহীদ কাদরীর সাথে অংশ নেন- কবি ফকির ইলিয়াস, কবি তমিজ উদদীন লোদী ও কবি শামস আল মমীন। এবার লিখিত প্রশ্নাবলী আহ্বান করা হয়। প্রশ্নকর্তাদের মাঝে ছিলেন- দলিলুর রহমান, জেসমিন আরা ও রাজিয়া নাজমী শামীম। এক প্রশ্নের উত্তরে ফকির ইলিয়াস বলেন, সৃজনশীলতার উৎকর্ষ সাধনের জন্য একজন কবির নিয়মিত পড়াশোনা করা জরুরী বিষয়। কোনো কর্মশালা সেই কবিকেই শাণিত করতে পারে, যার মাঝে ধারণ করার শক্তি আছে। কবি ফকির ইলিয়াস বলেন, ছড়া চটজলদি কিছু বিষয়কে জনপ্রিয় করে তুলতে পারে ঠিকই, কিন্তু কাব্য সব সময় নির্মিত হয় বড় ক্যানভাসে। আরেকটি প্রশ্নের জবাবে ফকির ইলিয়াস বলেন, বিজ্ঞানে আবিষ্কারে মৌলিকতা আর কবিতার মৌলিকতা এক নয়। কারণ কাব্যমানস লালিত হয় কল্পনার ব্যাপৃতির উপর। আর বিজ্ঞান এগিয়ে চলে বাস্তবতাকে ভিত্তি করে। তিনি বলেন, একজন আবৃত্তিকার যত বেশি নিজকে কবিতার সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন তত বেশিই কবিতাটি জনপ্রিয়, নন্দিত হয়ে উঠে। প্রশ্নের জবাবে কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, অন্তমিলের কবিতা থেকে রবীন্দ্রনাথও বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। বেরিয়ে এসেছিলেন।প্রত্যেক কবিকেই ছন্দ-প্রকরণ জানতে হবে। তারপর নির্ভর করবে তিনি কীভাবে ভাঙছেন কিংবা নতুনত্বের জন্ম দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, জীবনের রোমান্টিকতাই নতুন বাঁকের জন্ম দেয়। প্রশ্নের জবাবে কবি শামস আল মমীন বলেন, কবিতার ক্রিয়েটিভ ফ্লো হচ্ছে নিজের সত্তাকে নিজের মতো করে প্রকাশের দক্ষতা অর্জন। প্রতীকি অর্থে কিংবা ভাবনা জগতে স্বকীয়তা তৈরির বিষয়টি তাই বার বার আসে। তিনি বলেন, নিয়ম ভাঙারও একটা নিয়ম আছে। সে নিয়মটি না জেনেই অনেকে বলছেন তারা প্রথা ভাঙছেন। মুক্তছন্দের যে অনুরণন, তা বুঝার শক্তি ও দক্ষতা অর্জন করতে না পারলে সেই মাঠে দাঁড়ানোই সম্ভব নয়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দেন কবি শহীদ কাদরী। তিনি বলেন, আধুনিক মার্কিনী কবিতা, চৈনিক ( চীনা ) কবিতা দ্বারা প্রভাবিত। পাশ্চাত্যের অনেক কবি প্রাচ্য দ্বারা প্রভাবিত। তিনি বলেন, রোমান্টিসিজম নিয়মের বলয় ভেঙেই তৈরি হয়। অন্যজগতের অতিরিক্ত কিছুকে দেখাই রোমান্টিসিজম।নতুন সমাজ নির্মাণের ধ্যান ধারণাই রোমান্টিক। আমি বলি, কার্ল মার্ক্সস রোমান্টিক ছিলেন।
শহীদ কাদরী বলেন, আমার যে প্রশ্নটি অনেক সময় মনে হয় তা হচ্ছে, ” আমি কি করলে আরও ভালো কবিতা লিখতে পারি, এই প্রশ্নটি আমাকে কেউ করলো না”। যশপ্রার্থী নবীন কবিরা আমাকে এই প্রশ্ন করলে আমি খুশি হতাম। তিনি বলেন, পড়াশোনার কোনো বিকল্প নাই। কবি বলেন, আমাদেরকে দুটো ঘটনা খুব বেশি মুক্তপথে ঠেলে দিয়েছে। একটি হচ্ছে এ্যাবস্ট্রাক্ট পেইন্টিংস আর অন্যটি হচ্ছে গদ্য কবিতা। অনেকে মনে করেন রংতুলি দিয়ে কয়েকটি আঁচড় দিলেই ‘এ্যাবস্ট্রাক্ট’ হয়ে গেল। আর টানা গদ্যে কিছু পংক্তি লিখলেই তা কবিতা হয়ে গেল। তা কিন্তু নয়। কবিতার চিত্রকল্প, বাক্য বিনির্মাণ, উপমা শৈলী কে কতটা উজ্জ্বল এবং ভিন্নতরভাবে লিখতে পারছেন তার উপর নির্ভর করবে কবিতায় টিকে থাকা- না থাকা।
শহীদ কাদরী বলেন, ছন্দ শেখা যায়। কবিতা শেখা যায় না। কবিতার ওয়ার্কশপে গিয়ে শেখা যায় অনেক কিছু। কিন্তু তা কাজে লাগাবার যোগ্যতা থাকতে হবে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল – ‘ বাংলাদেশের কবিদের কবিতা’। এই পর্বে শামসুর রাহমানের কবিতা আবৃত্তি করেন মিজানুর রহমান প্রধান ও শাহানা বেগম রীনা। রফিক আজাদের কবিতা আবৃত্তি করেন- মোশাররফ হোসেন ও ক্লারা রোজারিও। আবদুল মান্নান সৈয়দের কবিতা আবৃত্তি করেন- এজাজ আলম ও ফারহানা পলি। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর কবিতা আবৃত্তি করেন- আবীর আলমগীর ও জাকির হোসেন আরজু। অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে ছিল অভিবাসী কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ। কবিতা পড়েন- ফকির ইলিয়াস, তমিজ উদদীন লোদী, শামস আল মমীন, মোখলেসুর রহমান, মঞ্জুর কাদের, আহমেদ ছহুল, লুবনা কাইজার, নীলুফার রেজা পারভীজ, ও কাজী আবুল কাশেম। একটি কবিতা সন্ধ্যার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন নীরা কাদরী। শব্দ নিয়ন্ত্রণে শাহেদ চৌধুরী। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা স্থায়ী এই অনুষ্ঠানটি গোটা উত্তর আমেরিকায় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আগামী অনুষ্ঠান হবে সেপ্টেম্বর ২০১৩ মাসে।