রাহমান মনি, (টোকিও) জাপান থেকে :: জাতিসংঘ কর্তৃক সবর্শেষ দেওয়া হিসেব (২০১১) অনুযায়ী ছোট বড় মিলে ৭২১১টি ভাষার অস্তিত্ত্ব রয়েছে। তার মধ্যে একমাত্র ভাষা বাংলা ভাষা, যে ভাষায় কথাবলার অধিকার আদায়ের জন্য বীর বাঙ্গালী অকাতরে বুকের তাজা রক্তদিয়েছে, বছরের এই দিনটি ( ২১ শে ফেব্র“য়ারী) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষিত হবার পর ১৯৩টি দেশের ( ২০১১ জুলাই ১৪) দণি সুদান অন্তর্ভুক্তির পর সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী) ৭১০ কোটি মানুষ কম বেশি তা জানে। এই ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করার লোকও কিন্তু কম নয়। ৭১০ কোটি জনসংখ্যার ২২ কোটির ও কিছু বেশি লোক বাংলাভাষী । বিশ্বর্যাংকিং এ যার অবস্থান ৬ষ্ঠ । গর্ব করায় বিষয় বৈ কি।
প্রায় ৮০ লাখ বাংলাদেশী (বাংলা ভাষী নয়, বাংলা ভাষী হলে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশী ) প্রবাস জীবন-যাপন করছেন। সঠিক সংখ্যা বাংলাদেশ সরকারের নথিতে ও নেই। ২০১২ জানুয়ারী ১ জাপান সরকার কর্তৃক হিসেব অনুযায়ী ৯,৪১৩ জন বাংলাদেশী পাসপোর্ট ধারী জাপানে বসবাস করছেন। সংখ্যার দিক থেকে জাপানে বসবাস রত বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে ১৫তম।
জাপান প্রবাসীদের অনেকেই জাপানী রমনীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাদের ঘর আলোকিতরা আজ দ্বিতীয় প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত। আবার অভিবাবকদের উভয়েই বাংলাদেশী এমন পরিবারের সংখ্যাও কম নয়। বরং তুলনা মুলক ভাবে বেশীই বলা য়ায়। সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও এই দ্বিতীয় প্রজন্ম বেশ ভালোভাবেই জানান দিচ্ছে জাপানে।
হাতে গোনা কয়েক জন ছাড়া দ্বিতীয় প্রজন্মের সকলেই জাপানী ভাষায় পড়াশুনা এবং সামাজিক সূত্রে জাপানি ভাষায় মনের ভাব প্রকাশে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে। হাতে গোনা যাদের বলা হচ্ছে, তারা ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশুনা করে বলে জাপানী ভাষার পাশাপাশি ইংরেজী কথোপকথোনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে। এই দ্বিতীয় প্রজন্মের অনেকেই বাংলাভাষায় ভালোভাবে কথা বলতে পারেনা। কিছু কিছূ ব্যতিক্রম ছাড়া । এমনকি পিতা মাতা উভয় বাংলাদেশী হওয়া সত্ত্বেও ছেলে মেয়েরা বাংলা বলতে পারে না । বাংলায় কিছূ বললে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। এর কারন বের করতে গিয়ে বেশ চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। পাঠকদের সাথে তার কিছুটা শেয়ার করতে চাই। তাতে যদি অন্যান্যদের বোধদয় হয়।
অভিভাবকদের কেহ কেহ বলেন, ভাই সারাদিন বাহিরে থাকি। কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকার পর ঘরে ফিরে আর ধৈর্য্য থাকে না। তাই বাংলাটা শিখানো হয়ে ওঠে না। কেহ কেহ বলেন, কি হবে বাংলা শিখিয়ে? এক মা বললেন, আমার সন্তানরা জাপানী ভাষায় পড়াশুনা করছে তাই বাসায় যদি বাংলা শিখাই তাহলে ওদের উপর চাপ পড়বে অতিরিক্ত হিসেবে। যে টা ওদের পড়াশুনায় তি হবে। শেষ পর্যন্ত কোনটাই ভালোভাবে শিখা হবে না। রপ্ত করতে পারবে না। তাই বাংলা শিখার জন্য চাপ দিচ্ছি না । কেহ বা বাংলা শিখানোর প্রসঙ্গ উঠতেই চটে যান। এক হাত নেন । তারা যুক্তিতে নয় তর্কে জিততে চান। একবার এক ভাবি বলে বসলেন, জানেন ভাই, আমার ছেলেটা না এত ভালো জাপানী ভাষা বলতে পারে যে, জাপানীরাও ওর সাথে পারে না । আর ও তো বাংলা বলতেই চায়না। আমি নিজেও অনেক বাংলা ভুলে গেছি। অনেক দিন হলো তো জাপানে, তাই জাপানী বলতে বলতে বাংলা মুখ দিয়ে বের হতে চায় না। হিন্দি ছবি দেখি ইন্টারনেট এ তাই হিন্দিটা চলে আসে। কথা গুলি তিনি বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে গর্বের সাথে বলছিলেন। কথা গুলি শুনার পর তার সাথে আর কথা চালিয়ে যাওয়ার রুচিবোধ অবশিষ্ট ছিল না।
এর বিপরীতটাও আছে । অনেকেই আছেন শত ব্যস্ততা সত্বেও নিজ সন্তানকে তিনি বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সংস্কৃতিমনা অভিভাবকদের েেত্র এই চেষ্টাটা বেশি পরিলতি। নিজে সংস্কৃতিমনা বলেই নিজ সন্তানকে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। কারন তিনি জানেন শেকড় কি জিনিস। শেকড় ছাড়া যেমন গাছ দাড়াতে পারে না, তেমনি নিজস্বতা ভুলে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না।
মনে পড়ে, ২৬শে অক্টোবর ২০০৮ চ্যানেল আই ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিশু সাহিত্যিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগরের উপস্থিতিতে ২য় প্রবাস প্রজন্ম জাপান আয়োজনে এক জন ভাবী তার বক্তব্যে বলেছিলেন, তার দুই সন্তানের সাথে তিনি সব সময় বাংলায় কথা বলেন এবং বাচ্চাদেরও বাংলায় কথা বলার তাগিদ দেন। অন্যভাষায় শত ডাকলেও মা হয়েও তিনি সন্তানদের ডাকে সাড়া দেন না, এমনকি যৌক্তিক আবদার থাকলেও। সন্তানদের বাংলা ভাষা শিখানোর জন্য তিনি খুব কার্যকরী পদপে নিয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন তার ফল তিনি পেয়েছেন। বর্তমানে তার তিন জন সন্তানদের সকলেই ভালো বাংলা বলতে পারে। তিনি নিজেও সংস্কৃতিমনা, সন্তানদেরও সেই ভাবেই গড়ে তুলেছেন। সন্তানরা সব কিছুতেই পারদর্শী হয়ে উঠেছে।
আমিও আমার সন্তানদের সাথে পারত পে জাপানী ভাষায় কথা বলিনা। শিশুকাল থেকে ওদেরকে বাধ্যতামুলক বাংলা বই পড়া এবং পড়ার পর তা লিখার অভ্যাস করিয়েছি। বেশ কঠোর ভাবেই তা পালন করেছি। এমনও দিন গেছে শেষে না হওয়ার পর রাতের খাবার দেওয়া হয়নি। রাতের ঘুমের পূর্বে নিয়মিত ভাবে ৩০মিনিট ঠাকুর মার ঝুলি বা এই জাতীয় বই পড়িয়েছি। শুনতে শুনতে যারা ঘুমিয়ে গেছে। স্ত্রী বিহীন আমি সন্তাদের এমন ভাবেই চেষ্টা করেছি বাংলা চর্চা রাখার জন্য। ৫ বৎসর বয়সে তারা আদর্শ লিপি মুখস্ত করেছিল। ২০০১ সালের ২৩ শে অক্টোবর বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠানে আদর্শ লিপি থেকে স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জন বর্ণের আদ্যোরের নীতি বাক্য গুলি বলে হল ভর্তি দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিল শিশুদের আয়োজনে ।
আমার মেয়ে আমার কাছে জানতে চায় বাঙ্গালী আঙ্কেলরা তাদের সাথে জাপানী ভাষায় কথা বলে কেন? সে আমাকে জানায় কোন বাংলাদেশী তার সাথে জাপানী বললে সে বাংলায় প্রতিউত্তর দেয়।
জাপানে বংলা ভাষা শিা প্রসারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুন্সী খ. আজাদ এবং তাহার
সহ-ধর্মিনী সুলতানা রেনু আজাদ। বর্তমানে তারা ওয়াসেদা হোসিয়েন এ বাংলা বিভাগে শিকতা করছেন। এর আগে তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে শিকতা করেন। মুন্সী খ. আজাদ ‘JICA’ য় সরাসরি শিকতা করেছেন। জাপান পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পরিচালনায় জাইকায় এই ট্রেনিং সেন্টারটিতে যারা বাংলাদেশে ভলান্টিয়ার হিসাবে যায় তাদেরকে বাংলা ভাষায় কথোপকথোনের উপযুক্ত করে তোলা হয়। এই কমিটির নাম JOCV (Japan Overseas Coopertion Volunteer)। সুলতানা রেনু আজাদ JICA পরিচালিত Komagane Traning Center এ দীর্ঘ দিন শিকতা করেছেন। অবসর নেবার পর তারা এখন এক সাথে কাজ করছেন।
এই দম্পতির কাছ থেকে বাংলা শিা গ্রহন করে জাপানের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানি শিকরা বাংলা ভাষা প্রসারে কাজ করছেন। মনে পরে ২০০৮ সালে কিয়োশু বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিবাসন এর উপর আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক দম্পতির কথা
তাদের শুদ্ধ বাংলা শুনে নিজের ভাষা জ্ঞানের পরিধির কথা ভেবে লজ্জিত হই।
সেমিনার শেষে ঐ দম্পতি আগ্রহ নিয়ে আমার সাথে পরিচিত হতে আসেন। শুভেচ্ছো কার্ড বিনিময়ের পর তারা বলেন, যদি ভুল না করি তাহলে মা করবেন প্লিজ, আমাদের মনে হচ্ছে আপনি বাংলাদেশি, ঘোর কাটিয়ে ওঠার আগেই আমাকে সময় না দিয়ে তারা বললেন, আপনি তো টোকিও থেকে এসেছেন, আপনি কি মুন্সী খ. আজাদ স্যার এবং তার পতœী সুলতানা রেনু আজাদ স্যার কে চিনেন ? পরিচিত নাম শোনার পর স্বস্তি ফিরে পাই। ততণ অনেকটাই ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কারন অনেক জাপানীদের কাছ থেকেই বাংলা শুনেছি। বুঝা যায় যে, তারা বাংলা শিখেছে আর এই দম্পতি দেখে এবং বাংলা শুনে চেহারার সাথে বাংলা ভাষার সাদৃশ্য খুজে পাচ্ছিলাম না। আজাদ ভাইয়ের নাম শুনে আর বুঝতে দেরি হলো না । বললাম শুধু চিনি-ই না ভালো সম্পর্কও আছে। তারা বললেন, আমরা আজাদ স্যারের কাছেই বাংলা শিখেছি। সুলতানা রেনু ম্যাডামও আমাদের শিক ছিলেন।
সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের এক শিক দম্পতির মুখে আজাদ ভাইকে স্যার সম্ভোধন শুনার পর জাপানের মাটিতে দ্বিতীয় বারের মত বুকের পাটা বেড়ে যায়। যেমন বেড়ে যায় সশস্রাবস্থায় একজন সৈনিকের সমনে দিয়ে কোন জেনারেল হেটে গেলে । কিন্তু আমার টা বেড়ে যায় আনন্দে, গর্বে । প্রথম বার বেড়ে গিয়েছিল ২০০৬ এর ১৩ই অক্টোবর । সেদিন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ড. ইউনুস স্যার শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন। গর্ব বোধ করার আরেকটি কারন ছিল সৌভাগ্য ক্রমে আমি এই দুই মহিয়শীর স্নেহ ভাজন ।
জাপানে স্বরলিপি কালচারাল একাডেমী ১৯৯২ বাংলা ভাষা শিাদানে প্রথম কাস শুরু করে। প্রথম কয়েক বছর আজাদ দম্পতির বাসাতেই কাস শুরু হয়। এর পর ১৯৯৮ সালে নিনগিওচোতে বাংলাদেশী সুহৃদ জনাব নাকাগাওয়ায় বিশেষ অবদানে তার প্রতিষ্ঠানে বাংলা সংস্কৃতি ( ভাষা, নাচ, গান সংস্কৃতি) কাস চলে এক টানা ২০০৯ পর্যন্ত । ২০১০ থেকে তা আবার কিতা সিটিতে স্থানান্তর করা হয়।
২০০৩ সালে স্বরলিপি এক সমাবর্তন আয়োজনের মধ্যে বেশ কয়েকজন কে কৃত্বিতের সাথে বাংলা ভাষা শিা সমাপ্ত করার সনদ দেয়া হয়। এদের মাধ্যমে জাপানী তরুণীরাই বেশী আগ্রহ নিয়ে ভাষা শিা সমাপ্ত করেন। সে দিন যাদের সনদ দেয়া হয়। এদের মধ্যে সাদায়ামা য়োশিয়ে, এলস ভান্ডেলস্টিম, য়োকোয়ামা কায়ো, হোরি য়ুকি, হোসাইন য়ুমিকো, কোনুতা মিয়ুকি, আদাচি মারিকো,হাশিমোতো য়ুকিকো দের নাম মনে পড়ছে। তাদের অনেকেই আজ বাংলাদেশী তরুণদের বিয়ে করে জাপানে ২য় প্রজন্মের মাতৃত্বের স্বাদ নিয়েয়েছেন । তারা তাদের সন্তানদের বাংলা শিখানোর উৎসাহ দেখান বেশী।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা পায় বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সমিতি জাপান । যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল জাপানে বাংলা ক্যারিকুলামে এটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা । তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম সাহেব ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ছিলেন তখন। সেই ল্েয প্রাথমিক ভাবে তাকিনোগাওয়া ডাই ইয়োন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরে ওজি কামিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাস রুম ভাড়া ( স্বল্প খরচে ) করে সপ্তাহে দুই দিন শনিবার এবং রবিবার কাস করানো হতো। ৩০ জন নাম লেখালে ও ১৬ জন নিয়মিত কাস করত। কিছু দিন পর ৭/৮ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে যায়। অভিভাবকদের অসহযোগীতায় এক পর্যায়ে তা স্থবির হয়ে পরে। স্বরলিপি কালচারাল একাডেমী ও স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যপারে উদ্যোগ নিয়ে ছিল। এছাড়া বানিজ্যিক ভাবেও বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন জাপানে বাংলাদেশী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে।
উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সম্পূর্ন ভলান্টিয়ার ভিত্তিতে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় টোকিওর একজন জাপানী দানবীর ১৩ কোটি ইয়েন দান করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়। বাংলাদেশীদের ব্যাপারে একটি প্রচলিত কথা চালু আছে। তা হল একজন বাংলাদেশী অনেক গুলি কাজ করতে পারে। কিন্তু অনেক গুলি বাংলাদেশী মিলে একটি কাজ করতে পারে না। তাই সবগুলি উদ্যোগই মুখ থুবড়ে পড়ে অঙ্কুরেই। কাজের কাজ কিছুই করা হয়নি।
শিশু কিশোরদের বাংলা সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সোসাইটি জাপান, সার্বজনীন পূজা কমিটি জাপান, পরবাস জাপান, টোকিও বৈশাখী মেলা জাপান, উত্তরণ শিল্পী গোষ্ঠী জাপান। সংগঠন গুলির যেকোন আয়োজনে দ্বিতীয় প্রজন্মের জন্য সময় বরাদ্দ থাকে। বিশেষ করে টোকিও বৈশাখীর মেলায় শিশুকিশোরদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ সহ সময় ছাড় দেয়া হয়। দ্বিতীয় প্রজন্ম নিজেকে উপস্থাপন করা বিশেষ স্থান হচ্ছে টোকিও বৈশাখী মেলা।
সাম্প্রতিক জাপান প্রবাসী তরুণ চিত্র শিল্পী কামরুল হাসান লিপু দ্বিতীয় প্রজন্ম নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ চিত্র শিল্পকে জাপানে তুলে ধরার জন্য। এতে তিনি ভাল সাড়াও পাচ্ছেন। জাপানে বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন একজন শিল্প প্রেমী। তিনি জাপানের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম বারের মত বিজয় দিবসে দূতাবাস প্রাঙ্গনে শিশু কিশোরদের জন্য চিত্রাংকন প্রতিযোগীতার আয়োজন করেন । তাতে অভূতপূর্ব সাড়া জাগে । প্রথম বারের মত আয়োজনে ৪০ জন ুদে চিত্র শিল্পী উন্মূক্ত চিত্রাংকন প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়।
কেবল মাত্র দ্বিতীয় প্রজন্ম নিয়ে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে “ প্রবাস প্রজন্ম জাপান” নামে একটি শিশু সংগঠনের। ২০০৭ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা পাবার পর থেকে দুই প্রজন্মের মিলন মেলা নামে একটি ছোটদের সাথে বড়দের সমন্নয়ে দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে প্রতি বৎসর। সংগঠনটির মূল স্লোগানই হচ্ছে, প্রবাসী শিশু কিশোরদের জীবনে মননে বাজুক দেশ, মাটি ও মানুষের নিরবচ্ছিন্ন সুরধার্য্য। সংগঠনটির রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং আঞ্চলিকতা থেকে সম্পূর্নমুক্ত । প্রতিটি জাপানী প্রবাসী দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সংগঠনটিকে সহযোগিতা করে আসছে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে।
২০০৭ সাল থেকেই সংগঠনটি বিভিন্ন েেত্র অবদানের জন্য বাংলাদেশ থেকে স্বনামধন্য দের আমন্ত্রন জানিয়ে প্রবাস প্রজন্ম সম্মাননা দিয়ে যাচ্ছে। এই পর্যন্ত যারা প্রবাস প্রজন্ম সম্মাননা পেয়েছেন তারা হলেন, ড. জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর, গোলাম মোর্তোজা, রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফাহমিদা নবী, জাপানী মডেল ( বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত) রোলা। এই বৎসর এ সম্মাননা দেয়া হবে সামিনা চৌধুরী এবং মুন্নী সাহাকে। অনুষ্ঠানটি দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। মুন্সী খ. আজাদ হচ্ছেন সংগঠনটির আহবায়ক। তার নেতৃত্বে এক ঝাক তরুণ নিঃস্বার্থ কাজ করেন সংগঠনে ।
এছাড়া বেশ কয়েক জন জাপানী সুহৃদ আছেন যারা বাংলাদেশকে ভালবাসেন, বাংলায় কথা বলেন। প্রবাসীদের সব সেমিনারে বাংলায় বক্তব্য রাখেন। প্রফেসর নারা ৎসুখোশি ( বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে যার অপরিসীম অবদান), এন এইচ কে বাংলা বিভাগের প্রধান ওতানাবে, ইনোউয়ে নোরিকো নির্ভূল বাংলায় বক্তব্য রাখতে পারদর্শী। এ ছাড়াও উত্তরণ এবং স্বরলিপির সাথে সংশ্লিষ্ট জাপানীদের সকলেই ভালো বাংলা জানেন।
সব ছাড়িয়ে যায় জাপানের প্রক্তন প্রধান মন্ত্রী, বর্তমান ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী Taro Asou-র একটি ব্যাক্যতেই। তিনি কেবল এটি বাংলা জানেন এবং প্রবাসীদের আয়োজনে বলে থাকেন তা হলো, (আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি)।