বার্তাবাংলা ডেস্ক::ওমান থেকে বহিষ্কৃত শতাধিক বাংলাদেশী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। গতকাল সকালে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে পৌঁছান। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকা আসেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশে ফেরা শ্রমিকদের সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ (ইমিগ্রেশন) অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, ৬৮ জন বাংলাদেশী সেদেশ থেকে বহিষ্কার হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, দেশে ফেরার আগে সেখানে তারা স্বল্পমেয়াদি জেল খাটে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার ও আটকের পর ওমানের জেলে তাদের দুর্বিসহ সময় কাটাতে হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ দূতাবাসের তেমন সহযোগিতাও পাননি। ফেরত আসা কয়েকজন শ্রমিক দাবি করেছেন, কোন ধরনের আইনগত কারণ ছাড়াই তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফিরে আসা শ্রমিকরা জানান, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেদেশ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়। তবে তাদের দাবি তারা প্রতারণার শিকার হয়ে এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন। পতাকার (কাজের অনুমতিপত্র) মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য তারা মালিকের কাছে টাকা দিলেও তারা তা পাননি। ফলে তারা অবৈধ হয়ে যান। তারা জানান, জোরপূর্বক এবং কম বা বিনা বেতনে কাজ করানোর জন্য মালিকরা এমনটি করে থাকে। কিশোরগঞ্জের অধিবাসী সোহরাব হাসান বলেন, আমি বৈধভাবেই কাজ করছিলাম। কফিল (নিয়োগদাতা) কোন টাকা দিতে অস্বীকার করায় ওমানি মালিক তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। কফিলেরই দায়িত্ব মধ্যপ্রাচ্যে কোন অভিবাসীর কাজ খুজে দেয়ার। সোহরাব বলেন, ২০১২ সালে ড্রাইভিং ভিসায় ওমান গিয়েছিলাম। কিন্তু কফিল আমাকে ড্রাইভিংয়ের পরিবর্তে কনস্ট্রাকশনের কাজে নিয়োগ করে। কফিলকে প্রতি মাসে ২০ ওমানি রিয়াল দিতে হতো। তার দাবি ক্রমশ বাড়তে থাকে। কিন্তু তাকে বাড়তি টাকা দেয়ার মতো কোন বিকল্প আমার ছিল না। প্রায় একই দাবি করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. ইলিয়াস। তিনি গত বছর সে দেশে যান। বলেন, কোম্পানির মালিক আমাকে নিয়মিত বেতন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। আমি যখন বেতন দাবি করতাম আমাকে প্রহার করা হতো। তার ওমানী মালিক জোরপূর্বক তাকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। ইলিয়াস ২ লাখ টাকা খরচ করে সেখানে যান। তিনি প্রতিমাসে মাত্র ১০ টাকা আয় করতেন। শ্রমিকদের একজন ময়মনসিংহের খলিল রহমান জানিয়েছেন, তিনি ২০০৮ সালে ৪ বছরের কাজের অনুমোতিপত্র নিয়ে বৈধভাবে ওমান যান। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ২ বছর ধরে তিনি সেখানে অবৈধভাবে কাজ করছিলেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় তিন মাস আগে ওমানের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তিন মাস সাজা ভোগের পর গত সপ্তাহে তাকে মুক্তি দেয়া হয় এবং বহিস্কার করা হয়। ফেরত আসা মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার আরিফ জানান, ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে তিনি মালিকের কাছে টাকা দিয়েছিলেন কিন্তু সে নতুন ভিসা না দিয়ে গত ২২শে মে ওমানী পুলিশে দেয়। পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশী দূতাবাসে হস্তান্তর করে। তিনি বলেন দূতাবাস যদি সহযোগিতা করতো তাহলে আগেই দেশে ফিরতে পারতাম। ফেরত আসা শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের কোন ধরনের সহযোগিতা করেনি। উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে ওমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। সরকারি হিসেবে দেশটিতে বর্তমান ৮ লাখ ৮৭ হাজার বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যন্য দেশের মতো ওমানেও বাংলাদেশী শ্রমিকরা নানা জটিলতায় ভুগছেন। ভিসার বা কাজের অনুমতিপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। সম্প্রতি ইরাকে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় সেখান থেকেও বাংলাদেশী শ্রমিকরা দেশে ফিরছেন। দু’দফায় ৭০ জনের মতো শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। আরও অনেক শ্রমিক দেশে ফেরার জন্য নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদনও করেছেন।
মন্তব্য যুক্ত করুন