বার্তাবাংলা ডেস্ক »

বাস্তবে সবাই যেখানে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন; সেখানে অন্যকিছু ভাবছেন সুব্রত চক্রবর্তী। নিজের আর্থিক সঙ্কটের কথা চিন্তা করেও শিশুদের নৈতিক শিক্ষার ব্যাপারে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সংগ্রাম করে চলা সুব্রত চক্রবর্তীর এগিয়ে যাওয়ার গল্প শোনাচ্ছেন সজীব বণিক-

নিম্নমধ্যবিত্তের পরিবার। প্রতিদিন সংগ্রাম করে চলতে হয়। তার মাঝে বাবা সুভাষ চক্রবর্তী স্ট্রোকের রোগী। চলাফেরা করতে পারেন না। সুভাষ চক্রবর্তীর ছেলে সুব্রত চক্রবর্তী। পড়াশোনার পাশাপাশি এলাকার শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। এককভাবে ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা ও নৈতিক শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও প্রসারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

গুরুদয়াল কলেজের বিবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সুব্রত মনে করেন, ‘প্রত্যেক শিশুর নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন। নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয় যে কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক। দেশে অনেক শিশু রয়েছে, যারা ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে খারাপ পথে ধাবিত হচ্ছে। তাই এদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য চাই যুগোপযোগী সচেতনতা ও ধর্মীয় শিক্ষা।’

সুব্রত চক্রবর্তীর বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের নগরকূল গ্রামে। নৈতিক শিক্ষার অভাবের ফলে শিশুরা কিভাবে বিপদগামী হচ্ছে, কেন হচ্ছে- এ ব্যাপারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বোঝাতে চেষ্টা করেন সুব্রত। প্রথম দিকে ১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠশালা শুরু করলেও বর্তমানে এর সদস্য প্রায় ৮০ জন।

তিন বছর আগে একক প্রচেষ্টায় মৌখিকভাবে এলাকার কয়েকজনকে প্রাথমিক সদস্য করে অনানুষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলেন ‘গীতা সাধনা সংঘ’ পাঠশালা। শুরু হয় পথচলা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করেন সনাতন ধর্মের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী। সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ প্রতি শুক্রবার এককভাবে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিয়ে আসছেন সুব্রত। বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড থেকে কাব্যতীর্থ ও স্মৃতিতীর্থ পাস করা সুব্রতর পাঠশালায় ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

একক প্রচেষ্টায় সুব্রত শিক্ষক হিসাবে এলাকায় সুনাম ছড়ানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে গত ১৩ জুলাই এলাকার লোকজন নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। বাবার কোনো জমি নেই। তবে সুব্রতর রয়েছে অসহায়দের প্রতি ভালোবাসা। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সংসার চালাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করেন। সেই টিউশনির টাকায় চলছে তার সংসার, বাবা-মায়ের ভরণপোষণ।

পাঠশালার আর্থিক ব্যয়ের ব্যাপারে সুব্রত বলেন, ‘আমার অভিন্ন উদ্যোগে গ্রামের সবাই খুশি। আর্থিক ব্যয় মেটানোর জন্য অনেকে সাহায্য ও শিশুদের বিভিন্ন উপকরণ দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। জীবিকার তাগিদে পাঠশালার পাশাপাশি টিউশনিও করি। সেই টিউশনির টাকায় সংসার চালাই। আর মানুষের আর্থিক সাহায্যে নৈতিক শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি গ্রামের শিশুদের।’

পাঠশালা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে সুব্রত বলেন, ‘নৈতিক দায়িত্ব থেকে সবাই ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। সবাই যেন নিজের মনুষ্যত্বকে উপলব্ধি করতে পারে, তার জন্য কাজ করে যাব। তবে আর্থিক সঙ্কট আমার কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঠশালার শিক্ষার্থীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ালে সব শিশু অন্ধকার থেকে মুক্তি পাবে।

শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »