মোহাম্মদ ইউসুফ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : দিদারুল আলম (৩৫)। চার সন্তানের অভাবে সংসার। দিন কাটছিল অনাহারে অর্ধহারে। মাছ কাটার পেশায় যোগ দিয়ে ঘুড়িয়েছেন ভাগ্যের চাকা। এখন সন্তানদের পড়ালেখা, সংসার খরচের পরও ব্যাংকে জমা হচ্ছে মাসে কয়েক হাজার টাকা। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করছে এমন প্রায় শতাধিক মানুষ। আগে অভাবের সংসারে যখন চলছিল রশি টানাটানি ঠিক তখনি বারইয়ারহাট পৌর মাছ বাজার খুলে দিল শতাধিক অভাবী মানুষের ভাগ্যের দুয়ার।
জসিম উদ্দিন জানান, প্রতিদিন ভোরে তার মতো শতাধিক ব্যাক্তি মাছ কাটায় জড়িয়ে পড়ে। দুপুর হওয়ার আগে শেষ কাজ। ফলে দিনের বাকি সময়ে অন্য কাজ করে বাড়তি আয় করা যায়। বারইয়ারহাটে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসে মাছ ক্রেতারা। অনেক ক্রেতা বাড়িতে মাছ না কেটে বাজার থেকে কেটে নিয়ে যায়। তখনি ডাক পড়ে মাছ কাটার সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিদের। প্রতি কেজি মাছ কাটা হয় দশ টাকায়। তবে বেশি মাছ কাটলে আরো কম দামে কাটা হয়ে থাকে।
একই পেশায় জড়িত খসরু জানান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য বারইয়ারহাট বাজার থেকে মাছ সরবরাহ করে তা কেটে নিয়ে যায় আয়োজকরা। প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক মণ মাছ কাটতে পারেন তিনি। ফলে প্রতিদিন তিনি আয় করেন চার শত টাকা। কখনো সে আয় ৭-৮ শত টাকা গিয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া মাছে তেলসহ অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে বাড়তি আয় হয় বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে উত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাছে আড়ৎ বারইয়াহাট পৌর মাছের আড়ৎ। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে কয়েক টন মাছ চট্টগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাছে ত্রে মুহুরী প্রজেক্ট মিরসরাইয়ে অবস্থিত। ফলে উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী, ফেনী, সীতাকুন্ড, ফটিকছড়ি, রামগড়সহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ বৃহৎ সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য বারইয়ারহাট মাছ বাজার থেকে মাছ সরবারাহ করে থাকেন।
বারইয়ারহাটের সবচেয়ে বড় মাছের আড়ৎ দিদার ফিস সেন্টারের মালিক নাছির উদ্দিন দিদার বলেন, বারইয়াহাটের মাছ চট্টগ্রামের জন্য প্রসিদ্ধ। চট্টগ্রামের ফিসারি ঘাট, কর্ণফুলী মার্কেটের মাছ বিক্রেতারা বারইয়াহাটের মাছ পেলে উচ্চস্বরে ডেকে বিক্রি করে থাকে। এছাড়া মাছ কেটে অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে বলে জানান তিনি। তার আড়তে প্রায় অর্ধ শতাধিক লোক মাছ কাটার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে তিনি জানান।
বারইয়অহাট পৌর মেয়র এস এম তাহের আহম্মদ ভূইয়া বলেন, এখন মানুষ আগের থেকে অনেক সুখি। বাড়িতে নিয়ে মাছ কাটতে চায় না। তাই মাছ কাটার সাথে জড়িতদের চাহিদা বেড়েছে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্ঠি হয়েছে।
মন্তব্য যুক্ত করুন