সবচেয়ে কম ঘুমানো দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ কোরিয়া। সে দেশের নাগরিকদের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জানা যায়, সেখানে অনেকে ঘুমের জন্য কান্নাকাটিও করেন।
৩৫ বছরের মার্কেটিং অফিসার উ-জিয়াং ডিউটি করেন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। এছাড়াও তাকে কোন কোন দিন অফিসে থাকতে হয় রাত ৪টা পর্যন্ত। তার স্যার প্রায়ই মাঝরাতে ফোন করে কিছু কাজ দিয়ে দেন। উ-জিয়াং বলেন, ‘রেষ্ট নেয়ার কথা আমি ভুলেই গেছি বলা যায়।’
২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঘুমাতে সাহায্যের জন্য দেশটিতে গড়ে উঠেছে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঘুম শিল্প। যা অনেকটাই নজিরবিহীন দক্ষিণ কোরিয়া পৃথিবীর অন্যতম ঘুম বঞ্চিত দেশ। দেশটিতে আত্মহত্যার হারও অনেক বেশি। কড়া মদ্যপায়ী ও বিষন্নতার ওষুধ সেবীর সংখ্যাও কম নয়।
সিউলের ঘুম বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসক সি-মং লি বলেন, ‘রাতে ২০টি পর্যন্ত ঘুমের ওষুধ খান এমন রোগীরাও তার কাছে আসেন। সময় না দিয়ে কোরিয়ানরা দ্রুত ঘুমাতে চায়। এজন্য তাদের ওষুধ দরকার হয়।’
ঘুমের ওষুধের প্রতি আসক্তি দক্ষিণ কোরিয়ায় মহামারির আকার ধারণ করছে। ঠিক কতজন ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এই সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। ওষুধ সেবনে কাজ না হলে অনেকে মদ পান করেন। যা আরও বিপজ্জনক। ডা. লি আরো বলেন, ‘কয়েকজন রোগী তাকে জানিয়েছেন, কয়েক দশক ধরে তারা রাতে কয়েক ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারেননি। অনেকে ঘুমের জন্য কান্নাকাটিও করে থাকেন।’
পৃথিবীর যে গুটিকয়েক দেশ দরিদ্রতম অবস্থান থেকে অন্যতম প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে তার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া অন্যতম। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রেখেছে দেশটির জনগণ। আর এই কাজের চাপের কারণেই মূলত তারা ঘুম বঞ্চিত। এ শ্রেণীর নাগরিকরা ঘুমানোর জন্য প্রচুর অর্থও খরচ করে থাকেন।
রাজধানী সিউলের কিছু ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে শুধুমাত্র ঘুম সহায়ক পণ্য কিনতে পাওয়া যায়। যেমন : আরামদায়ক চাদর থেকে নরম বালিশ ছাড়াও ঘুমের ভেষজ ওষুধ ও বিভিন্ন টনিক থরে থরে সাজানো থাকে এসব স্টোরে।
উং ঝি নামের এক ডাক্তার ঘুমের সহায়তা করতে জনতার জন্য একটি মেডিটেশন অ্যাপ চালু করেছেন সেখানে। কোক্কিরি নামের এই অ্যাপটির মূল লক্ষ্য কোরিয়ান তরুণদের মানসিক চাপ কমিয়ে ঘুম নিশ্চিত করা।