দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক পর ঢাকায় মুখোমুখি বৈঠকে বসেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবরা, যা দুই দেশের মধ্যে বহুদিনের স্থবির সম্পর্ক নতুন করে সচল হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের মাত্র ৯ দিন আগে।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। দুই পক্ষই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটনের মতো খাতে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফরকে সামনে রেখে এই বৈঠককে প্রস্তুতিমূলক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস
বৈঠকের পর দুই দেশ পৃথকভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং সংবাদ সম্মেলনেও বক্তব্য রাখে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়, সম্পর্কের টেকসই ভিত্তি গড়তে হলে ঐতিহাসিক অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান জরুরি।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগে সম্পর্ক যে জায়গায় এসেছে, তা দৃঢ় করতে হলে ১৯৭১ সালের গণহত্যা, আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভক্ত সম্পদের ন্যায্য হিস্যা নিয়ে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধান জরুরি।”
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যদিও আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলোর সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তবে তাদের প্রকাশিত বিবৃতিতে এসব প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া হয়।
ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত ও পুনরাবৃত্তি
এটাই প্রথম নয়। ২০১০ সালের ১ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পরেও পাকিস্তান একইভাবে বিবৃতিতে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিল, যদিও বাংলাদেশ সে সময় স্পষ্টভাবে বিষয়টি উল্লেখ করে।
দুই বছর পর, ২০১২ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ডি-৮ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন। ওই সময় তিনি অতীত ভুলে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যদিও সুনির্দিষ্ট অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর ব্যাপারে কোনো উল্লেখ ছিল না।
দৃষ্টি ভবিষ্যতের দিকে, তবে ইতিহাস অনুচ্চার নয়
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন গতি পেলেও স্থায়ী অগ্রগতির জন্য পুরনো জটিলতাগুলোর স্বচ্ছ সমাধান প্রয়োজন। এবারের বৈঠক দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ পুনরায় সক্রিয় করার একটি পদক্ষেপ হলেও, পরিপূর্ণ সমাধানের জন্য ঐতিহাসিক দায় স্বীকার ও স্পষ্ট কৌশল প্রয়োজন।
২৭ এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সফরে এই অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা কতটা গুরুত্ব পাবে— সেটাই এখন দেখার বিষয়।