বার্তাবাংলা ডেস্ক :: প্রাচীন সুমেরিয় বীর গিলগামেশ। প্রজাদের ক্ষ্যাপা মহিষের ন্যায় শাসন করার জন্য বিখ্যাত ছিলেন তিনি। একের পর এক বাধা টপকে ক্রমশ রাজাধিরাজ হওয়ায় পথে হাটছিলেন গিলগামেশ। কিন্তু তার এই পথে বাধা হয়ে দাড়ায় বিশাল বন সিডারের রাক্ষস। নিজের শৌর্য বীর্য টিকিয়ে রাখতে গিলগামেশ সিডার রাক্ষসকে বধ করার চিন্তা করলেন। তিন সপ্তাহের পর তিন দিনে গিয়ে তিনি দেখা পান সিডার রাক্ষসের। কিন্তু সিডার বনের রাক্ষসের বিশাল চেহারা দেখে গেল ভড়কে গিলগামেশ। আর তাতেই তিনি শরণাপন্ন হন দেবতা আমনের। আমন তার ভক্তের কাতরতায় বায়ুর দেবতাকে বললেন সিডার দৈত্যের দিকে ধাবিত হতে। এরপর কয়েক দিনের যুদ্ধে পরাজয় মেনে নেন সিডার রাক্ষস। হেরে গিয়ে নিজের বনের কাঠ দিয়ে গিলগামেশের বাড়ি তৈরি করে দিতে চেয়েছিলেন রাক্ষস। কিন্তু গিলগামেশ রাক্ষসের কথায় না ভুলে এক কোপে কেটে ফেলেন তার মাথা। সেই থেকে গিলগামেশের উপর নেমে আসে অভিশাপ। যে অভিশাপে বীর গিলগামেশ হারায় তার একান্ত প্রিয় বন্ধুকে। হাজার মাইল ঘুরেও সে পায় না অমর হবার বর। ধীরে ধীরে ইতিহাসের কালগর্ভে হারিয়ে যায় গিলগামেশের সেই ঐতিহ্যবাহী শহর।
তবে অনেককিছু হারিয়ে গেলেও শেষমেষ সবকিছু হারিয়ে যায় না। যেমনটা প্রাচীন গ্রীক নগরী হেরাক্লিয়ন। ঐতিহাসিক হেরোডোটাস যে বন্দর নগরীর বর্ণনা বারংবার দিয়েছিলেন সেই নগরী হেরাক্লিয়নের সন্ধান মিলেছে ভূমধ্যসাগরে তলদেশে। ফরাসি পুরাতত্ত্ববিদ ফ্র্যাঙ্ক গড্ডির তত্ত্বাবধানে একদল পুরাতত্ত্ববিদ ২০০০ সাল থেকে সাগরের তলদেশে খনন চালিয়ে আবিস্কার করে এই নগরীর। আলেকজান্দ্রিয়ার নিকট দূরের আবুকির উপসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩০ ফুট নিচে পাওয়া যায় এই নগরীর কিছু নিদর্শন। প্রথমদিকে গড্ডিও ও তার দল ভেবেছিলেন এ বুঝি মিসরীয় সভ্যতার কোনো অপভ্রংশ। কিন্তু গ্রীক ও মিশরীয় পুরানে বর্ণিত হেরাক্লিয়ন নগরীই যে তারা আবিস্কার করে ফেলেছেন তা বুঝতেও অনেকটা সময় লেগে যায়। কারণ হাজার বছরের পুরনো ছিঁড়ে যাওয়া ইতিহাসের তার তো আর একদিনে জোরা লাগানো সম্ভব নয়। এছাড়া আরও একটা কারণও ছিল অবশ্য। অনেক ইতিহাসবিদই এই শহরের অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করেছেন নানান সময়ে। ইতিহাস মতে, ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজন্দ্রিয়া বন্দর পত্তনের বহু আগে গ্রিস থেকে মিশরে ঢোকার পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল হেরাক্লিয়ন। তবে হেরাক্লিয়ন বন্দর নগরী হয়ে ওঠারও আগে বিখ্যাত ছিল দেবতা আমনের সুবিশাল মন্দিরের জন্য। যে মন্দিরের জন্য মোট ১১টি ছোটো রাজ্যের পত্তন হয়েছিল সেসময়।
মিশরীয়দের কাছে এই শহরের নাম ছিল ‘থনিস’। খ্রিস্টপূর্বাব্দ অষ্টম শতকের দিকে এই আমন ভক্ত গিলগামেশের এই নগরীর পত্তন হয়েছিল। যা পরবর্তীতে হেরাক্লিয়ন নাম ধারণ করে। এই নগরীতেই প্রথম পা রাখেন গ্রিক বীর হেরাক্লেস। শুধু তই নয় ট্রয়ের সেই বিখ্যাত যুদ্ধের আগে ট্রোজান সম্রাজ্ঞী হেলেন তার প্রেমিক প্যারিসের সঙ্গে দেখা করতে এই নগরীতে এসেছিলেন। হয়তো হেলেন আর প্যারিসের নিখাদ প্রেমের বর্ণনা আজও খুঁজে পাওয়া যাবে নগরীর কোনো মন্দিরের গায়ে লিখিত ফলকে। পুরাতত্ত্ববিদরা বেশ কিছু মুদ্রা ও তৈজসপত্রের গায়ে লিখিত তথ্যাদি থেকে নগরী সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। বাংলামেইলের পাঠকদের জন্য হেরাক্লিয়ন নগরীর কিছু মুর্তি ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের ছবি দেয়া হলো।