
ব্রিটিশ আপিল কোর্ট আশ্রয়প্রার্থীদের লন্ডনের কাছে এপিং এলাকায় একটি হোটেলে রাখার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে। সরকার যুক্তি দিয়েছিল, এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসনের সক্ষমতায় ‘গুরুতর’ প্রভাব ফেলবে এবং নতুন বিক্ষোভকে উসকে দিতে পারে।
ব্রিটিশ সরকারের জন্য এটি এই বিষয়ক প্রথম আইনি সাফল্য৷ শুক্রবার (২৯ আগস্ট) আদালত রায়ে জানিয়েছে, গত ১৯ আগস্ট যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল তা বাতিল করা হলে আশ্রয়প্রার্থীদের ওই হোটেলে রাখার প্রক্রিয়া আর বাধাগ্রস্ত হবে না।
আদালত জানায়, ‘আমরা আপিল মঞ্জুর করছি এবং ১৯ আগস্ট ২০২৫-এর আরোপিত আদেশ বাতিল করছি।’
এর ফলে ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৩০ জনের বেশি আশ্রয়প্রার্থীকে হোটেল থেকে সরিয়ে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেটি আর কার্যকর থাকছে না।
আদালত রায়ে জানায়, হাইকোর্টের বিচারক একাধিক মৌলিক ভুল করেছিলেন। আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ হলে বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এটি স্পষ্ট বাস্তবতা, যা তিনি বিবেচনায় নেননি।
বিচারক আরও উল্লেখ করেন, যদি অন্য জেলা প্রশাসনগুলোও এপিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করত, তবে তার প্রভাব ভয়াবহ হতো। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন আবেদনের সম্ভাব্য প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সেটি বিবেচনা করা হয়নি।
এই যুক্তিই ছিল সরকারের মূল ভরসা। বৃহস্পতিবার আদালতে সরকার দাবি করে, হোটেল বন্ধের নির্দেশ আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বিকল্প খোঁজার সক্ষমতাকে বিপর্যস্ত করবে।
“এই অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর হলে একটি নজির তৈরি হবে। যা সরকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক হতে পারে,” বলেন সরকারের প্রতিনিধি।
হোটেলেই থাকছেন হাজারো মানুষ
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ১ লাখ ১১ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার অস্থায়ীভাবে ২০০-র বেশি হোটেলে রাখা হয়েছে। তাদের জন্য সরকারের কাছে কার্যকর বিকল্প পরিকল্পনা নেই।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় হোম অফিস আবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, এই সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই হোটেল-নির্ভর আবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করা হবে।
তাদের দাবি, আমরা এই আপিল করেছিলাম যাতে বেল হোটেলের মতো জায়গা পরিকল্পিতভাবে বন্ধ করা যায়। গত কয়েক বছরে ৪০০ হোটেল খোলা হয়েছিল, যার খরচ প্রতিদিন ৯ মিলিয়ন পাউন্ডে দাঁড়িয়েছিল। সেই বিশৃঙ্খলা আমরা আর চাই না।
তবে এই জয় সরকারের জন্য সাময়িক। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেল ব্যবহারের বিরোধে প্রতিবাদ হচ্ছে। আদালতের নতুন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও শিগগিরই নতুন সমাবেশ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সোলোমন বলেন, “যতদিন হোটেল খোলা থাকবে, ততদিন এগুলো বিক্ষোভের কেন্দ্র হয়ে থাকবে। এতে বিভাজন বাড়বে এবং যুদ্ধ ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা মানুষজন আরও অনিরাপদ মনে করবে।”
তার মতে, ২০২৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা আর কোনো সমাধান নয়।
সংখ্যা বেড়েই চলেছে
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ১ লাখ ১১ হাজার আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে, যা ২০০১ সালের পর সর্বোচ্চ।
এদিকে ব্রিটিশ উপকূলে ‘স্মল বোটস’ বা ছোট নৌকায় আগমনও রেকর্ড ছুঁয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি মানুষ সমুদ্রপথে বিটেনে এসেছেন। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেশি (২০২৪ সালের একই সময়ে ১৯ হাজার ২৯৪ জন এসেছিল)।
সব মিলিয়ে, আপিল কোর্টের এই রায় সরকারের জন্য সাময়িক স্বস্তি হলেও অক্টোবরের মাঝামাঝি আবারও আদালতে বেল হোটেল স্থায়ীভাবে বন্ধ করার আবেদন শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস।