বিভিন্ন দেশের ১৪ হাজার প্রবাসী ভোট দেয়ার মাধ্যমে আতিথেয়তার জরিপে পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডাকে সর্বোচ্চ নম্বর দিয়েছে। বন্ধুভাবাপন্ন হওয়ায় ও সাহায্যের হাত বাড়ানোর ক্ষেত্রে ১৯১টি দেশের মধ্যে তারাই সবথেকে এগিয়ে রয়েছে।
উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় বসবাসরত প্রবাসী ব্রিটিশ শার্লট ওবিয়ান ও বুলগেরিয়ার নাদিয়া মিলেভা বলেন, ‘এখানকার মানুষ বিস্ময়করভাবে প্রবাসীবান্ধব। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে আমাদের জন্য বিপুল ভালোবাসা থাকায় অনেকেই এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে’।
এটি একটি নিরুদ্বেগ দেশ। প্রবাসীরা এখানে নিশ্চিন্তভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।
উগান্ডার প্রায় সম্পূর্ণটাই নীল নদের অববাহিকায় অবস্থিত। স্থলবেষ্টিত হলেও উগান্ডায় অনেক বড় বড় হ্রদ রয়েছে। যার মধ্যে ভিক্টোরিয়া, কিয়োগা ও এডওয়ার্ড খুবই বিখ্যাত। কিয়োগা হ্রদ দেশের প্রাণকেন্দ্রে এবং বিস্তৃত জলাভ‚মি দ্বারা বেষ্টিত।
১৯১ দেশের জরিপে- স্থানীয় সংস্কৃতি ও ভাষার ভিত্তিতে শীর্ষ অতিথিপরায়ণ দেশগুলোর তালিকায় এরপর যথাক্রমে রয়েছে- কোস্টারিকা, কলম্বিয়া, ওমান ও ফিলিপাইন।
অপরদিকে ‘বিশুদ্ধ জীবন’এর দেশ কোস্টারিকা। এটি ল্যাটিনের দেশ। এখানকার সংস্কৃতি প্রবাসীদের সাদরে স্বাগত জানিয়ে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। স্থানীয়-বিদেশিদের মাঝে শান্তি, সম্প্রীতি ও সমতা বজায় রাখতে কোস্টারিকার সমাজতান্ত্রিক সরকারও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
সান্তা আনায় বসবাসরত যুক্তরাজ্যের ডেভিড বেকহাম বলেন, ‘বিদেশিরা কোস্টারিকার সৈকতে টানা সার্ফিং ও সাঁতার কাটতে পারেন নির্বিঘ্নে। এছাড়াও যুক্তিসঙ্গত খরচে বসবাস, কেনাকাটা ও খাওয়া-দাওয়ার জন্য এটি একটি আদর্শ দেশ’।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ায় বসবাস প্রবাসীদের কাছে যেন নিজ বাড়িতে থাকার মতোই। এখানে বিদেশি বংশোদ্ভূত বাসিন্দাদের স্থানীয়রা পর্যটক হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দেশটিতে তাজা ফল ও সবজি সারা বছরই সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়।
তা ছাড়া এখানে সব ধরণের সেবাই খুব সস্তা। দেশটির উত্তরে বোগোতা শহরতলীতে বসবাসরত প্রবাসী আমেরিকান অ্যান মার জর্জ ভিলেগাস ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মেডেলিনে বসবাসরত উইলিয়াম ডুরান বলেন, ‘কলম্বিয়ার মানুষ ফলাও করে তাদের দেশ দেখাতে আগ্রহী এবং নতুনদের প্রতি খুব (উষ্ণ) অতিথিপরায়ণ।
বিশ্বের মধ্য অঞ্চলের দেশ ওমানের স্বাগতপূর্ণ সংস্কৃতিতে উষ্ণ জলবায়ুর প্রতিফলন ঘটে। আরব এ দেশটির আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনোমুগ্ধকর আবহাওয়া পর্যটকদের অবিরাম টানতে থাকে।
রাজধানী মাস্কাটে বসবাসকারী নিউজিল্যান্ডের প্রবাসী রেবেকা মেস্টন ও দক্ষিণের শহর নিজওয়ার বাসিন্দা প্রবাসী নিকলে ব্রিয়ার্স বলেন, ‘প্রথাগতভাবে ওমানীয়রা অপরিচিতদের জন্য খুব অতিথিপরায়ণ। তাদের শক্তিশালী ইসলামী পটভূমি ও বিশ্বাসের সঙ্গে তারা তাদের প্রতিবেশী বা বিদেশিদের সাহায্য করতে ভালোবাসেন।
বিদেশিরা ফিলিপাইনের গ্রীষ্মমন্ডলীয় জীবনধারায় আকৃষ্ট। সারা বিশ্ব থেকে আসা প্রবাসীদের জন্য আকর্ষণীয় ৭ হাজার ১০০ দ্বীপের দেশটিতে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি অফিস খুলেছে। এটি বর্তমানে বিশ্বের আউটসোর্সিং রাজধানীতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিদেশী নতুনদের স্বাগত জানাতে ভীষণ আগ্রহী। রাজধানী ম্যানিলায় বসবাসরত প্রবাসী এলানোর ওয়েবলি ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেবু’র বাসিন্দা ইওসেনের মতে, ‘এখানকার বাসিন্দারা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ, সদাহাস্য এবং সহায়ক হন।
প্রবাসীরাও দ্বীপ রাষ্ট্রটির ক্রান্তীয় জীবনধারা ভালোবাসেন। এখানে জীবনযাত্রার ব্যয় মোটেও উচ্চ নয়। হাউজিং, পরিবহন এবং খাদ্যে লন্ডনের চেয়ে ম্যানিলা প্রায় ৬০ শতাংশ কম ব্যয়বহুল শহর।
ইংরেজি ফিলিপাইনের সরকারি ভাষা। প্রায় ৫০% লোক ইংরেজি ভাষাতে কথা বলে থাকেন। তাগালগ ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ভাষা। এটিতে কথা বলে প্রায় ৪০% লোক। দেশটির পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষের ভাষা চায়নিজ। ফিলিপাইনের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটির মতো।