বাবলু দাশ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) থেকে :: দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে অতীত ঐতিহ্যের ঋতু ভেঙে প্রতিকূল অবস্থায় অস্বাভাবিকভাবে গত রোববার কার্পস জাতীয় মা-মাছ ডিম ছেড়েছে। রোববার ভোর থেকেই রুই, কাতাল, মৃগেল, কালিবাউশ মাছের ডিম ছাড়ার নমুনা পেয়েছেন। এরপর দুপুরে আবারো মেঘের গর্জনের ফলে দ্বিতীয় দফায় পুরোদমে পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়ে মা-মাছ। ভারী বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া আর বজ্রপাত উপেক্ষা করে ডিম সংগ্রহ করছে মৎস্যজীবীরা। হালদা পাড়ে চলছে ডিম সংগ্রহকারীদের উৎসব।
স্থানীয় জেলেরা জানান, প্রবল মেঘের গর্জন ও বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের তোড়ে নদীতে প্রবল স্রোতে ডিম ছেড়েছে মা-মাছ। এবার একটু আগে হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা-মাছ। তবে গতবারের তুলনায় এবার আশানুরূপ ডিম পাওয়া যায়নি বলে জানান হালদা পাড়ের বেশ কয়েকজন ডিম সংগ্রহকারী। তাই পর্যাপ্ত ডিম না পাওয়ায় ডিম আহরণ করতে না পারায় সংগ্রহকারী জেলেদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশার চিত্র।
হালদাপাড়ে ডিম ছাড়ার স্থানসমূহ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রায় ৬/৭ শত নৌকা ও জাল নিয়ে হালদার হাটহাজারী ও রাউজানের দুই অংশের নয়াহাট, নাপিতেরঘাট, রামদাশ হাট, কুমিরা খালের মুখ, গড়দুয়ারা, হাটহাজারীর মাদার্শা, মুন্সিরহাট, আজিমার ঘাট, কাগতিয়া, অংকুরীঘোনা, আমতোয়া, শহীদ খালের বাঁক, পুরালিয়া খাল, বাড়িঘোনা রাম দাশ, বিনাজুরী, মহিষ করম (উরকিরচর) হতে মদুনাঘাট পর্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন স্পটে ডিম আহরণ করতে দেখা গেছে। গড়দুয়ারা এলাকার ডিম সংগ্রাহক বিধান বড়–য়া ও শ্যামল বড়–য়া জানান, বাঁক কাটা ও মা-মাছ নিধনের কারণে প্রতিবারের ডিম ছাড়ার নির্দিষ্ট স্থানে ডিম না ছেড়ে মা-মাছ আরো ভাটিতে নেমে ডিম ছেড়েছে। হালদায় বাঁক কাটা, ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলনের কারণে হালদার মা-মাছ কমে গেছে। জেলেরা সেখানে গেলেও আশানুরূপ ডিম না পেয়ে তারা পুরো হালদা চষে বেরিয়ে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ দেখে জেলেরা হতাশ।
হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর মনজুরুল কিবরিয়া জানান, এবার হালদা নদীতে তুলনামূলকভাবে কম ডিম পেয়েছে সংগ্রহকারীরা। নদীতে ৬/৭শ নৌকার ডিম সংগ্রহকারীরা জাল নিয়ে অপেক্ষা করলেও অনেক অপেক্ষমাণ সংগ্রহকারীরা খালি হাতে ফিরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। তিনি বলেন, এবার নদীতে মা-মাছের পরিমাণ ছিল খুবই কম কেননা নদীর জলদস্যুরা আগে থেকেই মাছগুলো জাল দিয়ে ধরে ফেলে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন, হালদার দুই পার্শ্বে ইটভাটা, রাবারড্যাম স্থাপন ও মিল কারখানার বর্জ্য নদীতে পতিত হয়ে নদীর ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো জানান, এবার প্রতি নৌকায় ১৪ লিটারের বালতিতে জেলেরা আধাবালতি করে ডিম আহরণ করেছে যা ৩/৪ কেজি হবে। রাউজান-হাটহাজারী উপজেলা সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীতে প্রতি বছর চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসে ডিম ছাড়ে মা-মাছ। পোনার চেয়ে হালদার নদীর পোনা বেশি বাড়ে বলে এ পোনার কদর সারা দেশে।