ডিম অত্যন্ত কম দামের পুষ্টিকর খাবার। ডিমে রয়েছে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান, যা দেহের ক্যালরি সরবরাহ থেকে শুরু করে নানা খাদ্যপ্রাণও সরবরাহ করে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ডিম খেতে ভালবাসেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। ডিম সেদ্ধ, ডিম পোঁচ, অথবা ডিম দিয়ে যে কোন রান্না খুবই জনপ্রিয় বিশ্বজুড়ে।
আপনি হয়তো জানেন যে ডিম আমাদের দেহের জন্য অনেক বেশি উপকারী, কিন্তু কীভাবে আপনার উপকার করে এই ডিম? জেনে নিই উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
মস্তিষ্কের জন্য উপকারিঃ
ডিমে আছে প্রচুর পরিমানে কলিন যা নিউরোট্র্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে আমাদের দেহকে সুস্থ রাখে। ডিম আমাদের মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া ডিমের কুসুমে আছে ফলেট উপাদান যা আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরে স্নায়ু কোষের রক্ষণাবেক্ষণ করে।
দেহের হাড় মজবুত করেঃ
ডিমে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি যা আমাদের দেহের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে থাকে এবং ডিমে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতি অস্টিওপরোসিস বন্ধ রাখে এবং দেহের হাড় মজবুত হতে সাহায্য করে।
দেহের ওজন নিয়ন্ত্রন করেঃ
আমাদের দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে ডিমের উপকারিতা অনেক। যারা পেশির ওজন বৃদ্ধি করতে চান তাদের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিম উপযুক্ত। গবেষণায় দেখা গেছে যে ডিম আমাদের দেহে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগাকে কমিয়ে দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
নখ ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ
ডিমে আছে সালফার সমৃদ্ধ অ্যামিনো অ্যাসিড যা আমাদের হাতের নখের স্বাস্থ্যই শুধু উন্নত করেনা আমাদের চুলের স্বাস্থ্য মজবুত করে ও আকর্ষণীয় করে তুলে। ডিমের অন্যান্য খনিজ পদার্থ সেলেনিয়াম, আয়রন ও জিঙ্ক দেহের নখ ও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে সহযোগীতা করে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ
ডিমের অবস্থিত লুটিন ও যেক্সানথিন এই দুটি ক্যারটিনয়েড আমাদের চোখের সুস্থ দৃষ্টি নির্ধারণে সাহায্য করে। ডিমের এই উপাদান গুলো আমাদের চোখের ছানি, মেকুলার পতন ও সূর্যের বেগুনী রশ্মি থেকে আমাদের চোখকে রক্ষা করে।
স্তনের ক্যানসার রোধ করেঃ
গবেষণার পরামর্শ অনুযায়ী বলা হয়েছে যে প্রতি সপ্তাহে ৬ টি করে ডিম খেলে স্তনে ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনা ৪০% কমে যায়।
ডিম সহজেই হজম হয়ঃ
ডিম খুব দ্রুত হজম হয়ে যায় আমাদের দেহে। ডিম আপনি যেভাবেই খান না কেন এটি আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
‘ডিমের কুসুম খেলে শরীর মুটিয়ে যায়, কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে’ ধারণাটি বহুদিনের পুরানো। সত্যতা কতটুকু না জানলেও মেনে চলেন অনেকেই। তবে কুসুম খাওয়ার উপকারিতা কেউ অস্বীকার করবে না।
দৃষ্টিশক্তি: ‘করাটেনোয়েডস’ নামক পুষ্টি উপাদানের জন্য শাকসবজির উপর জোর দেন অনেকেই। ডিমের কুসুমে থাকে ‘লুটিন’ ও ‘জিযান্থিন’ নামক দুই ধরনের ক্যারাটেনোয়েডস। যা চোখকে অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন এই উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে বার্ধক্যজনিত চোখের সমস্যা রোধ করতে সহায়ক।
স্মুতিশক্তি: ডিমের কুসুমে থাকে ‘কোলিন’। এটি একটি খাদ্য উপাদান যা শরীরের সকল কোষের সাধারণ কার্যপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষত, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
হৃদরোগ: কুসুমের আরেকটি উপাদানের নাম ‘বেটাইন’, যা রক্তে ‘হোমোসিস্টেইন’য়ের মাত্রা কমায়। রক্তকণিকায় হোমোসিস্টেইনের মাত্রা বেশি থাকলে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তারমানে ডিমের কুসুম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক।
চর্বি ও কোলেস্টেরল: ডিমের কুসুমের চর্বি উপাদান পুরোপুরি ভিত্তিহীন। চর্বি যদি থাকেও, তার অর্ধেকই ‘স্যাচারেইটেড’ নয়। অপরদিকে, নতুন গবেষণা অনুযায়ী, ‘স্যাচারেইটেড ফ্যাট’ বা যে চর্বি সর্বোচ্চ পরিমাণে পানি ধরে রাখে, তা আপনার শত্রু নয়। আর কোলেস্টেরলের সমস্যা আগে থেকেই না থাকলে ডিমের কুসুমের কোলেস্টেরল ক্ষতিকর নয়। মনে রাখবেন পরিমাণ মতো খেলে কোনো খাবারই শরীরে বরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না।
তাই ডিমে অ্যালার্জি না থাকলে নিশ্চিন্তে কুসুমসহ ডিম খেতে পারেন।
যেভাবে খাবেন: পুরো সিদ্ধডিম কুচি করে সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
তাড়াহুড়ার দিনে সকালের নাস্তা হিসেবে সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন বা সঙ্গে রাখতে পারেন স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়ার জন্য।
আস্ত সিদ্ধ ডিমের কুচির সঙ্গে লেবুর রস, অলিভ ওয়েল এবং পেঁয়াজের মতো সবজি ‘লিক’ সঙ্গে মিশিয়ে সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন।
পাউরুটির টোস্টের উপর একটি ডিম পোচ ও সিদ্ধ পালংশাক দিয়ে খেতে পারেন। স্বাদ বাড়াতে দিতে পারেন সালসা সস।