ঈদের লম্বা ছুটি শুরু হলো। গরম ও যানজট উপেক্ষা করে বাড়ি যাচ্ছেন লোকজন। কেউ কেউ বেড়াতে যাচ্ছেন অন্য কোথাও। ছুটি শেষে ফিরে আসতে হবে। এই দীর্ঘ ভ্রমণ অনেক সময় ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। পথে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই এ সময় আগে থেকেই একটু সতর্ক থাকা উচিত। যাত্রার আগেই গুছিয়ে নিন।
প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র : দরকারের চেয়ে একটু বেশি ওষুধপত্র সঙ্গে রাখা ভালো। কেননা, ছুটির মধ্যে গ্রাম বা মফস্বলে অনেক সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ না-ও পেতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ওষুধ সেবনে অনিয়ম হলে বড় বিপদ ঘটতে পারে। তাই ১০-১৫ দিনের ওষুধ কিনে নিন। সঙ্গে আরও নিন ওরস্যালাইনের বেশ কিছু প্যাকেট, দু-এক পাতা প্যারাসিটামল ও অ্যালার্জির ওষুধ। চাইলে কাটাছেঁড়ার জন্য প্রয়োজনীয় গজ ব্যান্ডেজ বা স্ট্রিপ ও পোড়ার মলমও নিতে পারেন। যাঁরা এই ছুটিতে পাহাড়-সমুদ্রে বা দূরে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য এসব জিনিস খুবই জরুরি।
কার জন্য কী : হাঁপানি রোগীরা ইনহেলার অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন, বিশেষ করে যদি পাহাড়ে বা উঁচু-নিচু পথে চলতে হয় বা অনেক পথ হাঁটতে হয়। ডায়াবেটিক রোগীরা তীব্র গরমে ইনসুলিনের বোতল একটি ঠান্ডা ব্যাগে বা পানিপূর্ণ থলেতে নিতে পারেন। ইনসুলিন রোদে বা তাপে রাখা যাবে না। প্রয়োজনীয় সুচ, সিরিঞ্জ, গ্লুকোমিটার ও স্ট্রিপ সঙ্গে নিন। হৃদ্রোগীরা সঙ্গে নিন জিবের নিচে দেওয়ার স্প্রে। আরেকটি কথা, আপনার ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশনের একটি ফটোকপি সব সময় সঙ্গে রাখবেন, যাতে অসুস্থ হলে স্থানীয় চিকিৎসক আপনার স্বাস্থ্য ও রোগ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পেতে পারেন।
পথের অসুস্থতা : ছোট শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ভ্রমণের সময় যথেষ্ট সতর্কতা জরুরি। পথ খুব এবড়োখেবড়ো হলে প্রয়োজনে চালককে বলে গাড়ি থামাতে হবে। নেমে কিছুদূর হেঁটে আবার উঠতে পারেন। অনেকের বাসে উঠলেই মাথা ঘোরে, বমি হয়। একে বলে মোশন সিকনেস। এটা কমানোর কিছু উপায় আছে। গাড়িতে সামনের সিটে বসবেন। কোনো একটা বস্তুতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবেন।
ঈদে বেড়ানোর সময় : একেবারে খালি পেটে ভ্রমণ করবেন না। আবার খুব ভরা পেটেও নয়। তেল-মসলাযুক্ত নয়, হালকা বিস্কুট বা ক্র্যাকার্স খেয়ে নিন। আদা চিবুতে পারেন বা এক ঘণ্টা আগে খেয়ে নিতে পারেন বমির ওষুধ। অনেকে ভ্রমণের সময় পানি পান করতে চান না। কিন্তু এই গরমে একটু পরপর পানি পান করা উচিত। বিশুদ্ধ পানি বোতলে করে সঙ্গে নিন। পথে খাওয়ার জন্য কিছু খাবারও সঙ্গে নেওয়া ভালো, এমন খাবার যা সহজে নষ্ট হয় না। যেমন বিস্কুট, মুড়ি, চিড়া, পাউরুটি ইত্যাদি। রাস্তাঘাটে কিছু না খাওয়াই ভালো। শিশুদের প্রয়োজনীয় খাবার, পানি, ডায়াপার ও বাড়তি জামাকাপড় সঙ্গে নিন। শিশুদের কখনো গাড়ির সামনের সিটে বসাবেন না। সামনের যাত্রী সিটবেল্ট পরে নেবেন। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় দু-একটা জিনিস হাতের ব্যাগেই নেবেন। ডায়াবেটিক রোগীরা নেবেন চকলেট বা ক্যান্ডি।
পোশাক-পরিচ্ছদ : ভ্রমণে হালকা সুতির জামাকাপড় পরুন। খুব ঘেমে গেলে জামা পাল্টে নেওয়া ভালো। উঁচু হিলের জুতো না পরে কেডস বা আরামদায়ক জুতো পরুন। সাবধানে চলাফেরা করুন। যত তাড়াই থাকুক, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস-ট্রেনের ছাদে উঠবেন না। জানালা গলে ঢুকবেন না। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য তো আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে।