মাথার চুল পড়া নারী-পুরুষের সাধারণ একটি সমস্যা। মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়লে এবং বিষয়টি টাকের পর্যায়ে চলে গেলে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। এ নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই। প্রথমেই জানা প্রয়োজন ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অংশ। চুল আঁচড়ানোর সময় চিরুনিতে চুল দেখে আঁতকে ওঠার কোনো দরকার নেই। চুল প্রতি মাসে আধা ইঞ্চি করে বড় হয় | স্বাভাবিকভাবে একটি চুল দুই থেকে চার বছর পর্যন্ত বড় হতে থাকে। এরপর বৃদ্ধি কমে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের প্রধান রাশেদ মো. খান বলেন, সাধারণত খুশকি, অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন, দুশ্চিন্তা ও চুলে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করার জন্য চুল পড়ে।
কীভাবে বুঝবেন চুল পড়ছে?
প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টির বেশি চুল পড়লে বুঝবেন চুল পড়ছে। বালিশ, তোয়ালে বা চিরুনিতে লেগে থাকা চুল গুনতে চেষ্টা করুন। পরপর তিন দিন এটি করতে হবে। অল্প একগোছা চুল হাতে নিয়ে টান দিন। যদি গোছার চার ভাগের এক ভাগ চুলই উঠে আসে, তবে তা চিন্তার বিষয়।
কী কী কারণে চুল পড়ে?
অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন নারীর চুল পড়া ও পুরুষের টাকের বড় কারণ। যাঁদের শরীরে এই হরমোনের প্রভাব বেশি, তাঁদেরই বেশি করে চুল পড়ে। নারীর মেনোপজের সময় পরে অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন আনুপাতিক হারে বেড়ে যায় | তখন হঠাৎ চুল বেশি করে পড়তে শুরু করে।
ছত্রাক সংক্রমণ বা খুশকি হলেও চুল পড়ে। সে ক্ষেত্রে ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু চুলে ব্যবহার করতে হয়। এর জন্য ওষুধ খেতে হতে পারে। সংক্রমণ ভালো হয়ে গেলে আবার চুল গজাবে।
শরীরের পুষ্টির ওপর চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। দৈনিক খাদ্যতালিকায় আমিষ, শর্করা, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন পরিমিত পরিমাণে না থাকলে চুল পড়ে যায়। শরীরে দীর্ঘদিন কোনো একটি উপাদানের অভাবে চুল পড়তে পারে |
দুশ্চিন্তায় বা মানসিক সমস্যা থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়তে পারে। তবে এই চুল পড়া সাময়িক। আবার চুল গজায়। দীর্ঘদিন মানসিক সমস্যা বা দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
হরমোনের কমবেশি হওয়ার কারণে চুল পড়ে অনেকের। যেমন: থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি হলে, গর্ভকালীন ও সন্তান জন্মের পর হরমোনাল ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়। তখন চুল বেশি পড়ে। হরমোনের এ পরিবর্তন আবার আগের অবস্থায় গেলে চুল পড়া কমে যায়। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আসতে এক বছরের মতো সময় লাগে।
ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়ার পর চুল ওঠে। কেমোথেরাপির প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই-তিন সপ্তাহ পর চুল পড়া শুরু হয়। কেমোর সর্বশেষ ডোজের তিন-চার মাস পর আবার গজানো শুরু হয়।
চুলের বিশেষ কোনো স্টাইলের জন্য যদি দীর্ঘদিন খুব টেনে আঁটসাঁট করে চুল বাঁধা হলে, খোঁপা বা ব্যান্ড ব্যবহার করলে চুল পড়ে। দীর্ঘদিন এক রকম চুল বাঁধার কারণে চুল পড়ে। খুব বেশি পরিমাণে চুল রঙিন করার প্রসাধন, চুল সোজা করা বা ক্রমাগত রিবন্ডিং করলে চুল পড়তে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ফলিকল গ্রন্থি, মানে যে গ্রন্থি থেকে চুল হয় সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চুল গজায় না।
রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিস, জন্ডিস, টাইফয়েড হলে চুল পড়ে। আবার ঠিক হয়ে যায়।
বড় কোনো অস্ত্রোপচার বা ওষুধের প্রতিক্রিয়া থেকে চুল পড়ে অনেকের। সুস্থ হওয়ার চার থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে চুল আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, রক্ত তরলীকরণের ওষুধ, হরমোন, মানসিক সমস্যার ওষুধ সেবন করলেও চুল পড়তে পারে।
চিকিৎসা
কী কারণে চুল পড়ছে তা নির্ধারণ করে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। চুল পড়া রোধ বা কমাতে হলে চুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে হবে। যেকোনো ওষুধ নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।