ইসলামী শরিয়াহ্ অনুযায়ী ভাগে কোরবানি দেওয়ার নিয়ম জানা প্রতিটি মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ঈদুল আযহা সামনে এলে এ বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে।
গরু, মহিষ কিংবা উট— বড় পশু কোরবানির ক্ষেত্রে ইসলাম কী বলে? কতজন একসাথে অংশ নিতে পারে? কোরবানি গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কী শর্ত পূরণ করতে হয়?
এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে শরিয়তসম্মত বিধান বুঝে নেয়া আবশ্যক। এই লেখায় আমরা ভাগে কোরবানি সম্পর্কিত সকল দিক নিয়ে আলোচনা করব হাদিস ও ফিকাহের আলোকে।
ভাগে কোরবানি দেওয়ার নিয়ম ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ
প্রতি বছর ঈদুল আযহার সময় অনেকেই গুগলে খোঁজ করেন : “ভাগে কোরবানি দেওয়া কি জায়েজ?” ইসলামি শরিয়তের আলোকে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আজকের এই লেখাটি আপনার জন্য।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়লে ইনশাআল্লাহ, আপনি ভাগে কোরবানি দেওয়ার পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন পেয়ে যাবেন।
কোরবানির দুই ধরন : একা এবং অংশীদারিত্বে
ঈদুল আযহা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যেখানে পশু কোরবানি করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এই কোরবানি দুইভাবে আদায় করা যায় :
- এককভাবে : কেউ চাইলে নিজ দায়িত্বে একটি ছাগল বা গরু কোরবানি করতে পারেন।
- অংশীদারিত্বে : গরু, মহিষ কিংবা উট— এসব বড় পশু ২, ৩, ৫ বা সর্বোচ্চ ৭ জন একসাথে ভাগ করে কোরবানি করতে পারেন।
ছাগল বা ভেড়ার ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের সুযোগ নেই, এগুলো কেবল একজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করার জন্য নির্ধারিত।
ভাগে কোরবানি করতে চাইলে যা জানা জরুরি
ভাগে কোরবানি সম্পন্ন করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে :
- প্রত্যেক অংশীদারকে শরিয়তসম্মত নিয়ত করতে হবে— শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি।
- অংশীদারদের অর্থ হালাল উপার্জন হতে হবে।
- কোনো অংশীদার যদি কোরবানির নিয়ত না করে কেবল মাংস পাওয়ার উদ্দেশ্যে অংশ নেয়, তবে পুরো কোরবানি বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কোরআন-হাদিস অনুযায়ী ভাগে কোরবানির বৈধতা
ইসলামী ফিকাহ অনুযায়ী, গরু ও উট ৭ জন পর্যন্ত মিলে কোরবানি করা যায়। এই বিষয়ে হাদিসে স্পষ্ট দলিল রয়েছে:
- হযরত জাবির (রা.) বলেন : “আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে একসাথে গরু কোরবানি করতাম— সাত জনে একটি গরু।” (সহিহ মুসলিম)
- তিরমিজি শরিফেও হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে ৭ জন একটি গরু বা উট কোরবানি করতে পারে।
পশু কেনার পূর্বে অবশ্যই যা খেয়াল রাখতে হবে
ভাগে হোক বা একা, কোরবানির পশু কেনার সময় নিচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করুন :
- গরু ও মহিষ : বয়স কমপক্ষে ২ বছর
- উট : বয়স কমপক্ষে ৫ বছর
- ছাগল বা ভেড়া : বয়স ১ বছরের বেশি
- পশুর শারীরিক ত্রুটি থাকা যাবে না— যেমন শিং ভাঙা, কানকাটা, দাঁত ভাঙা, চোখ অন্ধ, হাড্ডিসার ইত্যাদি
ভাগে কোরবানির করণীয় ও বর্জনীয়
✅ করণীয় :
- কোরবানি করতে হবে ঈদুল আযহার প্রথম তিন দিনের (১০-১২ জিলহজ) মধ্যে
- পশু জবাইয়ের সময় অবশ্যই আল্লাহর নাম নিতে হবে
- মাংস সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করতে হবে— নিজে খাওয়া, আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া এবং গরিবদের মাঝে বণ্টন
❌ বর্জনীয় :
- মাংস বিক্রি করা যাবে না
- অসততার আশ্রয় নেওয়া যাবে না (যেমন: ওজনে কারচুপি)
- কারও নিয়ত বা অর্থ নিয়ে সন্দেহ থাকলে অংশ না নেওয়াই উত্তম
পরিবেশ সচেতনতা : ইসলামী দায়িত্ব
কোরবানির সময় শহরাঞ্চলে বর্জ্য অপসারণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই :
- পশুর বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলুন
- যেখানে-সেখানে রক্ত বা মাংসের অংশ ফেলা যাবে না
- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
কোরবানির মূল শিক্ষা ও তাৎপর্য
কোরবানির মূল শিক্ষা হচ্ছে— আল্লাহর জন্য ত্যাগ। এটি শুধুমাত্র পশু জবাই নয় বরং একজন মুসলমানের আত্মত্যাগ, নীতি, ও একত্ববোধের প্রকাশ। এই ইবাদতের মাধ্যমে ধনী-গরীবের ব্যবধান কমে আসে, সমাজে তৈরি হয় ভ্রাতৃত্ব ও সাম্য।
“অতএব তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।” (সূরা কাওসার ১০৮:২)
প্রশ্নোত্তর: কোরবানি সম্পর্কিত কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা
১. ছয় ভাগে কোরবানি দেওয়া যাবে কি?
✔️ হ্যাঁ, সাত জন পর্যন্ত অংশ নিতে পারেন, ছয়জনও পারবে।
২. ছাগল কি ভাগে কোরবানি দেওয়া যায়?
❌ না, ছাগল কেবল একজনের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া যাবে।
৩. কোরবানির টাকা হালাল না হলে কি হবে?
❌ হালাল উপার্জন ছাড়া কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে না।
শেষ কথা
ভাগে কোরবানি দেওয়া ইসলামী শরিয়তের আলোকে সম্পূর্ণ বৈধ। তবে শর্ত হলো, সকল অংশীদার আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হালাল অর্থে কোরবানিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাই এই পবিত্র ইবাদতকে যথাযথভাবে পালন করে সমাজে ঐক্য, সংহতি ও সহানুভূতির বার্তা ছড়িয়ে দিন।
আরও ইসলামি তথ্য ও কোরবানি বিষয়ক পরামর্শ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে কমেন্ট করতে পারেন এই পোস্টের নিচে। আর এই কন্টেন্টটি দরকারি মনে হলে শেয়ার করতে পারেন সবার সঙ্গে।