বার্তাবাংলা ডেস্ক :: একজন মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দিতে তার সময় লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট। এ পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার মানুষের চোখে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন নেপালি ডাক্তার সান্দুক রইত। মূলত বার্ধক্যের কারণে যারা চোখে ঝাপসা দেখেন কিংবা ছানি পড়ে তাদের চোখে ছোটো একটি অপারেশনের মাধ্যমে কৃত্রিম লেন্স লাগিয়ে দেন সান্দুক। আর তাতেই চোখে আলো ফিরে পেয়েছেন অনেক মানুষ।
তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় নেপালের অধিকাংশ জনগোষ্ঠিই দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থান করছে। দেশের একমাত্র অর্থকরী শিল্প পর্যটন খাত হওয়ায়, এর উপরই নির্ভর করতে হয় অধিকাংশ নেপালির। কোনো মৌসুমে যদি পর্যটক কম আসে তবে অনেকটা না খেয়েই থাকতে হয় অধিকাংশের। কারণ পাহাড়ি অঞ্চল এবং ভৌগোলিক কারণে নেপালিদের পক্ষে ভারি কোনো শিল্প স্থাপন করা সহজ সাধ্য নয়। এছাড়াও শিল্প স্থাপনে যে মূলধন দরকার হয় তারও সঙ্কট রয়েছে। তাই অর্থসঙ্কট হেতু শারিরীক বিভিন্ন রোগব্যাধিকে এক প্রকার উপেক্ষা করেই চলে নেপালি সাধারণের জীবন।
গত ৩০ বছর ধরে রুইত ব্যক্তিগত পর্যায়ে দশ হাজারের মতো মানুষের চোখে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে সবাই যে নেপালের তা নয়। এশিয়া এবং আফ্রিকার বহু অঞ্চলে তিনি এরকম চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। এমনকি তিনি উত্তর কোরিয়ার মতো দেশেও গিয়েছিলেন চক্ষু অপারেশনের জন্য। যে অপারেশন করতে অন্যান্য সার্জনদের বেশ বেগ পেতে হয়, সেই অপারেশন বেশ সহজভাবেই করে ফেলেন রুইত।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চোখের সমস্যা একটি সাধারণ বিষয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যাগুলো চিকিৎসা করালেই সেরে যায়। কিন্তু অর্থাভাব এবং ডাক্তারদের মুনাফার মনোভাবের কারণে মানুষ চোখে অসুখ নিয়ে দিনের পর দিন পার করে দেয়। অথচ সান্দুক রুইতের মতে, উন্নয়নশীল দেশের মানুষের চোখে যে অসুখ হয় তা সহজেই নিরাময়যোগ্য। অপুষ্টি এবং অবহেলার কারণে এই অসুখ ক্রমশ দানা বাধে। তবে চোখে সমস্যা শুরু হওয়ার প্রাক্কালেই যদি চিকিৎসা করা যায় তাহলে দীর্ঘদিন চোখ সুস্থ থাকে।
১৯৯৪ সালে সান্দুক অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড হলোস নামের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যুক্ত হন। যিনি ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন সান্দুকের খুবই কাছের বন্ধু এবং পথিকৃৎও বটে। তারা দুজনে মিলে কাঠমান্ডুতে তিলগাঙা নামের একটি চক্ষু হাসপাতাল খোলেন। উদ্দেশ্য ছিল গরীবদের অল্পখরচে চিকিৎসা দেয়া, বিশেষত চক্ষু সংক্রান্ত রোগের। তবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বিষয় হলো, এই হাসপাতাল থেকেই কৃত্রিম লেন্স তৈরি করতে শুরু করে তারা। যে লেন্সগুলো মায়োপিয়া রোগে আক্রান্ত রোগিদের জন্য বেশ কার্যকর। দেখতে দেখতে তিলগাঙা হাসপাতালের বানানো এই লেন্স এখন বিশ্বের ৩০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
রুইত এবং তার দল যে শুধু হাসপাতালে বসেই চিকিৎসা করেন তা নয়। যে সমস্ত রোগিরা হাসপাতালে আসতে পারেন না, তিনি তার দলবল নিয়ে সেখানে ছুটে যান এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। নেপাল এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে চিকিৎসা দেয়ার নজিরও আছে রুইতের। তবে রুইতের জীবনে স্মরণীয় ঘটনা বলতে গেলে অনেক ঘটনাই বলতে হবে। তবে তিনি প্রায়ই সেই নেপালি বৃদ্ধের কথা উল্লেখ করেন যিনি তার জীবনের ৮০টি বছর চোখে দেখতে পাননি এবং রুইত তার চোখ ঠিক করে দেয়ার পর তিনি তার সন্তানকে দেখতে পান। এই অভিজ্ঞতা রুইতের জীবনে এক মাইলফলক।