‘রেনেসাঁ’র সর্বশেষ অ্যালবাম এসেছে ১১ বছর আগে। আসি আসি করেও আটকে আছে পঞ্চমটি। কারণ ব্যাখ্যা করলেন পিলু খান, ‘প্রথমত আমরা সবাই গানের পাশাপাশি অন্য প্রফেশনের সঙ্গে নিয়োজিত, যার ফলে একসঙ্গে সময় বের করে নতুন গান নিয়ে দৌড়ানো কঠিন। দ্বিতীয়ত অডিও বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিও অনুকূলে নয়। অ্যালবাম করার জন্য এখন আর আগের মতো প্রডিউসাররা অফার করেন না। প্রডিউসারদের তাড়া থাকলে একটা গতি নিয়ে কাজটা শেষ করা যায়। নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে হলেও আগামী বছর অ্যালবামটি প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে।’
‘রেনেসাঁ’ ব্যান্ডটির জন্ম ১৯৮৫ সালে। শুরুটা করেছিলেন নকীব খান, পিলু খান, ফয়সাল সিদ্দিকী বগী, এহসানুল ইসলাম মোটো ও ডা. মামুন। এত লম্বা সময় অথচ মাত্র চারটি অ্যালবাম! ‘রেনেসাঁ’ (১৯৮৮), ‘তৃতীয় বিশ্ব’ (১৯৯৩), ‘একাত্তরের রেনেসাঁ’ (১৯৯৮) এবং ‘একুশ শতকের রেনেসাঁ’ (২০০৪)। প্রতি সাড়ে সাত বছরে গড়ে একটি করে। তৃতীয়টি আবার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান নিয়ে, মানে মৌলিক গানের অ্যালবাম তিনটি। এত অল্প গান দিয়েই শ্রোতাদের অন্তরে বসতি গড়েছে রেনেসাঁ। বেশ কয়েকটি গান পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। ‘ভালো লাগে জ্যোত্স্না রাতে’ থেকে ‘আঁরার দেশত যাইও’ প্রায় সব গানেই প্রকৃতি, সমাজ ও মানুষের কথা বলেছেন তাঁরা। সাড়াও মিলেছে বেশ।
নকীব খানের জানান—‘আমরা অনেক ভাগ্যবান যে নিজস্ব পছন্দ ও রুচিবোধে তৈরি গান দিয়েই শ্রোতাদের কাছাকাছি আসতে পেরেছি। জনপ্রিয়তার কথা কখনোই চিন্তা করিনি। বরং মেলোডি ও কথার ওপর জোর দিয়েছি সব সময়। এত দীর্ঘ সময় ধরে শ্রোতারা আমাদের সঙ্গে আছেন, আমাদের গান শুনছেন—এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।’
বড় ভাইয়ের সঙ্গে সুর মেলান ছোট ভাই পিলু খান, ‘পুরো বিষয়টি সম্ভব হয়েছে সঠিক টিমওয়ার্কের কারণে। আমাদের ব্যান্ডে কোনো লিডার নেই, এখানে সবার অধিকার সমান। এমনকি গান থেকে আমরা যে সম্মানী পাই সেটাও সবার মধ্যে সমহারে বণ্টন করা হয়। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও থাকে সবার সম-অংশগ্রহণ। সবার বোঝাপড়াটাও চমৎকার। এগুলোই আমাদের এত দূর নিয়ে এসেছে।’ এলিট শ্রেণির কাছে রেনেসাঁ যতটা সমাদৃত, সাধারণ মানুষের কাছে ততটা পৌঁছাতে পারেনি। এটা কি রেনেসাঁর ব্যর্থতা নয়?
প্রফেসর ইমরান রহমান বলেন, ‘সবাই যে আমাদের গান শুনবে সেটা আশাও করি না। তবে আমরা যদি আরো অ্যাকটিভ হতে পারতাম। তখন হয়তো আমাদের গান আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাত। এ নিয়ে আপসোস নেই। তবে এটা এক ধরনের ব্যর্থতা।’ তাঁর কথায় সায় দিয়ে আরেকটি বিষয়কে ব্যর্থতা বলে দায় কাঁধে নিলেন পিলু খান, ‘আমাদের মৌলিক অ্যালবাম তিনটি। খেয়াল করে দেখবেন সবগুলোরই কম্পোজিশন প্রায় একই ধাঁচের। এখান থেকে বের হওয়াটা প্রয়োজন। সামনে হয়তো সেটা সম্ভব হবে। তখন শ্রোতারাও আরো বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন।’ যে স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিলেন তার কতটা পূরণ হয়েছে? ‘অনেকখানিই পূরণ হয়েছে। মানুষ আমাদের যে ভালোবাসা দিয়েছে এটা সত্যিই অকল্পনীয়! আমাদের যাঁরা সম্মান করেন, মন থেকেই করেন। কোনো স্বার্থের জন্য নয়। আমরাও শুরু থেকে নিজেদের ইমেজটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি’—বলছিলেন কাজী হাবলু।
(ছবি তুলেছেন তুহিন হোসেন )