রাহমান মনি, (টোকিও) জাপান থেকে :: বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি আর ঐতিহ্য জাপান সহ সারা বিশ্বে নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে ধরে রাখার প্রত্যয়ে জাপানের রাজধানী টোকিওতে উদযাপিত হল বাংলা নববর্ষ ১৪২০। টোকিও জাপানের অন্যান্য শহরগুলির মধ্যে ওসাকা, নাগাসাকি, কিয়োতো, সাপ্পোরোতে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ১৪ এপ্রিল রোববার বর্ণাঢ্য বৈশাখী আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে।
১৪ এপ্রিল বাংলাদেশে সরকারী ছুটি এবং জাপানের সাপ্তাহিক ছুটি এক হয়ে যাওয়ায় প্রতিটি আয়োজনে প্রবাসীদের ঢল নামে। টোকিওর প্রাণকেন্দ্র ইকেবুকুরো নিশিগুচি কোয়েন, যেখানে বাঙ্গালীর গর্ব শহীদ মিনার মাথা উচু করে দাড়িয়ে সেই প্রাঙ্গনে প্রতি বৎসরের মতো এবারও জাপান প্রবাসীদের প্রাণের মেলা, মিলন মেলা খ্যাত টোকিও বৈশাখী মেলা উদযাপন করেছে জাপাান প্রবাসী বাংলাদেশী, বাংলা ভাষী এবং তাদের সুহৃদ স্থানীয় দেশসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরা। এবারের আয়োজন ছিল ১৪তম।
এই মেলাকে ঘিরে প্রবাসীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা কাজ করে। ড. শেখ আলীমুজ্জামান- এর নেতৃত্বে একদল উদ্যোমী যুবক দীর্ঘ ৩ মাস ব্যাপী সফল আয়োজনের স্বার্থে নিরলস কাজ করেন। দায়িত্ব বন্টন করে বিভিন্ন কমিটি, উপকমিটিতে ভাগ হয়ে একাধিক সভা করে কাজের সমন্নয়তা করেন। আর তারই ফলশ্রুতিতে বৈশাখী মেলায় মানুষের ঢল নামে। জনসমুদ্রে পরিনত হয়, সার্বজনীন এই বৈশাখী মেলা। সকাল ১০ টা থেকে সন্ধা ৬.৩০ পর্যন্ত মেলার নির্দিষ্ট সময় বেধে দেওয়া হলেও মেলা প্রাঙ্গন পূর্বদিন থেকে প্রবাসীদের পদচারনায় মুখরিত হতে থাকে। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রবাসীদের আড্ডা।
সকাল ১০টায় উদ্বোধন হয়ে একটানা মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলতে থাকে। বড়দের উন্মুক্ত অনুষ্ঠান, শিশু-কিশোরদের উন্মুক্ত চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, ছোটদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্থানীয় জাপানীদের অংশ গ্রহনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিশেষ অতিথি সম্বর্ধনা, ভি.আই.পি অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্য, স্থানীয় প্রবাসী সাংস্কৃতিক দলগুলির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সবশেষে বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীদের সঙ্গীতানুষ্ঠান। এবার বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীরা ছিলেন, কোজ আপ ওয়ান খ্যাত নীলিমা শশি, নুরুজ্জামান বাপ্পি, আলি ইমাম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, পাপ্পু আখন্দ প্রমুখ। তারা স্টেজ মাতিয়ে তুলেন।
ভিআইপি অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, স্থানীয় মেয়র য়ুকিও তাকানো, স্থানীয় সিটি বানিজ্য ও সংস্কৃতি বিভাগীয় প্রধান মাসাকি সাইকি, বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসের দায়িত্বে মিনিষ্টার হিরোয়ুকি মিনামি, ছেতোউচি সাংস্কৃতিক উৎসবে বাংলাদেশের দায়িত্বরত তানিগুচি এইজি প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাপানে নিয়োজিত প্রাক্তন রাষ্ট্রদুত আশরাফ-উদ-দৌলা। মেলাতে উপস্থিত ছিলেন, মেলার অন্যতম স্পন্সর বসুন্ধরা গ্রুপের কালের কন্ঠ সম্পাদক কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।
এবারের মেলায় স্টলের পরিমান ছিল ৩৬টি। তারমধ্যে ১৯টি ছিল খাদ্যের স্টল, বাংলাদেশী খাদ্য সংস্কৃতি জাপানে পরিচিত করানো টোকিও বৈশাখী মেলার অন্যতম উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি। এই জন্য বৈশাখী মেলার সাথে কারি ফেস্টিভ্যাল যোগ করা হয়।
মেলার অন্যতম মানবিক দিক হচ্ছে, বিনামুল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সেবা। এই সেবা নিয়ে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীরা উপকৃত হচ্ছে। এই জন্য মেলার আয়োজক সংগঠন জাপান বাংলাদেশ সোসাইটির কাছে প্রবাসীরা কৃতজ্ঞ। অনেকটা রথও দেখা, কলাও বেচার মতো। মেলা দেখতে এসে বিনামুল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নেওয়া।